ব্যাডমিন্টনের অনুশীলনেই বেঁচে রয়েছে সমিতির বাড়ি
খণ্ড ভারতের একটা মানচিত্র আঁকা দেওয়ালে। অন্য দেওয়ালে তেরঙা রেক্সিনে ঝুলছে বঙ্কিমচন্দ্রের ‘আনন্দমঠ’-এর উদ্ধৃতি।
প্রজাতন্ত্র দিবসের সকালে যখন প্রভাতফেরি ছড়িয়ে পড়বে বিভিন্ন পাড়ায়, উত্তর কলকাতায় এই বাড়িতে তখন শুধু ব্যাডমিন্টনের শাটল ককের শব্দ।
একশো বছর পেরোন বাড়িটার সঙ্গে কত লোকের নাম জড়িয়ে। চিত্তরঞ্জন দাস, অরবিন্দ ঘোষ ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট। বাঘা যতীন, রাসবিহারী বসু, ভগিনী নিবেদিতার সঙ্গে কাজ করেছেন স্বামী বিবেকানন্দের ভাই ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, অরবিন্দের ভাই বারীন ঘোষ। এখানকারই দুই সদস্য ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল চাকী মজঃফরপুর গিয়েছিলেন কিংসফোর্ডকে মারতে। শহরে বিপ্লবীদের সবচেয়ে পরিচিত আখড়া ছিল ওটাই। ৪৯, বিধান সরণিতে মূল অফিস। এই ১৩ এ, ঈশ্বর ঠাকুর লেনে বিপ্লবীদের তালিম দেওয়ার আখড়া।
এই ঘরই ছিল বিপ্লবীদের আখড়া। ছবি: উৎপল সরকার
প্রোমোটারদের গ্রাস থেকে সেই ‘অনুশীলন সমিতি’কে বাঁচিয়েছেন ব্যাডমিন্টন পাগলরা। আর কেউ না। না সরকার, না কোনও রাজনৈতিক দল। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এসে সাংসদ, বিধায়করা সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিছু হয়নি। অন্য দেশ হলে হয়তো ওটাই কলকাতার অন্যতম দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠত। পর্যটকদের ভিড় উপচে পড়ত ওই বাড়ি দেখতে। কেউ ভাবেইনি। ব্যাডমিন্টন খেলতে খেলতে ওই কথাই মনে হয় সুব্রত গুপ্ত, সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, হীরক সেনগুপ্তদের। তাঁদের উৎসাহেই ওই বিশাল হলঘরটায় তবু কিছু হচ্ছে। বিপ্লবীদের বদলে তৈরি হচ্ছে খুদে খেলোয়াড়। লাঠিখেলা, ছোরাখেলা, কুস্তির বদলে এসেছে ব্যাডমিন্টন। সিমেন্টের মেঝেতে।
চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ আর বিধান সরণির মাঝখানে গলির গায়ে গলি। ‘অনুশীলন সমিতি’ নামটা অবাঙালি দোকানি থেকে কিশোর-কিশোরী, সবাই জানেন। বিপ্লবীরা যে মাঠে শরীরচর্চা করতেন, সেই মাঠটা অনেক দিন ধরেই কোর্ট। মনোজ গুহ, গজানন হেমাডি, দীপু ঘোষদের মতো অনেক কিংবদন্তি ওই কোর্টে খেলতে এসেছেন যৌবনে। এখন এখানে সাইনা নেহাওয়ালের কোচ, প্রাক্তন অল ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন পুল্লেলা গোপীচন্দের কলকাতার অ্যাকাডেমি। সাইনার পরের প্রজন্মের ভারত-সেরা ঋতুপর্ণা দাস এখানেই প্র্যাক্টিস করতেন প্রথমে। এখনও ব্যাডমিন্টনের টানে সল্টলেকের বাড়ি থেকে চলে আসেন আইএএস অফিসার সুব্রত গুপ্ত। বিস্ময়ই লাগে, ওই অসংখ্য বাড়ির মধ্যে কী ভাবে অত বড় একটা ব্যাডমিন্টন কোর্ট তৈরি হয়ে গেল! হীরক বলছিলেন, “গোপীচন্দ এখানে এসে প্রথমে বাইরে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। বিশ্বাসই করছিলেন না, এত ঘরবাড়ির মধ্যে ব্যাডমিন্টন কোর্ট থাকতে পারে।”
বিপ্লবীরা কালীপুজো করতেন, সেটাও এখন হয় ব্যাডমিন্টন কোর্টের উপরে। ১১০ বছর আগে দোলপূর্ণিমার দিন সমিতির জন্ম বলে সে দিনও হয় অনুষ্ঠান। সঙ্গে প্রজাতন্ত্র দিবস, স্বাধীনতা দিবসে বক্তৃতা। ঢোকার রাস্তাটা এত সরু, দু’জনে পাশাপাশি দাঁড়ানো কঠিন। আগে চার দিকের অনেকটাই ছিল মাঠ। সেখানেই তালিম নিতেন বিপ্লবীরা। পুলিশের চোখ এড়িয়ে বসত সভা। এখন ও সব কিছু বোঝাই যাবে না। বিপ্লবীরা যে ঘরে বোমা-গুলি রাখতেন, সেটা ব্যাডমিন্টনের সাজসরঞ্জামে বোঝাই। আর একটা ঘরে কাগজপত্র।
উল্টো দিকের বাড়ির বাসিন্দা প্রণয় ঘোষ দেখাচ্ছিলেন, কী ভাবে ওই ঘরের পিছন দিয়ে গলির পর গলি পেরিয়ে গঙ্গার ধারে পালাতেন বিপ্লবীরা। চুরির ভয়ে এখন সেখানেও তুলে দিতে হয়েছে নতুন দরজা। বিপ্লবীদের লাঠি রাখার জায়গাটাও রয়েছে কোর্টের পাশে। সমিতির সবচেয়ে বড় ঘরটা হয়ে গিয়েছে মাল্টিজিম। “আমাদের ছোটবেলায় লাঠি, ছোরা খেলার প্রতিযোগিতা হত। এখন বন্ধ হয়ে গিয়েছে,” বলছিলেন প্রণয়বাবু। বিপ্লবীদের সাবেক আখড়ায় এখন ব্যাডমিন্টন ছাড়া আছে যোগাসন।
চিত্তরঞ্জন, অরবিন্দর কোনও ছবি নেই? নেই। মাঝে কয়েক জন সদস্য উদ্যোগী হয়েছিলেন, ওখানে বিপ্লবীদের স্মৃতিজড়িত জিনিসপত্র সংগ্রহ করে ছোট মিউজিয়াম জাতীয় কিছু করার। কিছুই হয়নি শেষ পর্যন্ত।
স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম পীঠস্থান জুড়ে শুধুই শূন্যতা আর অবহেলা।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.