বুধবার দুপুর। ঢাকুরিয়া ব্রিজের নীচে স্টেশন রোডের মোড়ের কাছে থামল ট্যাক্সি। দুই যুবক নেমে পিছনের ডালা খুলে বড়সড় একটি মুখবাঁধা বস্তা বার করে ফেলে দিল রাস্তার ধারের ভ্যাটের পাশে। তার পরে এক জন হেঁটেই চলে গেল। অন্য জন ট্যাক্সি চালিয়ে চলে গেল ঢাকুরিয়া মোড়ের দিকে।
তখন জঞ্জাল সংগ্রহে এসেছে পুরসভার গাড়ি। সাদা রঙের বস্তাটি এসে পড়তেই কাগজকুড়ানিরা ছুটে গিয়েছিলেন বড় কিছু লাভের আশায়। কিন্তু বস্তা খুলতেই বেরোলো এক তরুণীর সালোয়ার কামিজ পরা, ঘাড় পর্যন্ত ছাঁটা চুলের পচাগলা দেহ। তীব্র দুর্গন্ধযুক্ত সেই দেহের হাত-পা ওড়না দিয়ে পিছমোড়া করে বাঁধা। রাত পর্যন্ত মেয়েটির পরিচয় জানা যায়নি। |
ঘটনাটি ঘটেছে লেক থানার ঠিক উল্টো দিকে। ঘটনাস্থল থেকে ঢিল-ছোড়া দূরত্বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট। ভরদুপুরে ব্যস্ত রাস্তার মোড়ে এমন একটি জায়গায় বস্তাবন্দি মৃতদেহ ফেলে হেঁটে চলে যাওয়ার এই ‘সাহস’ তাই কার্যত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে এ শহরের পুলিশি নজরদারির দিকে। প্রশ্ন উঠেছে, নজরদারি কতটা ঢিলেঢালা হলে থানার উল্টো দিকে একটি মৃতদেহ ফেলে যাওয়া কারও চোখে পড়বে না, এমন আত্মবিশ্বাস তৈরি হয় অপরাধীদের। পাশাপাশি, দেহের সঙ্গে নানা মাপের জামাকাপড় মেলায় তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশাও। বস্তাটির মধ্যে তিন-চার বছর বয়সী মেয়েদের পোশাক থেকে কিশোরীদের উপযোগী রঙিন সালোয়ার-কামিজ সমেত অন্যান্য পোশাকও ছিল। ছিল স্কুলের পোশাকের মতো দেখতে ফ্রকও। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের ধারণা, পোশাকগুলি ওই মেয়েটিরই।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার বয়স আনুমানিক ১৫-২০ বছর। চেহারার বিকৃতি দেখে তদন্তকারীদের ধারণা, অন্তত দু’দিন আগে খুন করা হয়েছে ওই তরুণীকে। শ্বাসরোধেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে অনুমান পুলিশের। প্রশ্ন উঠেছে দেহ পচে দুর্গন্ধ বেরোনো সত্ত্বেও এ দিন পর্যন্ত তা কেউ টের পেল না কেন? পুলিশের অনুমান, খুন করে কোথাও লুকিয়ে রাখা হয়েছিল দেহটি। দুর্গন্ধ সহ্য করতে না-পেরেই এ দিন বস্তাবন্দি দেহ কোথাও ফেলে যাওয়ার পরিকল্পনা করে দুষ্কৃতীরা। ঢাকুরিয়া স্টেশন রোড থেকে বেরিয়ে ভ্যাটটি দেখতে পাওয়ায় সেখানে বস্তাটি ফেলে দেওয়া হয়েছে। সন্দেহ এড়াতেই পুরসভার গাড়ি আসার সময়ে বস্তাটি ফেলা হয়েছে বলে মনে করছে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ থেকে পুলিশ জানতে পেরেছে, দুপুর আড়াইটে নাগাদ ঢাকুরিয়া স্টেশন রোড ধরে আসা একটি ট্যাক্সি থামে ওই ভ্যাটের কাছে। চালকের আসন থেকে যে নামে, তার পরনে ছিল ট্যাক্সিচালকের পোশাক। নামে আর এক যুবকও। দু’জনে মিলে বস্তাটি ভ্যাটের পাশে ফেলে দেয়। ‘ট্যাক্সিচালক’ স্টিয়ারিংয়ে গিয়ে বসে। গড়িয়াহাট রোড (দক্ষিণ) ধরে সোজা ঢাকুরিয়া মোড়ের দিকে রওনা হয়। অন্য জন হেঁটেই ঢাকুরিয়া স্টেশন রোড ধরে ফিরে যায়। এর পরেই কাগজকুড়ানিরা বস্তা খুলে মৃতদেহ দেখে চেঁচিয়ে ওঠেন।
রিনা রায় নামে ফুটপাথের এক দোকানি বলেন, “চিৎকার শুনে ছুটে যাই ভ্যাটের দিকে। কাছে যেতেই নাকে এল তীব্র পচা গন্ধ।” এর পরেই খবর যায় উল্টো দিকের থানায়। |