‘অবৈধ’ নির্মাণকে ‘বৈধতা’ দিতে কোমর বেঁধে নামছে কলকাতা পুরসভা। চার বছর আগে এক বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডের পর থেকেই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা নন্দরাম মার্কেটের প্রতিটি তলে ব্যবসায়ীদের কারবার আগের মতোই ফের চালু করাতে এ বার উঠেপড়ে লেগেছেন খোদ মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ই।
বুধবার পুরসভায় মেয়র বলেন, “আমাদের কাছে মানবিকতার দিকটাই সবার আগে। আমরা চাই, নন্দরামের সব ব্যবসায়ী যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বিঘ্নে কারবার শুরু করুন। বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে বিচার করে তাঁদের ছাড়পত্র দেওয়ার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করব।”
অথচ, নন্দরাম মার্কেটে ছ’তলার উপরের বাকি অংশ বহু দিন আগেই ‘অবৈধ’ বলে নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোটর্র্। সেই নির্দেশ বহাল রাখে সুপ্রিম কোর্টও। আদালতের এই নির্দেশের প্রসঙ্গ টেনে পূর্বতন মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যও কলকাতা পুরসভার এ দিনের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। বিকাশবাবু বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট বা হাইকোর্টের রায়ের পরে নন্দরামের বেআইনি অংশকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করা তো কার্যত আদালতের অবমাননা। মানবিকতার কথা কেউ বলতেই পারেন, কিন্তু আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে এটুকু কঠোর না হতে পারলে সমস্যা হবে।” সেই সঙ্গে প্রাক্তন মেয়রের দাবি, “আমি বহু বার নন্দরাম মার্কেটের বেআইনি অংশ ভাঙার চেষ্টা করেছি। কিন্তু রাজনৈতিক বাধায় কিছু করতে পারিনি। আজকের শাসক দলেরই তাতে মুখ্য ভূমিকা ছিল।”
এ দিনই পুর-কর্তৃপক্ষের কাছে নন্দরাম মার্কেট নিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিশেষজ্ঞ দলের সমীক্ষা-রিপোর্ট জমা দিয়েছেন নন্দরামের ব্যবসায়ীরা। এর পরেই মেয়র ওই বহুতলটিতে আগের মতো ব্যবসা চালু করতে পুর-উদ্যোগের কথা ঘোষণা করেন। পুরসভা সূত্রের খবর, নন্দরামের বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশ নিয়েও পুরসভার তরফে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলের সঙ্গে কথা বলা হবে। সব রকম চেষ্টা করা হবে, যাতে ব্যবসায়ীদের আর কোনও সমস্যায় পড়তে না হয়। |
মেয়র বলেন, “আমি যা শুনেছি, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে, নন্দরাম মার্কেটের কাঠামোয় কোনও রকম সমস্যা নেই। কিন্তু কাশীরামের দোতলার উপরের অংশ ভেঙে ফেলতে হবে।” নন্দরামের ব্যবসায়ী সমিতির তরফে সমরকান্তি চৌধুরীর বক্তব্য, “অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। এ বার যত দ্রুত সম্ভব আমরা নন্দরামের উপরের তলগুলিতেও ব্যবসা শুরু করতে চাই।” কাশীরাম মার্কেট প্রসঙ্গে সমরবাবু জানিয়েছেন, বহুতলটি নতুন করে গড়ার জন্য তাঁরা পুরসভাকে শীঘ্রই নকশা জমা দেবেন।
নন্দরামে অগ্নিকাণ্ডের পরে আপাতত শুধু বহুতলটির নীচের ছ’টি তলায় ব্যবসায়ীদের শর্তসাপেক্ষে ব্যবসা শুরুর অনুমতি দিয়েছে প্রশাসন। দমকলের কর্তাদের কিন্তু বক্তব্য: ওই বহুতলের সুরক্ষার জন্য জলের সংস্থান বা নীচে নামার বিকল্প সিঁড়ি তৈরির মতো যা যা ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছিল, তার বেশির ভাগই ওঁরা মানেননি। তাই এই অবস্থায় বাড়িটিতে পুরোদমে ব্যবসা শুরু হওয়া বিপজ্জনক। |