|
|
|
|
টাকা চুরির অপবাদ |
ক্লাসেই পড়ুয়াদের জামা খুলিয়ে তল্লাশি শিক্ষিকার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • রাজনগর |
একশো টাকা পাচ্ছিলেন না স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা (টিচার-ইন-চার্জ)। সে জন্য ক্লাসের মধ্যেই পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের জামাকাপড় খুলে তল্লাশি করার অভিযোগ উঠল ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। শুধু তা-ই নয়, তল্লাশির পরে কয়েকজন ছাত্রছাত্রীকে একটি ক্লাসে তালাবন্ধ করে স্কুল থেকে ওই শিক্ষিকা চলেও যান বলে অভিযোগ। অভিভাবকেরা খবর পেয়ে তালা ভেঙে উদ্ধার করেন আতঙ্কিত পড়ুয়াদের।
বীরভূমের রাজনগর থানার সুন্দরখেলে জুনিয়র মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বুধবারের এই ঘটনা জেনে সেখানে যান রাজনগরের বিডিও প্রভাংশু হালদার। তাঁর কাছে টিচার-ইন-চার্জ মৌমিতা সাহার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন গ্রামবাসীরা। মহকুমাশাসক (সিউড়ি সদর) সুজয় আচার্য বলেছেন, “বিডিও-র কাছে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট চেয়েছি। গ্রামবাসীদের জেলা স্কুল পরিদর্শকের কাছে অভিযোগ করতেও বলা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” স্থানীয় গাংমুড়ি-জয়পুর পঞ্চায়েতের অন্তর্গত এই স্কুলটি বছর তিনেক আগেই চালু হয়েছে। দুই শিক্ষিকা ও এক জন শিক্ষক। পঞ্চম শ্রেণিতে সাকুল্যে ১০-১২ জন ছাত্রছাত্রী। এ দিন টিফিনের পর থেকে ১০০ টাকা পাচ্ছিলেন না মৌমিতাদেবী। অভিযোগ, প্রমাণ ছাড়াই তিনি পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়াদের ওই চুরির জন্য দায়ী করেন।
তাদের মধ্যে সুরেশ মির্ধা, বিষ্ণুপ্রিয়া ঘোষ, বাবলু মণ্ডলরা এ দিন বলে, “আমরা বারবার দিদিমণিকে বলি, ওই টাকা নিইনি। উনি কথাই শুনলেন না। ক্লাসের মধ্যেই সবার জামাকাপড় খুলে তল্লাশি করলেন। ব্যাগও পরীক্ষা করলেন। পরে কয়েকজনকে ছেড়ে দিয়ে আমাদের আট জনকে একটা ঘরে আটকে বাইরে থেকে তালা দিয়ে দেন। ঘরের সমস্ত জানলা বন্ধ ছিল। অন্ধকারে আমাদের খুব ভয় করছিল। দমবন্ধ হয়ে আসছিল।” স্কুল সূত্রের খবর, এর আগে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়াদের ব্যাগেও তল্লাশি চালান মৌমিতাদেবী।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, বিকেল ৩টে নাগাদ ওই শিক্ষিকা সুন্দরখেলে গ্রামের এক বাসিন্দার বাড়িতে স্কুলের ওই বন্ধ ঘরের চাবি দিয়ে চলে যান। বলে যান, ‘পড়ুয়ারা চুরির কথা স্বীকার করলে তালা খুলে দিও’। বাকি দু’জন শিক্ষক-শিক্ষিকাও পড়ুয়াদের উদ্ধার করার চেষ্টা না করে বাড়ির পথে রওনা দেন। অভিভাবকেরা স্কুলে গিয়ে ওই ঘরের তালা ভেঙে বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ বাচ্চাদের উদ্ধার করেন। অভিভাবক কানাই ঘোষ, পূর্ণিমা মির্ধা, অমিত্র মণ্ডল, মালতি রোয়ানিদের কথায়, “৩টেয় ছুটি হয়। তার পরেও ছেলেমেয়েরা না ফেরায় দুশ্চিন্তায় পড়ি। পরে সব জেনে স্কুলে যাই। বাচ্চারা ঘরের ভিতরে কান্নাকাটি করছিল। কোনও শিক্ষক-শিক্ষিকাই ছিলেন না।” কিছু পড়ুয়া অসুস্থ হয়ে পড়ে বলেও অভিভাবকদের দাবি। স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ, “অন্য দুই শিক্ষক-শিক্ষিকা সব দেখেও প্রতিবাদ করলেন না! যাঁদের ভরসায় বাচ্চাদের পাঠাই, তাঁরাই যে এত অমানবিক হতে পারেন, ভাবতে পারছি না।”
মোবাইলে বহু বার যোগাযোগের চেষ্টা হলেও এ দিন ফোন ধরেননি মৌমিতাদেবী। অন্য দুই শিক্ষকের সঙ্গেও যোগাযোগ করা যায়নি। জেলার অতিরিক্ত স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) দেবাশিস রায়চৌধুরী বলেন, “অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা। ওই শিক্ষিকাকে বলেছি, এ কাজ করা তাঁর ঠিক হয়নি।” |
|
|
|
|
|