দেশে ফিরতে চান বাবা
কাকার হাতে দুই শিশুকে তুলে দিতে রাজি নরওয়ে
রওয়ে প্রবাসী বাঙালি পরিবারের জন্য অবশেষে আশার আলো। অনুরূপ ও সাগরিকা ভট্টাচার্যের দুই সন্তানকে শর্তসাপেক্ষে তাদের কাকার হাতে তুলে দিতে রাজি হয়েছে নরওয়ে সরকার। কিন্তু শিশু দু’টি কবে বাবা-মায়ের কাছে ফিরতে পারবে, তা এখনও নিশ্চিত নয়। ছেলে-মেয়েদের হাতে পেলেই সপরিবার নরওয়ে ছেড়ে কলকাতার ফিরতে চান অনুরূপবাবু। তার জন্য বহুজাতিক সংস্থার চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্তও নিয়ে নিয়েছেন তিনি। নরওয়ে থেকে অনুরূপবাবু আজ আনন্দবাজারকে বলেন, “আমাদের আইনজীবী ও ভারতীয় দূতাবাসের কূটনীতিকরা সব খুঁটিনাটি চূড়ান্ত করছেন। ভিসা পেয়ে গেলেই আমার ভাই চলে আসবেন। তার পরে ওঁর সঙ্গে দু’এক দিন বাচ্চাদের সম্পর্ক সড়গড় হতে দেওয়ার শর্ত রেখেছে এখানকার শিশু সুরক্ষা সংস্থা।”
তিন বছরের অভিজ্ঞান ও এক বছরের ঐশ্বর্যাকে ফিরে পেতে গত বছর মে মাস থেকেই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের বাবা-মা অনুরূপ ও সাগরিকা। ১১ মে তাদের দুই সন্তানকেই নিজেদের হেফাজতে তুলে নিয়ে চলে যায় সে দেশের শিশু সুরক্ষা সংস্থা। অভিযোগ, নরওয়ের সামাজিক নিয়মকানুন অনুযায়ী বাবা-মা তাঁদের সন্তানদের প্রতিপালন করছেন না। শিশুদের হাত দিয়ে খাওয়ানো হচ্ছে, যা অস্বাস্থ্যকর। এ বিষয়ে আগেই রাজ্য ও কেন্দ্রের শরণাপন্ন হয় ওই পরিবার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সিপিএম সাংসদ বৃন্দা কারাটও উদ্যোগী হন। বিদেশ মন্ত্রকের তরফে বিষয়টি নিয়ে দু’বার চিঠি দিয়ে নরওয়ে সরকারের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। কিন্তু কোনও জবাব মেলেনি। শেষে বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে উঠে আসায় খোদ বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণ উদ্যোগী হন। ডেকে পাঠানো হয় নরওয়ের রাষ্ট্রদূতকে। অসলোর ভারতীয় কূটনীতিকরাও দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন।
চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত বাঙালি পরিবারটির হাতে অভিজ্ঞান-ঐশ্বর্যাকে তুলে দিতে রাজি হয়েছে নরওয়ে সরকার। কিন্তু সরকারি ভাবে যে হেতু বাবা-মায়ের দিকে ঠিক মতো সন্তান প্রতিপালনের অভিযোগ তোলা হয়েছিল, তাই এখনই বাবা-মায়ের হাতে দুই শিশুকে তুলে দেওয়া হচ্ছে না। বদলে দেওয়া হবে কাকার হাতে। অনুরূপ বলেন, “এখানকার শিশু সুরক্ষা সংস্থা এখন ‘মচকাবে, কিন্তু ভাঙবে না’ নীতি নিয়েছে। আমরা আগেই বলেছিলাম যে আমাদের হাতে সন্তানদের দিতে আপত্তি থাকলে, ওদের দাদু-দিদা বা কাকার হাতে তুলে দাও। তখন ওরা রাজি হয়নি। এখন চাপে পড়ে আমার ভাই অরুণাভাসকে বাচ্চাদের প্রতিপালনের দায়িত্ব দিতে রাজি হয়েছে।” নরওয়ে সরকার চাইছে, অনুরূপের ভাই অরুণাভাস স্ট্যাভেনগারে গিয়ে দু’তিন দিন বাচ্চাদের সঙ্গে থাকুন। কাকার সঙ্গে ভাইপো-ভাইঝির সম্পর্ক ‘স্বাভাবিক’ মনে করলে তাঁর হাতে অভিজ্ঞান-ঐশ্বর্যাকে তুলে দেওয়া হবে। সেই প্রস্তাব মেনে নিলে নরওয়ে সরকারের তরফে আরও যে সব শর্ত দেওয়া হচ্ছে, তা খুঁটিয়ে দেখে নিতে চাইছেন অনুরূপ-সাগরিকা, যাতে পরে সমস্যা না হয়। সব চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার পরে ভিসা পেয়ে গেলেই নরওয়ে রওনা হবেন অরুণাভাস।
এখন গোটা পরিবারের চিন্তা হল, তিন বছরের অভিজ্ঞান ও এক বছরের ঐশ্বর্যা কেমন রয়েছে? গত আট মাসে বাবা-মায়ের সঙ্গে তাদের দেখা করতে দেওয়া হয়নি। ভারতীয় দূতাবাসের এক কূটনীতিককে শিশু দু’টিকে দেখতে দেওয়া হয়েছিল। তিনি জানিয়েছেন, দুই ভাই-বোন শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকলেও মানসিক ভাবে আতঙ্কগ্রস্ত। গত কয়েক মাসে অনুরূপ-সাগরিকার পরিবারের উপর দিয়ে বড়সড় একটা ঝড় বয়ে গিয়েছে। আসানসোলের বাড়িতে অনুরূপের মা অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী। বিরাটির বাড়িতে উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন সাগরিকার বাবা-মা মনোতোষ ও শিখা চক্রবর্তী। মনোতোষবাবু বিরাটি থেকে বলেন, “আড়াই বছরের ছেলে আর চার মাসের দুধের শিশুকে হারিয়ে মেয়ের মনের অবস্থা যা হয়েছিল, তা বলার মতো নয়। এখন সব যাতে তাড়াতাড়ি মিটে যায়, তার জন্যই প্রার্থনা করছি।” কিন্তু গোটা বিষয়টি মিটে গেলেও আর নরওয়েতে থাকতে চান না অনুরূপ। একটি বহুজাতিক সংস্থায় জিওসায়েন্টিস্ট হিসেবে কাজ করতেন তিনি। স্ট্যাভেনগারে বাড়িও কিনেছিলেন। আজ নরওয়ে থেকে তিনি বলেন, “আট মাস আমার সন্তানরা বাবা-মাকে ছেড়ে ছিল। এখন ওদের সঙ্গে থাকাটাই সব থেকে জরুরি। চাকরি তাই ছাড়তেই হবে। এখানকার বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে ভারতে ফিরে আসছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.