ঋণমুক্তি এবং আউটসোর্সিং বন্ধ করে দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার প্রতিশ্রুতিকেই তুরুপের তাস বানিয়ে দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াইয়ে নামলেন বারাক ওবামা। মার্কিন কংগ্রেসের বার্ষিক বক্তৃতার মাধ্যমেই রীতিমতো ‘প্রচার’ শুরু করে দিলেন তিনি।
চার বছর আগেও নির্বাচনী প্রচারে বারাক ওবামার অন্যতম হাতিয়ার ছিল আউটসোর্সিং বন্ধ করে দেশবাসীর অন্নসংস্থান করার উদ্যোগ। পাশাপাশি ছিল দেশের মুখ থুবড়ে পড়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তোলার প্রতিশ্রুতি। এর মধ্যে পরিস্থিতি যে খুব একটা পাল্টায়নি, বলেই মনে করছেন তাঁর বিরোধীরা। তবু পুনর্নির্বাচিত হওয়ার লড়াইয়ে পুরনো হাতিয়ারই ব্যবহার করার পথে হাঁটছেন ওবামা।
গত কালের বক্তৃতায় তিনি মূলত জোর দেন অর্থনীতির উপর। বিত্তশালীদের উপর বেশি করে কর চাপানো, ওয়াল স্ট্রিটের হাল ফেরানো, স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতি, বিরোধী রিপাবলিকানদের সুবিধার্থে নানা প্রস্তাব আনার পক্ষে যুক্তি পেশ করেন তিনি। মার্কিন শিল্পপতি ওয়ারেন বাফেটের সচিবকে দেখিয়ে তিনি বলেন, “এই মহিলাও তাঁর বসের চেয়ে বেশি কর দেন।’’ |
মার্কিন কংগ্রেসের বার্ষিক বক্তৃতার আগে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা
ও বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টন। বুধবার। ছবি: এএফপি |
যদি বিত্তশালীরা, অর্থাৎ যাঁদের বার্ষিক আয় ১০ লক্ষ ডলারের বেশি, তাঁরা যদি আয়ের ৩০ শতাংশ করে কর দেন তা হলে দেশের অর্থনীতি লাভবান হবে। কারণ তাতে আরও বেশি করে বিনিয়োগ সম্ভব হবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রতিরক্ষা খাতে। বারাকের কথায়, “দেশের মুষ্টিমেয় কিছু লোক ভাল থাকবেন, এবং বাকিরা চরম দুর্দশায় দিন কাটাবেন এটা কখনওই একটি রাষ্ট্রীয় নীতি হতে পারে না।” অধিকাংশ আমেরিকানই তাঁকে সমর্থন করবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন ওবামা। পাশাপাশি যে সংস্থাগুলি আউটসোর্সিং বন্ধ করে দেশের মানুষদের চাকরি দেবে তাদের জন্য আরও সুযোগ সুবিধার দেওয়া এবং যারা তা বন্ধ করবে না, তাদের ক্ষেত্রে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেন তিনি।
নিজের জমানায় বিদেশনীতির সাফল্যের দিকগুলি তুলে ধরতে গিয়ে ওসামা বিন লাদেনের নিধন, লিবিয়ায় মুয়াম্মর গদ্দাফির উৎখাতের কথাও উল্লেখ করেন ওবামা। আফগানিস্তান, ইরাকের উদাহরণ টেনে তাঁর বক্তব্য, হিংসা এবং সন্ত্রাসের আবহ যারা তৈরি করবে তাদের বিরুদ্ধে সব সময়েই রুখে দাঁড়াবে আমেরিকা। ইরান যাতে পরমাণু অস্ত্র হাতে না পায়, তা নিশ্চিত করাও আমেরিকারই দায়িত্ব। তিনি বলেন, “এটা ঠিক গোটা দুনিয়া খুব দ্রুত পালটে যাচ্ছে। সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে গোটা বিশ্বের যে কোনও ঘটনায় আমেরিকা এখনও অপরিহার্য। যত দিন আমি প্রেসিডেন্ট রয়েছি, তত দিন সব এ ভাবেই চলবে।”
চিনের মতো যে সব দেশ বেআইনি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করার বার্তাও দেন ওবামা। বিশ্বের বাজারে ‘মেড ইন আমেরিকা’ সামগ্রী ছড়িয়ে দেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি মন্তব্য করেন, “গত কয়েক বছরে চিনা টায়ারের ব্যবহার বন্ধে করায় এক হাজারেরও বেশি মার্কিন নাগরিক কাজ পেয়েছেন। এমন পদক্ষেপ আরও করতে হবে। আমাদের শ্রমিকদের উৎপাদন ক্ষমতা পৃথিবীর অন্য দেশের শ্রমিকের চেয়ে বেশি। শুধু তাঁদের সুযোগ দিতে হবে। তা হলেই জয় অনিবার্য।” |