ফের গা ঝাড়া দিয়েছে দাগিরা, কয়লা পাচারে ফিরছে রমরমা
বিধানসভা ভোটের আগে থেকে প্রায় বন্ধ ছিল অবৈধ কয়লার কারবার। গত কয়েক মাসে ফের তা রমরমিয়ে শুরু হয়েছে আসানসোল শিল্পাঞ্চলে।
গত সেপ্টেম্বরে আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেট গঠন হওয়ার পরে পুলিশ দাবি করেছিল, এলাকায় অবৈধ কয়লা পাচার বন্ধ রয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েক জন কয়লা মাফিয়াকে গ্রেফতারও করা হয়। কিন্তু গত এক মাসে খনি অঞ্চলের নানা জায়গা থেকে বেশ কিছু কয়লা বোঝাই ট্রাক আটক হয়। জামুড়িয়ার চাঁদা ও কুনস্তরিয়া এরিয়ায় উল্টে যায় দু’টি কয়লার লরি। ফের অবৈধ কয়লা পাচারের বিষয়টি সামনে আসে। দেদার অবৈধ খনন চললেও পুলিশ বা সিআইএসএফ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না, এমন অভিযোগ তুলে কুনস্তরিয়ায় সিআইএসএফ ক্যাম্পে বিক্ষোভও দেখিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। রাজনৈতিক দলগুলিও বেআইনি খনন ও কয়লা পাচার নিয়ে সরব হয়।
পরিবহণ সংস্থার নামে এরকম প্যাডেই চলছে কারবার। নিজস্ব চিত্র।
খনি এলাকায় খোঁজ-খবর নিয়ে জানা যায়, গত কয়েক মাসে এই কারবার সব থেকে বেশি শুরু হয়েছে জামুড়িয়ায়। এ ছাড়া রানিগঞ্জ, সালানপুর ও বারাবনির বিস্তীর্ণ এলাকাতেও অবাধে চলছে কয়লা খনন ও পরিবহণ। সম্প্রতি রানিগঞ্জের নারায়ণকুড়ি ব্যাচে নানা অজুহাত তুলে অবৈধ খননকারীদের নেতৃত্বে কিছু লোকজন কাজে বাধা দিচ্ছে জানিয়ে ইসিএল কর্তৃপক্ষ পুলিশ কমিশনারকে চিঠিও পাঠান।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরনো ‘দুষ্কৃতী’দের নেতৃত্বেই ফের শুরু হয়েছে অবৈধ কয়লার কারবার। জামুড়িয়ার নর্থ সিহারসোল এলাকায় এই কারবার চালাচ্ছে আলাউদ্দিন খান ও শামিম খান। কাটাগড়িয়ায় অবাধে খনন চলছে অজয় রামের নেতৃত্বে। বোগড়ার বাঙালপাড়ায় বস্তায় কয়লা জমা করছে দুষ্কৃতীরা। তার পরে পিক-আপ ভ্যানে করে রাতারাতি তা পাচার হচ্ছে। বেনালি এবং বোগড়ার এই কয়লা কিনে পাচার করছে বাবু মণ্ডল। শিবপুরে আবার পাচার হচ্ছে অন্য পদ্ধতিতে। উপরের দিকের কয়লায় পাথর মিশিয়ে ‘ডাস্ট’ তৈরি হচ্ছে। লরিতে কয়লার উপরে এই ‘ডাস্ট’ চাপিয়ে তা পাচার হচ্ছে।
সাতগ্রাম ও বেনালির সীমান্তবর্তী এলাকা কয়লা কাটা হচ্ছে বাবন ও তপন ধীবরের নেতৃত্বে। এই কয়লার বেশির ভাগ কেনে আসানসোল উত্তর থানা এলাকার দিলীপ। তা পাচার হচ্ছে ধানবাদে। স্থানীয় সূত্রে খবর, এ বি পিট এলাকায় সিআইএফএফ ক্যাম্পের অদূরে খাদান চালাচ্ছে সঞ্জয়, মুনিয়া, ফান্টু ও হালিম। পরিহারপুর, বৈজয়ন্তীপুর এলাকায় নেতৃত্বে রয়েছে মঙ্গল শেখ। বেনালিতে কারবার চালাচ্ছে বাবলু শুক্ল। এ ছাড়া উত্তর সিহারশোল, চুরুলিয়া দেশেরমহান এবং সংলগ্ন গ্রামগুলি থেকে কয়লা পাচার হয়ে যাচ্ছে পাণ্ডবেশ্বরের অজয় সেতু পার হয়ে বীরভূম। রানিগঞ্জের রতিবাটি বুড়ির খাদানে কয়লা কাটছে বলাই দাস, শিবপ্রসাদ বাউরিরা। সেখান থেকে কয়লা কিনে পাচার করার দায়িত্বে রয়েছে মুন্না। শীতলদাসে কারবারের নেতৃত্বে পঙ্কজ ও সুশীল। পলাশডাঙা, হুড়মাডাঙার কয়লা পাচার হচ্ছে মঙ্গলপুর রাজা-কাঁটায়। বারাবনির মদনপুরে খননের নেতৃত্বে জগু এবং আকু। নুনিয়াবুড়ি এলাকায় ‘দায়িত্বে’ রয়েছে অক্ষয়। পাঁচগেছিয়ায় দেবা, কেলেজোড়া ও রসুলপুরে আলা। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এই সব দুষ্কৃতীদের নামে অবৈধ কয়লা কারবারের বহু অভিযোগ রয়েছে।
পার্শ্ববর্তী দুই জেলা বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়ায় দেদার পাচার হচ্ছে কয়লা। পরিবহণ হচ্ছে ‘প্যাডে’র মাধ্যমে। ‘ডুবরা কম্পিউটার ওয়েব্রিজ’, ‘ডায়মন্ড ওয়েব্রিজ’, ‘বোম ভোলা রোড’ ইত্যাদি নামে চলছে এই সব প্যাডে। ইসিএলের ভুয়ো চালানে কয়লা পৌঁছে যাচ্ছে বরাকর থেকে দুর্গাপুর পর্যন্ত। তার পরে ‘মহাবীর রোড লাইন’। এ ছাড়াও আছে ‘ভারত’ নামাঙ্কিত প্যাড। দিন কয়েক আগে রানিগঞ্জ থেকে ইসিএলের ভুয়ো চালান উদ্ধার করেছে পুলিশ। কয়েক জনকে গ্রেফতারও করা হয়।
পুলিশের অবশ্য দাবি, অবৈধ কয়লা খনন শুরু হয়েছে, তবে বিক্ষিপ্ত ভাবে। অবৈধ কয়লা ঢুকছে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া থেকে। পাচার হচ্ছে শক্তিগড় হয়ে। পুলিশ এমন জানালেও রানিগঞ্জে দামোদরের আশপাশে গেলেই নজরে পড়ে, বাঁকুড়ায় কয়লা পাচার হচ্ছে এ পার থেকেই। পুলিশ জানিয়েছে, ‘মহাবীর’ নামের প্যাড কারবারি প্রেমচন্দ্র আগরওয়ালকে ধরা হয়েছে হুগলির গুড়াপে। তবে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই প্যাড চলে অন্ডালের পর থেকেই।
কয়েক দিন আগে আসানসোলের এডিসিপি ভাস্কর মুখোপাধ্যায় দাবি করেন, রাতের দিকে দুর্গম এলাকায় অবৈধ খনন চলছে। ওই সব এলাকায় অভিযান চালানো মুশকিল। সিপিএমের অজয় জোনাল কমিটির সম্পাদক মনোজ দত্ত অবশ্য বলেন, “প্রকাশ্য দিবালোকে সাইকেল, গরুর গাড়িতে করে কয়লা পাচার হচ্ছে। চোরাই কয়লা পরিবহণ বন্ধ করলেই এই কারবারের রমরমা কমবে।” বিজেপি-র আসানসোল জেলা সম্পাদক পবন সিংহেরও দাবি, “কয়লা কারবার বন্ধ করতে পুলিশের কষ্ট করে ভূগর্ভে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। ডিপোয় জমা করার পরে লরি, ডাম্পারে চাপিয়ে তা পাচার হচ্ছে। পুলিশ সেটা বন্ধ করুক।” তাঁর অভিযোগ, “স্থানীয় পুলিশকর্মীরাই রাতের দিকে কয়লা পাচার করার সময় বেঁধে দেয়। পুলিশের উচ্চ আধিকারিকদের ঠিক তথ্যও দেয় না তারা। ফলে কমিশনারেটের তরফে অভিযান হলেও বিশেষ ফল হয় না।” এডিসিপি অবশ্য পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ মানতে চাননি। তিনি বলেন, “পুলিশ কোনও খবর পেলেই তল্লাশি চালায়।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.