উত্তরবঙ্গ জুড়ে পালিত হল নেতাজি জন্মজয়ন্তী। সোমবার সকাল থেকেই উত্তরবঙ্গের ছয় জেলা দার্জিলিং কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদা সর্বত্রই সরকারি এবং বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। নেতাজি মূর্তিতে মাল্যদান ছাড়াও ট্যাবলো সহ শোভাযাত্রা বের হয়। শিলিগুড়ির সুভাষপল্লিতে নেতাজি মূর্তিতে মাল্যদান করেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব, শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য। পরে সেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। যুব কংগ্রেসের তরফে হিলকার্ট রোডে ট্যাবলো সহ শোভাযাত্রা বের হয়। শিলিগুড়ি মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের তরফেও ‘দেশপ্রেম উদযাপন দিবসে’র ব্যনারে শোভাযাত্রা বের করা হয়। এনজেপি ও বিধান মার্কেট সহ শিলিগুড়ির নানা এলাকায় নানা অনুষ্ঠান হয়। |
জলপাইগুড়িতে সরকারি অনুষ্ঠানে জেলা শাসক স্মারকী মহাপাত্র নেতাজির প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করেন। সেখানে দেশাত্মবোধক গান ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। জলপাইগুড়ি করলা সেতু লাগোয়া এলাকায় নেতাজির মূর্তিতে মাল্যদান করেন চেয়ারম্যান মোহন বসু, ভাইস চেয়ারম্যান পিনাকী সেনগুপ্ত, প্রাক্তন বিধায়ক গোবিন্দ রায়। শহরের সাত নম্বর অনুষ্ঠানে অন্য একটি অনুষ্ঠানে নেতাজিকে শ্রদ্ধা অর্পণ করেন জলপাইগুড়ির বিধায়ক সুখবিলাস বর্মা। নেতাজির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এদিন হলদিবাড়ি উৎসবের সূচনা হয়েছে। ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত উৎসব চলবে। এ দিন আলিপুরদুয়ারে পূর্ত দফতরের সরকারি অনুষ্ঠান ঘিরে তৈরি হয় বির্তক। এদিন পূর্ত দফতরের বাংলোর সামনে সরকারি ভাবে নেতাজির মূর্তিতে মাল্যদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আগাম গিয়ে ওই মঞ্চে আলিপুরদুয়ারের প্রাক্তন বিধায়ক নির্মল দাসের সংস্থা নেতাজি সুভাষ জন্ম শতবর্ষ কমিটির সদস্যরা পতাকা উত্তোলন করেন। নির্মলবাবু বলেন, “আমরা বহু বছর ধরেই ওখানে অনুষ্ঠান করছি। এবারেই অনুষ্ঠান করেছি।” পূর্ত দফতরের তরফে ওই ঘটনার প্রতিবাদ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ওই সংগঠনের বিরুদ্ধে সরব হন আলিপুরদুয়ার অভিভাবক মঞ্চের সম্পাদক ল্যারি বসু। তিনি বলেন, “সরকারি অনুষ্ঠানের মধ্যে ঢুকে জোর করে পতাকা উত্তোলন মানা যায় না।” আলিপুরদুয়ার সূর্যনগর ক্লাবের উদ্যোগে ম্যারাথন দৌড় অনুষ্ঠিত হয়। আলিপুরদুয়ার কলেজে জন্মজয়ন্তী পালন না হওয়ায় শিক্ষক সংগঠনের তরফে ক্ষোভ জানানো হয়। আলিপুরদুয়ার কলেজের অধ্যক্ষ সুব্রত পঞ্চানন বলেন, “গত তিরিশ বছর ধরে আলিপুরদুয়ার মহাবিদ্যালয়ে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্ম জয়ন্তী পালিত হয়নি। তা ছাড়া সরকারি ভাবে নেতাজির জন্মজয়ন্তী পালনের জন্য আমার কাছে সরকারি কোনও নির্দেশ আসেনি।” |
নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির আলিপুরদুয়ার পশ্চিম জোনের সম্পাদক বিদুৎ সরকার বিষয়টি ক্ষোভ জানান। আলিপুরদুয়ারের মহকুমাশাসক বলেন, “বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।” রায়গঞ্জে উত্তর দিনাজপুর জেলা কংগ্রেস র্কাযালয়ে নেতাজি জন্মজয়ন্তী পালন করা হয়। হেমতাবাদে কংগ্রেসের উদ্যোগে একটি সেমিনার হয়। সেখানে বক্তব্য রাখেন কালিয়াগঞ্জের কংগ্রেস বিধায়ক তথা রাজ্যের উন্নয়ন ও পরিকল্পনা দফতরের প্রতিমন্ত্রী প্রমথনাথ রায়, জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত, জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোক্তার আলি সর্দার, মানস কুমার ঘোষ। হেমতাবাদ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ৭০ এর দশকে তৈরি একটি শহিদ বেদি সংস্কারের কাজে স্থানীয় তৃণমূল নেতারা বাধা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ তোলেন মোহিতবাবু। তিনি বলেন, “কংগ্রেসের উদ্যোগে শহিদ বেদি সংস্কারের কাজ চলছিল। কিন্তু সম্প্রতি তৃণমূল রাজনৈতিক স্বার্থে ওই কাজে বাধা দেওয়ায় সংস্কারের কাজ আটকে গিয়েছে। প্রশাসনকে এই বিষয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।” তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অরিন্দম সরকার বলেন, “শহিদ বেদি কোনও দলের সম্পত্তি হয় বলে আমার জানা নেই। আমরা কোনও কাজে বাধা দেইনি। বিষয়টি কংগ্রেসের ঘরোয়া কোন্দল।” এদিন সকালে রায়গঞ্জের বিভিন্ন স্কুল ও কলেজে নেতাজির জন্মদিন পালন করা হয়। হেমতাবাদের পীরেরহাট কংগ্রেসের কার্যালয়ের উদ্বোধন করেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা রায়গঞ্জের বিধায়ক মোহিতবাবু। |