পরিকাঠামোর অভাবে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালের শিশু বিভাগে চিকিৎসা পরিষেবা দিতে সমস্যায় পড়েছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। শয্যা সংখ্যার প্রায় তিনগুণ শিশু প্রতিদিন ভর্তি হচ্ছে। পাশাপাশি, দীর্ঘদিন থেকে ওই বিভাগের একাধিক জানালার কাচ ভাঙা। ওই পরিস্থিতিতে কনকনে শীতে সমস্যায় পড়েছে চিকিৎসাধীন শিশুরা। গত শুক্রবার চিকিৎসা পরিকাঠামো খতিয়ে দেখতে ওই হাসপাতালে যান রাজ্য বিধানসভার স্বাস্থ্য বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যরা। শিশুবিভাগের বেহাল দশা দেখে তাঁরাও প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, “গত তিন দশকে পরিকল্পনা ও উদ্যোগের অভাবে রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের পরিকাঠামো বেহাল হয়ে পড়েছে। রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতাল তার বাইরে নেই। হাসপাতালের শিশুবিভাগ সহ অন্য বিভাগের পরিকাঠামো উন্নয়নে খোদ মুখ্যমন্ত্রী উদ্যোগী হয়েছেন। আশা করছি, দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।” |
একে বিপুল সংখ্যক রোগীর চাপ। তার উপরে নিয়মিত সাফাই না-হওয়ায় আবর্জনায় ভরে গিয়েছে জেলা হাসপাতালের শিশু বিভাগ। দুর্গন্ধে ভরা পরিবেশ। মালদহ জেলা হাসপাতালে একের পর এক শিশু মৃত্যুর ঘটনার পরে উদ্বিগ্ন রায়গঞ্জ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দ্রুত শিশু বিভাগের পরিকাঠামোর উন্নয়নের আর্জি নিয়ে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের দ্বারস্থ হয়েছেন। গত শুক্রবার তাঁরা স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যদের কাছেও একই আবেদন রাখেন। হাসপাতালের সহকারি সুপার গৌতম দাস বলেন, “পরিকাঠামোর অভাবে শিশু বিভাগে চিকিৎসার কাজ করতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সমস্যা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের কাছে পরিকাঠামো উন্নয়নের আবেদন জানানো হয়েছে।” জেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, শিশু বিভাগে শুধু উত্তর দিনাজপুর জেলা নয়। সংলগ্ন দক্ষিণ দিনাজপুর, এমনকী বিহারের শিশুদেরও চিকিৎসার জন্য ভর্তি করানো হয়। ওই বিভাগে শয্যা রয়েছে ২০টি। কিন্তু গড়ে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৪৫ জন শিশুকে ভর্তি করানো হচ্ছে। রোগীর চাপে একই শয্যায় দুই থেকে তিনজনকে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শিশুদের সঙ্গে একই শয্যায় গাদাগাদি করে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন অভিভাবকরা। ভিড়ের কারণে সবসময় চিৎকার চেঁচামেচি লেগে থাকে সেখানে। ওই পরিস্থিতিতে চিকিৎসার কাজ করতে সমস্যায় পড়েন চিকিৎসকরা। চিকিৎসক ও নার্সদের একাংশের অভিযোগ, জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের কয়েকবার সমস্যার কথা জানিয়েও বিভাগে শয্যা সংখ্যা বাড়েনি।
এমনকী, ওয়ার্ডের একাধিক জানালার কাঁচ দীর্ঘদিন থেকে ভাঙা অবস্থায় পড়ে থাকলেও মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। শীতে হুহু করে ঠান্ডা বাতাস ঢুকছে। নিয়মিত সাফাই না-হওয়ায় একই শয্যায় একাধিক শিশু ভর্তি থাকায় সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদিও হাসপাতালের এক কর্তা জানান, যতদিন না-শয্যা সংখ্যা বাড়ছে ততদিন শিশুবিভাগে চাপ কমাতে অতিরিক্ত শিশুদের হাসপাতালের অন্য কয়েকটি ওয়ার্ডে ভর্তি রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পাশাপাশি, হাসপাতালের একতলায় একটি ভবন মেরামত করে শিশুবিভাগ সম্প্রসারণের পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। |