কর্মসূচির গেরো, অনিশ্চিত মুখ্যমন্ত্রী-জয়রাম বৈঠক
হাইকম্যান্ডের ‘দূত’ হয়ে এসেও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়রাম রমেশের তিন দিনের বঙ্গ-সফরে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎ ‘অনিশ্চিত’ হয়ে পড়েছে।
সরকারি সফরে সোমবারই রাজ্যে এসেছেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী রমেশ। যিনি ঘোষিত ভাবেই কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের তরফে তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের ‘সেতু’। কিন্তু সফরের প্রথম দিন মমতার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়ে ওঠেনি। আজ, মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর যাওয়ার কথা পুরুলিয়া-বাঁকুড়া জেলায়। ফেরার কথা বুধবার। আবার সে দিনই নির্বাচনী প্রচারে মণিপুর যাওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রীর। মণিপুরের ইম্ফলে প্রচার সেরে মুখ্যমন্ত্রী যখন কলকাতা ফিরবেন, তার অল্প কিছু পরেই দিল্লি ফেরার উড়ান ধরার কথা রমেশের। এর মধ্যে কোনও সময় মমতার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়ে ওঠে কি না, তা-ই এখন দেখার।
বস্তুত, তৃণমূল নেত্রী তাঁকে ‘এড়িয়ে’ যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে সংশয়ী হয়ে পড়ায় এ দিন মুখ্যমন্ত্রীকে একাধিক বার ‘বার্তা’ পাঠান রমেশ। মুখ্যমন্ত্রী এক বার তাঁকে ফোনও করেন। রমেশ চাইছিলেন বুধবার তাঁর সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে বলেন, ওই দিন ইম্ফলের দলীয় কর্মসূচি অনেক আগে থেকেই ঠিক হয়ে আছে। মণিপুরে সে দিন একটিই নির্বাচনী জনসভা করতে যাচ্ছেন তিনি। সেই কর্মসূচি হঠাৎ করে পরিবর্তন করা যাবে না। রমেশের তরফে প্রস্তাব ছিল এ দিনই রাতে আলোচনায় বসা যেতে পারে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী জানান, নেতাজির জন্মদিনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গভীর রাত পর্যন্ত তিনি ‘ব্যস্ত’ থাকবেন। তৃণমূলের এক প্রথমসারির নেতার কথায়, “ভাল হত, যদি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একবার আলোচনা করে তাঁর সফরসূচি ঠিক করতেন।”
কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে জোটে টানাপোড়েন কাটানোর লক্ষ্যেই মমতার সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসার পরিকল্পনা রয়েছে রমেশের। কেন্দ্রীয় অর্থ সাহায্যে এ রাজ্যে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের কাজ দেখার সরকারি ঘোষণা থাকলেও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর তিন দিনের সফরের মুখ্য উদ্দেশ্যই মমতার সঙ্গে দেখা করে কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের বার্তা জানানো। দিন কয়েক আগেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর তরফে এ রাজ্যের তিন জেলা দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ায় তিন দিনের সফরসূচি ঘোষণা করা হয়। তবে তিনি যে কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের ‘দূত’ হয়ে আসছেন, তা-ও তৃণমূল নেত্রীকে নিজেই জানিয়েছেন রমেশ। সেই উদ্দেশ্যেই সফরের শেষ দিন তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চান বলে রমেশ মমতাকে জানিয়েছিলেন।
রমেশ এ দিন বলেন, “আমার সঙ্গে মমতার মোবাইলে কথা হয়েছে। উনি জানান, ২৫ তারিখ উনি পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী ইম্ফল চলে যাবেন। সেখান থেকে তাড়াতাড়ি ফিরতে পারলে আমরা কলকাতায় কথা বলে নিতে পারব।” কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর দফতর সূত্রের বক্তব্য, সেই দিন ইম্ফলের বিমান রয়েছে দু’টি একটি ১০টা ৫৫ মিনিটে, আর একটি ১২টা ৩৫ মিনিটে। এর যে কোনও একটিতে মুখ্যমন্ত্রী যেতে পারেন। সেই দিনই বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটের উড়ানে তাঁর কলকাতা ফেরার কথা। ইম্ফল থেকে কলকাতায় পৌঁছতে সময় লাগার কথা ১ ঘন্টা ৪০ মিনিট। অর্থাৎ কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রীর বিমান পৌঁছনোর কথা সন্ধ্যা পৌনে ৭টা নাগাদ।
অন্য দিকে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানাচ্ছেন, ২৫ তারিখ রাত ৮টার উড়ানে তাঁর দিল্লি রওনা হওয়ার কথা। অর্থাৎ মমতার এসে পৌঁছনো এবং জয়রামের বিমান ধরার মধ্যে এক ঘণ্টার ফারাক থাকছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এ দিন বলেন, “তার আগে মমতার সঙ্গে দেখা করতে না-পারলে ওই এক ঘণ্টার মধ্যেও কথা হতে পারে।” এ রাজ্যে শাসক জোটের শরিক কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের বিবাদ দেখা দিলেও কংগ্রেস হাইকম্যান্ড যে তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে ‘সুসম্পর্ক’ বজায় রেখে চলতে চায়, তা জানানোর জন্য মমতার সঙ্গে ‘ব্যক্তিগত ভাল সম্পর্কের খাতিরে’ই কথা বলার চেষ্টা করছেন তিনি এ কথাও রমেশ উল্লেখ করেছেন। কিন্তু রমেশের চেষ্টা ‘ফলপ্রসূ’ হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে এখনও যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বুধবার ইম্ফল চলে যাচ্ছেন বলেই সেই দিন সকালে কলকাতায় প্রদেশ কংগ্রেস দফতরে যাওয়ার বিষয়টি রমেশের সফরসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতা ওমপ্রকাশ মিশ্র। বিমানবন্দরে নেমেই এ দিন সকালে সোজা এলগিন রোডে নেতাজি রিসার্চ ব্যুরোর অনুষ্ঠানে চলে যান রমেশ। তাঁর আশা ছিল, সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর দেখা হয়ে যাবে। কিন্তু রাজ্যের পঞ্চায়েত ও জনস্বাস্থ্য কারিগরি মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে এলগিন রোড থেকে রমেশ বেরনো অবধি মুখ্যমন্ত্রী সেখানে পৌঁছোননি। রেড রোডে নেতাজি জয়ন্তীর অনুষ্ঠান সেরে তিনি সেখানে পৌঁছন রমেশ বেরিয়ে যাওয়ার পর। নেতাজি ভবন থেকে সুব্রতবাবুর সঙ্গে রমেশ চলে যান দক্ষিণ ২৪ পরগণার নোদাখালিতে জনস্বাস্থ্য কারিগরির জলশোধন গবেষণাগার দেখতে। সেখানে তিনি জানান, রাজ্যের নতুন সরকারের জল প্রকল্পের কাজের অগ্রগতিতে দিল্লি খুশি। তাই দক্ষিণ ২৪ পরগনা, বাঁকুড়া, ও পুরুলিয়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুর মিলিয়ে মোট ৪৩২১.৮৮ কোটি টাকার জলপ্রকল্প কেন্দ্র মঞ্জুর করেছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.