মিছিল, পতাকা তোলা নিয়ে লড়াই
সুভাষ-স্মরণেও অন্তর্দ্বন্দ্বে রক্তাক্ত তৃণমূল, জখম ৯
তৃণমূলের মুখোমুখি তৃণমূল। এবং সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিনেও নিজেদের মধ্যে সেই লড়াইয়ে বিরাম নেই। কোথাও বিরোধ মিছিলে যোগদান নিয়ে। কোথাও ঝামেলার মূলে পতাকা উত্তোলন। সুভাষচন্দ্রের জন্মদিন পালনকে কেন্দ্র করে সোমবার কলকাতার উপকণ্ঠে দু’টি জায়গায় শাসক তৃণমূলের গোষ্ঠী-সংঘর্ষে ন’জন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে আছে একটি কিশোরও। আহতদের সকলকেই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
সংঘর্ষের একটি ঘটনা ঘটে হাওড়ার নাজিরগঞ্জে। অন্যটি উত্তর ২৪ পরগনার নিউ ব্যারাকপুরে। হাওড়ায় সংঘর্ষ বাধে সুভাষচন্দ্রের জন্মদিনে মিছিলে যোগদানকে কেন্দ্র করে। বেলা ৩টে নাগাদ নাজিরগঞ্জের লিচুবাগানে গোষ্ঠী-সংঘর্ষে এক যুবক গুরুতর জখম হন। গোলমাল চলাকালীন পড়ে গিয়ে জখম হয়েছে এক কিশোরও। দু’জনেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আর নিউ ব্যারাকপুরে তৃণমূলের কার্যালয়ে ২৩ জানুয়ারি উপলক্ষে জাতীয় পতাকা তোলা নিয়ে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে হাতাহাতি হয়। দুই গোষ্ঠীর সাত জন জখম হন। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
জখম কিশোর। নিজস্ব চিত্র
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, হাওড়ার লিচুবাগানে কয়েকটি ম্যাটাডর ভ্যানে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের পতাকা লাগিয়ে স্থানীয় কিছু যুবক ফিরোজ আহমেদ পার্সি নামে এক যুবকের নেতৃত্বে কলকাতার এলগিন রোডের দিকে রওনা হচ্ছিলেন। ওই সময় মাসুদ আলি খান ওরফে গুড্ডু নামে অন্য এক যুবক তাঁর লোকজন নিয়ে সেখানে হাজির হন। গুড্ডু মিছিলের জন্য হাজির হওয়া ফিরোজের লোকজনকে বলেন, এলাকার নেতা তিনিই। তাই তাঁর নেতৃত্বেই সকলকে মিছিলে যেতে হবে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গুড্ডু এবং ফিরোজ দু’জনেই নিজেদের তৃণমূলের নেতা বলে দাবি করেন।
বাসিন্দারা জানান, ফিরোজ তাঁর লোকজনকে গুড্ডুর নেতৃত্বে মিছিলে যেতে বারণ করেন। ফিরোজের অভিযোগ, খেপে গিয়ে লাঠিসোঁটা তাঁর লোকজনের উপরে চড়াও হন গুড্ডু। লাঠির আঘাতে গুরুতর জখম হন মহম্মদ জাভেদ নামে এক যুবক। ফিরোজের আরও অভিযোগ, তিনি দলবল নিয়ে নাজিরগঞ্জ থানায় প্রতিবাদ জানাতে গিয়েছিলেন। সেই সময় গুড্ডু ফের তাঁদের উপরে চড়াও হন। পুলিশ লাঠি চালায়। লাঠির আঘাতে শেখ রমজান নামে এক কিশোরের হাত ভেঙে যায়।
পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, থানার সামনে দু’পক্ষই পরস্পরের উপরে চড়াও হয়। ফের সংঘর্ষে বাধে। লাঠি উঁচিয়ে তাদের দিকে তেড়ে যায় পুলিশ। সেই সময় পড়ে গিয়ে জখম হয় রমজান। দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হলেও রাত পর্যন্ত কোনও পক্ষই কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেনি। হাওড়ার পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) রবীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “সংঘর্ষ হয়েছে দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে। পুলিশ লাঠি চালায়নি। লাঠি নিয়ে তেড়ে গিয়েছিল মাত্র।”
কী বলছেন তৃণমূলের হাওড়া জেলা নেতৃত্ব? তৃণমূলের হাওড়া জেলা সভাপতি অরূপ রায় বলেন, “গুড্ডু দলের কেউ নয়। ফিরোজ দলের কি না, খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। তবে পুলিশকে বলেছি, সংঘর্ষে যারাই জড়িত থাকুক, চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।” গুড্ডুর দাবি, “আমিও মিছিলে যেতে চেয়েছিলাম। যেতে দেওয়া হয়নি। উল্টে আমার দলের কর্মী-সমর্থকদের পিটিয়েছে ফিরোজই। আমাকেও নিগ্রহ করেছে।”
নিউ ব্যারাকপুরের ঘটনাটি ঘটে তৃণমূলের স্থানীয় কার্যালয়ে। পুলিশি সূত্রের খবর, ওই কার্যালয়ে আগে থেকেই তৃণমূলের পতাকা তোলা ছিল। দলীয় পতাকার নীচে জাতীয় পতাকা রাখা নিয়েই গোলমালের শুরু। এক পক্ষ পতাকার ছবি তুলে হাইকম্যান্ডকে জানানোর হুঁশিয়ারি দিতেই মারামারি বেধে যায়। তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি নির্মল ঘোষ বলেন, “গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের ঘটনা নিন্দনীয়। কেন্দ্রীয় কমিটিকে জানিয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
রাতে নৈহাটিতে দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত হন টিএমসিপি-র শহর সভাপতি অভিজিৎ দত্ত। পুলিশ জানায়, অভিজিৎ ঋ ষি বঙ্কিম কলেজ সংলগ্ন ক্লাবে ক্যারাম খেলছিলেন। সেই সময় দুই দুষ্কৃতী তাঁর পিঠে ছুরি মারে। কয়েকটি দোকান ভাঙচুর করে। অভিজিৎবাবুকে কল্যাণী জে এন এম হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল। এলাকার তৃণমূল বিধায়ক পার্থ ভৌমিক বলেন, “ওখানকারই দুই যুবক বিনোদ ও ভিকি হামলা করেছে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। এরা আগেও তৃণমূলের কার্যালয় ভাঙচুর করে তারা।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.