ভারতের কাছে সত্যিই এটা দুঃস্বপ্নের সফর হয়ে উঠেছে। শুধু ০-৩ হারছে বলে নয়। এই হারের যে সাংঘাতিক প্রতিক্রিয়া হচ্ছে তার জন্যও। যেমন আমি খুব অবাক হয়েছি গৌতম গম্ভীরের মন্তব্য শুনে যে, বিদেশি টিমগুলো আমাদের টার্নিং ট্র্যাকে এসে খেলে দেখুক! গম্ভীরকে পরিণত ক্রিকেটার মনে হত। সব পরিবেশে খেলে সফল হওয়ার যোগ্যতা দেখিয়েছে। সেই কারণে আরও ওর মন্তব্যটা খুব হতাশজনক।
আমার মনে হয় না কোনও অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার কখনও ভারতের ঘুর্ণি উইকেটে খেলা নিয়ে অভিযোগ করেছে। ২০০১-এ দুর্ধর্ষ একটা সিরিজ ভারতে হেরেছিলাম। আমরা কিন্তু কখনও টার্নিং উইকেটে খেলতে হয়েছে বলে ঘ্যানঘ্যান করিনি। করিনি কারণ আমরা জানতাম ভাল উইকেটে খেলেই হেরেছি। ঠিক তেমনই শেষ তিনটে টেস্ট যে ভারত অস্ট্রেলিয়ায় হেরেছে, প্রত্যেকটা ভাল উইকেটে খেলা হয়েছে। অস্ট্রেলীয়রা একই পিচে যথেষ্ট ভাল ভারতীয় বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে বড় রান করেছে। সিডনিতে যেমন মাত্র একটা সেশন লড়াই করে বের করে নিয়ে যেতে হত। তার পর উইকেট একদম সহজ হয়ে যেত। টেস্ট ক্রিকেট ব্যাপারটাই তো তাই। কঠিন পরিস্থিতিগুলোতে লেগেপড়ে থেকে, সাহস দেখিয়ে বের করে আনতে হবে। ভারত এখানটাতেই নিজেদের ডুবিয়েছে।
বাকি অ্যাডিলেডের শেষ টেস্ট। সহবাগদের নিজেদের গর্ব রক্ষার জন্য খেলতে হবে। বিশেষ করে সিনিয়রদের যারা অতীতে এখানে ভাল করেছে কিন্তু এই সিরিজে পারছে না। অস্ট্রেলীয় জনতাকে ওদের দেখাতে হবে যে, যতটা খারাপ ওদের এই সফরে দেখিয়েছে ততটা খারাপ ওরা নয়।
সময় যখন খারাপ যায়, তখন সবথেকে বেশি সমালোচনার ঢেউ অধিনায়ককেই সামলাতে হয়। একদমই আশ্চর্যের নয় যে, ধোনিকেও এখন সেটা সহ্য করতে হচ্ছে। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি যা ধরে সেটাই সোনা হয়ে যায় এই কথা আর এই সফরে বলা যাচ্ছে না। কিন্তু ওর প্রাপ্তিগুলোও যেন লোকে ভুলে না যায়। ভারতকে ও টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে নিয়ে গিয়েছে। বিশ্বকাপ জিতেছে। পঞ্চাশ ওভার এবং টি-টোয়েন্টি দু’টো ফর্ম্যাটেই। এই বিপর্যের জন্য একা ধোনিকে দায়ী করা মোটেও ঠিক হবে না। সিনিয়ররা বিশেষ করে সিনিয়র ব্যাটসম্যানদেরও দায় নিতে হবে। তবে এটাও ঠিক যে, ধোনির নিজের ফর্ম ঠিক না থাকায় ওর নেতৃত্বের মধ্যে সেই ঝলকটা ছিল না। ওকে আগের মতো চনমনে দেখায়নি। মাঝেমধ্যে গড়পড়তা লেগেছে।
ভারতীয়দের কোথায় গণ্ডগোল হল বলা কঠিন। বীরেন্দ্র সহবাগ যে কিনা হয় খুব উত্তপ্ত নয়তো পাথরের মতো ঠান্ডা কিছু করতে পারল না। সেটা ভারতের জন্য বিরাট ধাক্কা হয়ে গেল। এর পরেও আশা করব ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা অ্যাডিলেডে ভাল কিছু করবে। ওদের টেকনিকে সমস্যা নেই। সমস্যাটা মনোভাবে। আশা করব শেষ টেস্টটায় ওরা ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে খেলবে। তাতে কিছুটা সম্মান অন্তত রক্ষা করা যাবে। কিন্তু শেষ কয়েকটা টেস্টে যে রকম মানসিকতা নিয়ে ওরা মাঠে নেমেছে সেটাই যদি অ্যাডিলেডে থাকে তা হলে আর একটা ০-৪ অপেক্ষা করে আছে! |