ভারত-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট সিরিজের শেষ ম্যাচটা চলে এল। তৃতীয় আর চতুর্থ টেস্টের মধ্যে তফাতটা বেশ বাড়াবাড়ি রকমের লম্বা লাগল। কারণ, পারথ টেস্ট আড়াই দিনে শেষ হয়ে গিয়েছিল। যখন টিমের খারাপ সময় চলছে, তখন এই সময় পাওয়াটা খুব কাজে দেয়। তাতে ভুলগুলো ফিরে দেখা যায়, মানসিক ভাবে নতুন করে গুছিয়ে নেওয়া যায়। ব্যক্তি ও টিম নতুন করে সব কিছু শুরু করতে পারে। আশা করতে পারি ভারতীয় দল এই হঠাৎ পাওয়া সময়টাকে কাজে লাগিয়ে শেষ টেস্টের জন্য নিজেদের তৈরি করেছে। এই টেস্টের জন্য ভারত নতুন ক্যাপ্টেন পাচ্ছে। গোটা দেশ কিন্তু সহবাগের প্রতিটি চাল লক্ষ করবে। আশা করা যাক, ও টিমকে উদ্বুদ্ধ করে নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়বে। এই টেস্টে ভারতের হারানোর কিছু নেই। নিশ্চয়ই ওদের মাথায় থাকবে অ্যাডিলেডের সুখস্মৃতি, যেখানে দীর্ঘ সময় ভারত কোনও টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারেনি। যেখানে ২০০৩-০৪-এ ওরা জিতেছে, ২০০৮-এ হারেনি এবং এখানে শেষ ম্যাচে সহবাগ একটা দুরন্ত সেঞ্চুরি করেছিল। উপমহাদেশের ক্রিকেটারদের কথা মাথায় রাখলে অ্যাডিলেডের চেয়ে ব্যাটিং বন্ধু উইকেট আর হয় না। ‘থ্রু দ্য লাইন’ হিট করার জন্য উপযুক্ত বাউন্স থাকে উইকেটে। একটা শট মারলে তার দাম পাওয়া যায়। ভারতের নিয়মিত ক্যাপ্টেন ম্যাচটায় নেই। তবে কখনও কখনও নেতৃত্ব বদল হলে সেটা টিমের পক্ষেই যায়। |
অ্যাডিলেডে ভারতের প্রথম এগারো নিয়ে জল্পনা চলছেই। খুব বেশি বদলের দরকার নেই, কিন্তু অস্ট্রেলিয়া থেকে যে রিপোর্ট আসছে, তাতে ধোনির সাসপেন্ড হওয়ার জন্য বসতে হওয়া আর চার পেসারের বদলে অস্ট্রেলিয়ার তিন পেসার-এক স্পিনার খেলানোর কথাই থাকছে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে বোলিং আক্রমণে প্রজ্ঞান ওঝাকে রাখতে চাই। অস্ট্রেলীয়রা বাঁ হাতি স্পিন বোলিংয়ের বিরুদ্ধে স্বচ্ছন্দ নয়। ওঝার টিমে ঢোকা জাহিরের নেতৃত্বে থাকা বোলিংকে অন্য মাত্রা দেবে। কেউ কেউ বলছেন, ধোনির অনুপস্থিতিতে লোয়ার অর্ডারে ব্যাটিংকে শক্তিশালী করতে অশ্বিনকে খেলানো উচিত। কিন্তু সেটা আমার কাছে রক্ষণাত্মক স্ট্র্যাটেজি, কারণ প্রথম ছ’জন যদি রান না করতে পারে, লোয়ার অর্ডারে ব্যাটসম্যান বাড়িয়ে লাভ নেই। বরং ভাবা উচিত অস্ট্রেলিয়াকেও তেমন দাওয়াই দেওয়া, যা ওদের একেবারেই পছন্দ হবে না। টিমের কম্বিনেশন ঠিক করতে পিচও খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। অস্ট্রেলিয়ায় পিচ এখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সবুজ। টিম কম্বিনেশন ঠিক করতে সহবাগ নিশ্চয়ই ম্যাচের দিন সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। অন্য মাঠের চেয়ে ঘাস কম হলে দুটো স্পিনার খেলানোটা ভাল বিকল্প। ইশান্ত উইকেটের মধ্যে নেই, প্রজ্ঞানকে খেলানো যেতেই পারে। পরপর মেডেন নিয়ে বিপক্ষের উপর চাপ তৈরি করতে এই সফরে ভারতের সমস্যা হচ্ছে, কারণ পেসাররা প্রচুর রান দিয়ে ফেলছে। তবু টেস্টটা অন্য ভাবে খেলার জন্য চার পেসারও খেলানো যেতে পারে। তবে আসল কথা ভারতের ব্যাটিং। সহবাগ, দ্রাবিড়, লক্ষ্মণরা এই মাঠে প্রচুর রান করেছে। কিন্তু চ্যালেঞ্জটা হল এখানে আবার রান করা, কারণ এই সিরিজে এদের কাউকেই টাচে আছে বলে মনে হয়নি। কিন্তু তিন জনেই গ্রেট ক্রিকেটার বলে জানে, ফর্মে ফিরতে স্রেফ একটা বিকেল বা সন্ধে দরকার হয়। ওদের এত বছরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এই ম্যাচটা খেলতে হবে। গত এক বছরে বিদেশে টিমের পারফরম্যান্স খারাপ হওয়ার জন্য টিমের কিছু ক্রিকেটারের উপর অসম্ভব চাপ আছে। সে জন্যই কী ভাবে ওরা চ্যালেঞ্জটা নেয়, সেটা খুব জরুরি।
অস্ট্রেলিয়ার বার্তাটা পরিষ্কার। হোয়াইটওয়াশ চাই। সিরিজ শুরুর আগে এই মনোভাব ওদের ছিল না। প্রতিটা জয় ওদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে। এখন যখন সিরিজ জেতা হয়ে গিয়েছে, কফিনে শেষ পেরেকটা মারার জন্য ওরা তৈরি হয়ে থাকবে। অ্যাডিলেডে ৪-০ করার জন্য ওরা ঝাঁপাবেই। |