টেস্ট ওপেনিংয়ের সংজ্ঞা বদলে দিয়েছেন তিনি। বলা হয়, তাঁর মতো এমন বিধ্বংসী ওপেনারও আর আসেনি ভারতীয় ক্রিকেটে। কিন্তু আগামী দিনে টেস্টে ওপেন করতে তাঁকে আর না-ও দেখা যেতে পারে। তিনিবীরেন্দ্র সহবাগ, আবার নেমে আসতে পারেন মিডল অর্ডারে। যেখানে খেলেই এসেছিল তাঁর জীবনের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি।
কেন? সহবাগ নিজেই উত্তরটা দিয়ে রাখছেন। এটা মোটামুটি পরিষ্কার যে আর বছরখানেকের মধ্যে জাতীয় দলের কয়েক জন মহাতারকা বিদায় জানাবেন টেস্ট ক্রিকেটকে। তুলে রাখবেন ক্রিকেট কিট। ভিভিএস লক্ষ্মণকে নিয়ে ইতিমধ্যেই বিপরীতধর্মী হাওয়া উঠতে শুরু করেছে। রাহুল দ্রাবিড়েরও খারাপ ফর্ম চলছে অস্ট্রেলিয়ায়। সহবাগের মনে হচ্ছে, মহাতারকারা অবসর নিলে মিডল অর্ডারে দরকার পড়বে তাঁর। ডনের শহরে তাঁর অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে শেষ যুদ্ধে নামার আগে ভারতের অস্থায়ী অধিনায়ক তাই বলে রেখেছেন, “সব কিছু নির্ভর করছে টিমের কম্বিনেশন, অধিনায়ক কে থাকছে, কারা অবসর নিচ্ছে তার উপর।” তবে ব্যাটিং অর্ডারে নেমে আসা যে অ্যাডিলেডে ঘটছে না সেটা পরিষ্কার করে দিয়েছেন। বলেছেন, “না, না। এই টিমে সেটা সম্ভব নয়। কারণ এই টিমের মিডল অর্ডার অসম্ভব শক্তিশালী। কিন্তু এরা অবসর নিলে তখন নিশ্চয়ই ভাবব মিডল অর্ডারে নেমে আসার কথা।” অর্থাৎ, দ্রাবিড়-লক্ষ্মণরা অবসর নিয়ে ফেললে নতুন বলের পালিশ তোলার কাজে আর না-ও দেখা যেতে পারে এই বিধ্বংসী ওপেনারকে। |
বাউন্সার আরও বাকি ছিল। সহবাগকে প্রশ্ন করা হয়, পুরো সময়ের টেস্ট অধিনায়কত্ব করতে তিনি চান কি না? বিশেষ করে ধোনির অধিনায়কত্ব নিয়ে যখন তুমুল সমালোচনা চলছে। যখন বলা হচ্ছে, ধোনির অধিনায়কত্ব প্রয়োজনের চেয়ে খুব বেশি ডিফেন্সিভ। সহবাগ অবশ্য এই ‘বিষাক্ত’ ডেলিভারি খেলার কোনও চেষ্টাও করেননি। হালে তাঁর এবং ধোনির মধ্যে ঝামেলার খবর রটিয়ে ইতিমধ্যেই একপ্রস্থ বিতর্ক তৈরি করেছে অস্ট্রেলীয় মিডিয়া। সহবাগও কোনও বিতর্কিত উত্তরের রাস্তায় হাঁটেননি। বলেছেন, “এই মুহূর্তে আমি ও সব নিয়ে একদমই ভাবছি না। টেস্ট ম্যাচ নিয়ে ভাবছি। আর এটা আমার দেখার ব্যাপারও নয়। এটা বোর্ডের কাজ। নির্বাচকদের কাজ।”
এই অ্যাডিলেডেই গত সফরে তাঁর সেঞ্চুরি ছিল। কিন্তু সে দিন আর এ দিনে বড় তফাত। চলতি সফরে ছ’ইনিংস মিলিয়ে সহবাগের রান দেড়শোও পেরোয়নি। মাত্র ১২৮! গত সফরে অ্যাডিলেডের সেঞ্চুরি কি এ বার তাঁকে আত্মবিশ্বাস দেবে? সহবাগ রসদ খুঁজছেন। বলছেন, “শেষ বার যখন এখানে এসেছিলাম, পরিস্থিতি আলাদা ছিল। টিমে আমার জায়গা নিশ্চিত ছিল না। এখন পরিস্থিতি অন্য রকম। অ্যাডিলেডে গত বার আমার সেঞ্চুরি ছিল, নিশ্চয়ই ভাল ব্যাপার। আপনাআপনিই ইচ্ছে হবে আরও একটা সেঞ্চুরি এখানে করতে।” নিজের মন্দ ব্যাটিং, ভারতীয় ব্যাটিং লাইন আপের ভরাডুবি নিয়েও মুখ খুলেছেন। সহবাগের মতে, এটাই তাঁর দেখা সেরা অস্ট্রেলীয় বোলিং আক্রমণ!
“যে ক’টা অস্ট্রেলীয় বোলিং আক্রমণ দেখেছি, তার মধ্যে এটাই সেরা। ওরা বাউন্ডারির বল তো দিচ্ছেই না, উল্টে আমাদের ধৈর্য নিয়ে খেলছে। অতীতে শুরুর দিকের ওভারগুলোয় চালিয়ে কয়েকটা বাউন্ডারি তুলে নিতাম। কিন্তু এরা সেই সুযোগটাই দিচ্ছে না,” বলেছেন সহবাগ। সঙ্গে যোগ করেছেন, “আমারও ধৈর্য রাখা উচিত। সেটা করতে পারলে বাউন্ডারির বল পাওয়া যাবে। এটাই চ্যালেঞ্জ।”
আর অস্ট্রেলিয়া? অ্যাডিলেড টেস্টের আগে রাতারাতি ভোল পাল্টে তারাও ভারতীয় ব্যাটিংয়ের স্তুতিতে! বিশেষ করে সচিন তেন্ডুলকর, রাহুল দ্রাবিড় এবং ভিভিএস লক্ষ্মণকে তো চরম সার্টিফিকেটই দিয়ে রাখলেন অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক। বলে রাখলেন, সচিন-রাহুলদের তাঁদের যোগ্য সম্মানটা দেওয়া উচিত।
“ওই তিন জন ক্রিকেটার হিসাবে বিশাল মাপের। গোটা ক্রিকেট দুনিয়া ওদের সম্মান করে। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ায় ওদের সম্মানটা বরাবর আলাদা। আর আমি মনে করি ভারত এখনও ভাল ক্রিকেটই খেলছে,” বলেছেন ক্লার্ক। |