|
|
|
|
পুলিশ আরও সক্রিয় হোক, রেলশহরে দাবি সর্বস্তরেই |
নিজস্ব সংবাদদাতা • খড়্গপুর |
আপাত শান্ত একটা এলাকাকে গ্রাস করেছে আতঙ্ক। রাস্তার ধারে মানুষজনের জটলা। পরিচিত দেখলেই দাঁড়িয়ে পড়ছেন অনেকে। জানতে চাইছেন, ঠিক কী ভাবে ঘটনাটা ঘটল। উদ্বেগে বাসিন্দারা। খড়্গপুর শহরে চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা মাঝেমধ্যেই ঘটে। দিনেদুপুরে চোখে লঙ্কার গুঁড়ো ছিটিয়ে টাকা ছিনতাইয়ের মতো ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু ডাকাতিতে বাধা পেয়ে দুষ্কৃতীরা কাউকে গুলি করে মেরেছে, এমন ঘটনা সাম্প্রতিককালে ঘটেনি। তা-ও আবার খোদ ডিআইজি (মেদিনীপুর) বিনীত গোয়েলের দফতরের কিছু দূরেই! ফলে, উদ্বেগ চেপে বসেছে। শহরবাসীর এই উদ্বেগ স্বাভাবিক বলে মনে করেন খড়্গপুরের পুরপ্রধান জহরলাল পালও। তাঁর কথায়, “এমন ঘটনা ভাবাই যায় না। পুলিশকে আরও সক্রিয় হতে হবে। শহরে নজরদারি বাড়াতে হবে।” নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে জানাচ্ছে পুলিশ। কিন্তু, তাতেও যেন আতঙ্ক চাপা থাকছে না।
খড়্গপুর শহরের খরিদা বাজার এলাকার সাহু-বাড়িতে সোমবার ভোর থেকে ছিল শোকের আবহ। বাড়ির ছোট ছেলে সঞ্জয় সাহুকে (২২) রবিবার গভীর রাতে গুলি করে খুন করে দুষ্কৃতীরা। ডাকাতির চেষ্টা রুখতে গিয়েই তাঁর প্রাণ গিয়েছে। দোতলার দরজার সামনেই পড়েছিল রক্ত। গুলি লাগার পর এখানেই লুটিয়ে পড়েছিলেন সঞ্জয়। সকাল থেকেই বাড়িতে আসতে শুরু করেন পরিজন ও প্রতিবেশীরা। ছেলের মৃত্যুর জেরে বারে বারে মূর্চ্ছা যাচ্ছিলেন মা সাইবনিদেবী। বাবা গৌরহরিবাবু যেন ভাবতেই পারছেন না কোথা থেকে কী হয়ে গেল। খরিদা বাজার এলাকাটি শহরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। এখানে রাতে ‘বহিরাগত’ যুবকদের যাতায়াত লেগে থাকে বলে জানাচ্ছেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর সত্যদেও শর্মা। তাঁর কথায়, “বিষয়টি আগেই পুলিশকে জানিয়েছি। কিন্তু, সে ভাবে পদক্ষেপ করা হয়নি।” খরিদা রেল-গেটের কাছে রাতে একটি ঠেক বসে। এখানে নেশাগ্রস্ত যুবকদের যাতায়াত থাকে বলেই অভিযোগ। কাউন্সিলর বলেন, “এই এলাকা এমনিতে শান্তই ছিল। ইদানীং তেমন কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু, সোমবার থেকে এলাকার সর্বত্রই যেন চাপা উদ্বেগ। এই পরিস্থিতিতে পুলিশকে আরও সক্রিয় হতে হবে।” পুলিশের অবশ্য দাবি, যে কোনও অভিযোগ এলেই তা খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হয়। বিভিন্ন ঠেকে হানা দেওয়াও হয়।
খড়্গপুর শহরে নানা ভাষাভাষি মানুষের বাস। এক সময়ে খড়গপুরে চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটত প্রায়ই। প্রকাশ্য দিবালোকে দাপিয়ে বেড়াত দুষ্কৃতীরা। এখন অবশ্য সেই পরিস্থিতি নেই। তবে মাঝেমধ্যে চুরির ঘটনা ঘটে। যা থেকে স্পষ্ট, খড়গপুরে এখনও দুষ্টচক্রের প্রভাব রয়েছে। ক’মাস আগে মালঞ্চ এলাকায় চোরেদের ‘উপদ্রব’ বেড়ে গিয়েছিল। কখনও বিবেকানন্দপল্লি, কখনও গুড়িপুকুর এলাকায় চুরির ঘটনা ঘটেছে। চুরি গিয়েছে সোনার গহনা-সহ গৃহস্থের নানা সরঞ্জাম। তদন্তে নেমে অবশ্য পুলিশ এ সব ঘটনায় জড়িত অভিযোগে কয়েক জনকে গ্রেফতারও করে। তাদের কাছ থেকে চুরি যাওয়া সরঞ্জামও উদ্ধার হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, শহর এলাকার বাইরের কিছু যুবক দুষ্টচক্রের পান্ডা। সুযোগ পেলে শহরে ঢুকে চুরি-ছিনতাই করে পালিয়ে যায়। রবিবার গভীর রাতের ঘটনার পর নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। শহরের মালঞ্চ এলাকার অমিত হালদার থেকে ইন্দার অলোক রায়--সবারই দাবি, এই পরিস্থিতিতে পুলিশকে আরও তৎপর হতে হবে। দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযান চালাতে হবে। কোনও রকম সমাজবিরোধী কার্যকলাপে রাজনৈতিক নেতাদের মদত দেওয়া চলবে না। ডিআইজি-র (মেদিনীপুর) আশ্বাস, “দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। নজরদারি আরও বাড়ানো হবে।” এই আশ্বাসই এখন ভরসা শহরবাসীর। |
|
|
|
|
|