উদ্বেগ খরিদায়
ডাকাতিতে বাধা দিতে গিয়ে যুবক খুন
ডাকাতি করতে এসে বাধা পেয়ে এক যুবককে গুলি করে মারল দুষ্কৃতীরা। রবিবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে রেলশহর খড়্গপুরের খরিদায়। ঘটনাস্থলের অদূরেই রাজ্য পুলিশের মেদিনীপুর রেঞ্জের ডিআইজি-র দফতর। ফলে, ওই এলাকায় বাড়তি নজরদারি থাকেই। সেই নজরদারির মধ্যেই কী ভাবে ডাকাত-দল হানা দিল, সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। উদ্বেগ ছড়িয়েছে রেলশহরে। সোমবার সকালে ঘটনাস্থলে আসেন ডিআইজি বিনীত গোয়েল-সহ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশের কর্তারা। পুলিশ কুকুর নিয়ে তল্লাশি চলে। স্থানীয় কয়েক জনকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। পুলিশের অবশ্য আশ্বাস, উদ্বেগের কিছু নেই। এলাকায় নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে। ডিআইজি বলেন, “তদন্ত চলছে। সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। চুরির উদ্দেশ্যেই দুষ্কৃতীরা হানা দিয়েছিল বলে মনে হচ্ছে।” প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের ধারণা, দুষ্কৃতী-দলের সঙ্গে স্থানীয় কারও যোগাযোগ রয়েছে। ঘটনায় সোমবার পর্যন্ত কেউ অবশ্য গ্রেফতার হয়নি।
পুলিশ কুকুর এনে তদন্ত শুরু ঘটনাস্থলে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
খরিদা এলাকায় এক সময়ে অবশ্য দুষ্কৃতীদের ভাল রকম ‘দাপট’ ছিল। হামেশাই চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটত। পরে অবশ্য পরিস্থিতি পাল্টায়। এলাকায় সমাজবিরোধীদের উপদ্রব কমে। রবিবার গভীর রাতে যে ঘটনা ঘটেছে, তা সাম্প্রতিক কালে নজিরবিহীন বলেই স্থানীয় মানুষের মত। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে খবর, রবিবার রাত ২টো ১৫ নাগাদ ৫-৬ জনের একটি দুষ্কৃতী-দল মোটরবাইকে খরিদা বাজার এলাকায় হানা দেয়। বাজারের পাশেই বসতি-এলাকা। স্থানীয় একটি গহনার দোকানে ডাকাতির উদ্দেশ্যেই দুষ্কৃতীরা এসেছিল বলে মনে করছে পুলিশ। ওই দোকানের পাশেই একটি প্রসাধন সামগ্রীর দোকান রয়েছে। ‘ভুল করে’ সেই দোকানটির সাটার ভাঙার চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা। রাতে সাটার ভাঙার শব্দে ঘুম ভেঙে যায় প্রসাধন সামগ্রীর দোকানের উল্টোদিকের দোতলা একটি বাড়ির লোকজনের। বিকট শব্দ শুনে দোতলার বারান্দায় এসে প্রৌঢ় গৌরহরি সাহু দেখেন, কয়েক জন ওই দোকানের সাটার ভাঙার চেষ্টা করছে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি তাঁর দুই ছেলেকে ডাকেন। বাবার ডাক পেয়ে ছুটে আসেন সঞ্জয় ও বিজয়। উল্টোদিকের বাড়ির লোকজনের হাঁকডাকে তাদের ‘নৈশ অভিযান’ ব্যর্থ হবে এবং তারা ধরা পড়ে যেতে পারে বলে ভয় পায় দুষ্কৃতীরা। বাড়িটির দোতলায় ওঠার জন্য রাস্তার পাশে একটি সিঁড়ি রয়েছে। ওই সিঁড়ি দিয়েই দুষ্কৃৃতীরা দোতলায় ওঠে। দরজা ভেঙে গৌরহরিবাবুর বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করে। লোহার শাবল দিয়ে দরজায় আঘাত করে। সেই আঘাতে দরজায় একটি অংশ ভেঙে ফুটো তৈরি হয়। এর পর ওই ফুটোর মধ্যে রিভলবার ঢুকিয়েই গুলি চালায় এক দুষ্কৃতী। গুলি লাগে বছর বাইশের সঞ্জয়ের নাকে। মুহূর্তে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ওই যুবক। পরে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ইতিমধ্যে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা।গুলির শব্দে এলাকায় আতঙ্ক ছড়ায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। সঞ্জয়ের ভাই বিজয়ের ধারণা, তাঁরা যে ডাকাতি রুখতে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন, তা বুঝেই দুষ্কৃতীরা খুনের ছক কষে। খরিদায় ডিআইজি-র দফতর। এমন এলাকায় নজরদারি এড়িয়ে কী ভাবে দুষ্কতীরা হানা দিল, এই বিষয়টিই ভাবাচ্ছে শহরবাসীকে। সোমবার সকালে ঘটনাস্থলে পৌঁছন খড়্গপুরের এসডিপিও দীপক সরকার। পুলিশ কুকুর নিয়ে তল্লাশি চলে। আসেন ডিআইজি বিনীত গোয়েল, জেলা পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠি-সহ উচ্চপদস্থ পুলিশকর্তারা। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, এলাকা সম্পর্কে দুষ্কৃতীদের স্পষ্ট ধারণা ছিল। না-হলে তারা দ্রুত গা-ঢাকা দিতে পারত না। ঘটনার পর নিরাপত্তার অভাববোধ করছেন স্থানীয় মানুষ। তাঁদের বক্তব্য, ফের শহরে দুষ্কৃতীদের ‘দাপট’ বাড়তে শুরু করেছে। না-হলে এমন ঘটনা ঘটত না। পুলিশের অবশ্য বক্তব্য, উদ্বেগের কিছু নেই। ঘটনায় জড়িতদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। ডিআইজি বলেন, “কিছু সূত্র ধরেই তদন্ত এগোচ্ছে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.