|
|
|
|
স্কুলে অচলাবস্থা, দু’মাস বেতনও বন্ধ শিক্ষকদের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বাগনান |
সদ্য অবসরপ্রাপ্ত জেলা স্কুল পরিদর্শকের সঙ্গে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিবাদের জেরে বাগনানের পাইকপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষকদের বেতন দু’মাস বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মিড-ডে মিল চালু করা যায়নি। দেওয়া যায়নি সংখ্যালঘু ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিশেষ আর্থিক সাহায্য। শিক্ষকদের একাংশ গত ১৯ জানুয়ারি উলুবেড়িয়ার মহকুমাশাসকের শরণাপন্ন হলেও সমস্যার সমাধান হয়নি।
জেলা স্কুল পরিদর্শক অফিস সূত্রের খবর, ২০১০ সালের ৩১ অগস্ট স্কুলের তৎকালীন পরিচালন সমিতির মেয়াদ শেষ হয়। তার পরে নতুন করে অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচিত হলেও পরিচালন সমিতি গঠন করা যায়নি। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক অচিন্ত্য পাঁজা বলেন, “নতুন পরিচালন সমিতি গঠনের কাজটি অনেকটাই হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন জেলা স্কুল পরিদর্শক নিয়মানুযায়ী সমিতিতে সরকারি প্রতিনিধি পাঠাতে অস্বীকার করেন। তার ফলেই পরিচালন সমিতি গঠন করা যায়নি। এ বিষয়ে আমি রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতরে তৎকালীন জেলা স্কুল পরিদর্শকের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছি। তারা তদন্ত করছে। এ ছাড়া কয়েকজন অভিভাবক প্রতিনিধি জেলা স্কুল পরিদর্শকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন। সেই মামলা এখনও চলছে।”
এ ব্যাপারে সদ্য অবসর নেওয়া জেলা স্কুল পরিদর্শক মহিতোষ পাহাড়ি বলেন, “নতুন নির্বাচিত অভিভাবক প্রতিনিধিদের কয়েকজন আমার কাছে অভিযোগ করেছিলেন ভোটার তালিকায় কারচুপি হয়েছে। আমি সে ব্যাপারে তদন্তের নির্দেশ দিই। সেই কারণেই আমি পরিচালন সমিতিতে সরকারি প্রতিনিধি পাঠাইনি।” প্রধান শিক্ষকের অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁর বিরুদ্ধে যে রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতর তদন্ত করছে সে কথাও অবশ্য স্বীকার করেন তিনি।
এ দিকে নতুন পরিচালন সমিতি গঠিত না-হওয়ার ফলে স্কুলের শিক্ষকদের বেতন দিতে সমস্যা হয়। সমস্যাটি মেটাতে জেলা স্কুল পরিদর্শকের কার্যালয় থেকে একজন ডিডিও (ড্রয়িং অ্যান্ড ডিসবার্সিং অফিসার) নিয়োগ করা হয়। কিন্তু ডিডিও-র হাতে কোনও প্রশাসনিক ক্ষমতা ছিল না। তিনি শুধুই শিক্ষকদের বেতন দেওয়ার কাজটি করতেন। ফলে জেলা স্কুল পরিদর্শকের পরামর্শ মেনে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ গত ১৮ এপ্রিল একজন প্রশাসককে ওই স্কুলে নিয়োগ করেন। যিনি ডিডিও হিসাবে কাজ করতেন তাঁকেই প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ করে পর্ষদ। নিয়োগপত্র লেখায় কিছু ত্রুটি থাকার জন্য পরে তা সংশোধন করা হয়। শেষ পর্যন্ত ২০১১ সালের ২০ অক্টোবর ত্রুটি সংশোধন করে তাঁকে ফের নতুন করে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। এ বারে বেঁকে বসেন প্রধান শিক্ষক। তিনি তাঁকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে অস্বীকার করেন।
প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য, “অবসরপ্রাপ্ত জেলা স্কুল পরিদর্শকের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা চলছে। তা ছাড়া আমার একটি অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তও করছে রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতর। এ সবের মীমাংসা না-হওয়া পর্যন্ত আমি প্রশাসক নিয়োগে সাহায্য করব না।” যদিও এ বিষয়ে মধ্য শিক্ষা পর্ষদের এক কর্তা জানান, মামলা চললেও প্রশাসক নিয়োগে বাধা নেই। মামলার রায় বেরোলে সেই অনুযায়ী প্রশাসককে সরিয়ে দেওয়া যায়। এ বিষয়ে অচিন্ত্যবাবু বলেন, “গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত পরিচালন সমিতির জায়গায় প্রশাসক কেন আসবেন?”
ডিডিও নেই। প্রশাসক কাজ করতে পারছেন না। ফলে নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের বেতন পাননি স্কুলের ১২ জন শিক্ষক।
শোচনীয় অবস্থা গৌতম মান্না নামে একজন শিক্ষকের। তিনি স্কুল সার্ভিস কমিশন থেকে নির্বাচিত হয়ে কাজে যোগ দিয়েছেন। নিয়মানুযায়ী, নবনিযুক্ত শিক্ষকের বেতন-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন প্রশাসক বা পরিচালন সমিতি। কিন্তু দু’টিই না-থাকায় গত সাত মাস ধরে তিনি বিনা বেতনে কাজ করছেন।
অচলাবস্থা কাটাতে শিক্ষকদের একাংশ দেখা করেন উলুবেড়িয়ার মহকুমাশাসক দেবকুমার নন্দনের সঙ্গে। মহকুমাশাসক বলেন, “প্রধান শিক্ষককে আমি ডেকেছিলাম। তিনি বলছেন বিষয়টি বিচারাধীন। তবুও তাঁকে আমি বলেছি এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজতে। না-হলে স্কুলে অচলাবস্থা কাটবে না।”
প্রধানশিক্ষক সাফ জানিয়েছেন, “প্রশাসনিক কর্তাদের নির্দেশ আমি মানব না। এ বিষয়ে মহিতোষবাবুর বিরুদ্ধে যারা তদন্ত করছে সেই রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতর যদি আমাকে কোনও নির্দেশ দেন তা আমি মাথা পেতে নেব।” |
|
|
|
|
|