মেডিক্যাল কলেজ অতীব জরুরি। জেলা হাসপাতাল চালু রাখাও কিছু কম গুরুত্বপূর্ণ নহে। এই দুইটি কর্তব্যের ভিতর কিংকর্তব্যবিমূঢ় হইয়া আছেন বেশ কিছু চিকিৎসক। কী করিবেন, স্পষ্ট নহে। কী হইবে, স্পষ্ট নহে। পঠনপাঠন কী রূপে চলিবে, তাহাও অস্পষ্ট। সমস্যা হইল, একই ব্যক্তি একই সময় দুই জায়গায় থাকিতে পারেন না। সুতরাং, আপাতত বন্দোবস্ত হইয়াছে, তাঁহারা মেডিক্যাল কলেজ হইতে বেতন পাইবেন, কিন্তু কাজ করিবেন জেলা হাসপাতালে। ইহা কাজ চালাইবার উপায় বটে, কিন্তু তাহার অধিক কিছু নহে। মুখরক্ষা সাময়িক ভাবে হইলেও হইতে পারে, অতঃপর? এই প্রশ্নের পশ্চাদ্ধাবন জরুরি, কিন্তু বিষয়টির গভীরে দৃষ্টিপাতও একই রকম আবশ্যক। এই সংকটটি সৃষ্টি হইল কেন? উত্তরটি সুবিদিত। জেলা হাসপাতালকে ‘মেডিক্যাল কলেজ’ স্তরে উন্নীত করিবার পরে দেখা গিয়াছে, উপযুক্ত সংখ্যায় বিশেষজ্ঞ নাই। জরুরি ভিত্তিতে কিছু চিকিৎসককে জেলা হাসপাতাল হইতে মেডিক্যাল কলেজ-এ যোগ দিবার নির্দেশ জারি হয়। তাহাতে সংশ্লিষ্ট জেলা হাসপাতালগুলিতে ত্রাহি ত্রাহি রব পড়িয়া যায়। এমনই পরিস্থিতি, যে সকল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নূতন কর্মক্ষেত্রে যোগ দিবার জন্য পাততাড়ি গুটাইলেন, তাঁহাকে ছাড়িবার পরে সেই বিভাগগুগুলিতে কার্যত অচল হইবার দশা উপস্থিত। সুতরাং, সেই সব চিকিৎসক এই মুহূর্তে ত্রিশঙ্কু দশায় পতিত।
কেন এমন হইল, সেই প্রশ্নটি ভাবিয়া দেখা জরুরি। নূতন ‘মেডিক্যাল কলেজ’ গড়া নিঃসন্দেহে খুবই প্রয়োজনীয়, কিন্তু তাহার পূর্বে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোর সংস্থান করিয়া তবে। অন্যথায় অবস্থাটি গাড়ির পূর্বে অশ্বকে জুড়িবার শামিল হয়। দৃশ্যত, পরিস্থিতি তেমনই ইঙ্গিত করিতেছে। নূতন মেডিক্যাল কলেজ চালু করিবার সিদ্ধান্ত ঘোষণা প্রকৃত প্রস্তাবে একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়ার অন্তিম ফসল হওয়া উচিত। যে সকল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই ধরনের একটি প্রতিষ্ঠান গড়িয়া তোলা যায়, তাহা শেষ হইল। অতঃপর, মেডিক্যাল কলেজটি চালু হইতে পারে। তাহা না করিয়া দ্রুত গতিতে এই ধরনের একটি প্রতিষ্ঠান চালু করিবার সিদ্ধান্ত লইয়া ফেলিলে পরে নানাবিধ সংকট হইতে পারে। যেমন, সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজটির ক্ষেত্রে হইতেছে। কী সংকট হইতে পারে, তাহা হইতে পরিত্রাণের উপায় কী, সেই সব পূর্ব হইতে উপলব্ধি করিয়া তাহার জন্য প্রয়োজনীয় দাওয়াইয়ের সন্ধান ও বন্দোবস্ত করাই সুশাসনের লক্ষণ। এই ক্ষেত্রে সেই বস্তুটির সন্ধান মিলে নাই। প্রথম একটি বৎসর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়াই মেডিক্যাল কলেজ চলিতে পারে, পঠনপাঠনের বিশেষ ক্ষতি হইবে না, এমন একটি ব্যাখ্যা মিলিয়াছে।
প্রশ্নটি কিন্তু তেমন ক্ষতি হওয়া বা না-হওয়ার নহে। প্রশ্ন হইল, এমন একটি কিমাকার পরিস্থিতি কেন সৃষ্টি হইবে? পরিভাষায় যাহাকে বলে ‘জিরো টলারেন্স’, অর্থাৎ কাঙ্ক্ষিত অবস্থা হইতে এতটুকু বিচ্যুতি সহ্য না করিবার মানসিকতা, কিছু কিছু ক্ষেত্রে তেমন একটি মনোভাবই গ্রহণ করা উচিত। নূতন কলেজ নির্মাণের বিষয়টিও সেই গোত্রভুক্ত। ইহা চিকিৎসাবিদ্যা সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান, ফলে এই বিষয়ে অধিকতর সতর্কতা কাম্য। অথচ, সম্পূর্ণ পরিস্থিতি হইতে যেন তেন প্রকারেণ কাজ চালাইয়া দিবার মানসিকতাটিই স্পষ্ট। অগ্রপশ্চাৎ সংস্থান না করিয়া দ্রুত লয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ তাৎক্ষণিক কিছু করতালি আনিতে পারে, সত্য। দীর্ঘমেয়াদে সেই হর্ষটি স্থায়ী না হইবার সম্ভাবনাই সমধিক। প্রশাসন বিষয়টি স্মরণে রাখিলে মঙ্গল। |