সিপিএমের সঙ্গে ‘মিশে যাওয়া’র কথা পার্টি কংগ্রেসের খসড়া রাজনৈতিক প্রস্তাবে রাখল না সিপিআই।
প্রায় প্রতি পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক দলিলেই নিয়ম করে দুই কমিউনিস্ট পার্টির মিশে যাওয়ার কথা বলা হলেও এ বার আর সেই পথে হাঁটছে না সিপিআই। বরং, ‘বাম’ গণ্ডি ভেঙে বেরিয়ে ‘বৃহত্তম গণতান্ত্রিক ঐক্যে’র কথা বলছে তারা। ঠিক যেমনটা হয়েছে শ্রমিক ফ্রন্টে। সেখানে মনমোহন-সরকারের আর্থিক নীতির বিরুদ্ধে কংগ্রেস ও বিজেপি-র শ্রমিক সংগঠনগুলির সঙ্গে হাত মিলিয়েছে বামেরা।
পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে বিপর্যয়ের পরেই সিপিএমের বিরুদ্ধে ‘দাম্ভিকতা’ ও ‘দাদাগিরি’র অভিযোগ তুলেছিল সিপিআই। কিন্তু একই সঙ্গে সিপিএমের সঙ্গে সিপিআইয়ের মিশে যাওয়ার প্রসঙ্গও নতুন করে উঠে এসেছিল। দু’দলেরই নেতৃত্বের একাংশ যুক্তি দিয়েছিলেন, এই সঙ্কটের সময়ে দুই কমিউনিস্ট পার্টির সংযুক্তি প্রয়োজন। বামেদের প্রতি ‘সহানুভূতিশীল’ অনেকেই তা-ই মনে করেন। কিন্তু সিপিআই বরাবর আগ বাড়িয়ে দু’দলের পুনর্মিলনের কথা বললেও এ বার তারাই সেই পথে হাঁটছে না। সিপিআই নেতাদের মতে, এখন দলকে আরও বেশি করে ‘আন্দোলনমুখী’ করে তুলতে হবে। গত কয়েক বছরে যা হয়নি। প্রয়োজনে ‘সামাজিক ও রাজনৈতিক গণ্ডি’ ভাঙতে হবে। বামফ্রন্টের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখতে আরএসপি এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের সঙ্গেও সম্পর্ক আরও মজবুত করতে হবে বলে খসড়া দলিলে উল্লেখ করেছে সিপিআই।
দিল্লির অজয় ভবনের নেতাদের মতে, সিপিএমের মধ্যে ‘দাদাগিরি’র প্রবণতা এখনও বর্তমান। আজ রাজনৈতিক প্রস্তাবের খসড়া প্রকাশ করেও সিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক এ বি বর্ধন বলেন, “বড় শরিক একতরফা সিদ্ধান্ত নেয়। যে কোনও ফ্রন্টই পারস্পরিক শ্রদ্ধার সঙ্গে চালানো উচিত। এ ক্ষেত্রে আমরা উন্নততর ফ্রন্ট দেখতে চাই।” দলের নেতাদের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের প্রতি আক্রমণের ক্ষেত্রেও সিপিএম ‘একতরফা ভাবে’ আক্রমণে যাচ্ছে। স্বাভাবিক নিয়মে মমতার সরকারের জনপ্রিয়তা হারানোর অপেক্ষা করছে না। পশ্চিমবঙ্গে ও কেরলে হারের জন্যও সরাসরি সিপিএমকেই দায়ী করা হয়েছে রাজনৈতিক প্রস্তাবে। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জমি অধিগ্রহণ নীতি ও বিমান বসুর বামফ্রন্ট পরিচালনার সমালোচনা করে বলা হয়েছে, ‘পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছর পরে ক্ষমতাচ্যুত হওয়াটা রাজনৈতিক হার। তার জন্য ক্ষমতার দম্ভ, দুর্নীতি ও অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বামফ্রন্ট পরিচালনা দায়ী। দায়ী ভুল জমি অধিগ্রহণ নীতিও। কেরলে বড় শরিকের মধ্যে গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বই হারের কারণ। তৃণমূল স্তরে বাম |জোটে দুর্বলতা ছিল’।
আগামী মার্চ মাসে পটনায় পার্টি কংগ্রেসে দলের ভার বর্ধনের হাত থেকে চলে যাওয়ার কথা এস সুধাকর রেড্ডির হাতে। সিপিএম বর্তমান প্রেক্ষাপটে ‘মতাদর্শগত দলিল’ তৈরি করছে। সিপিআই নেতৃত্বের মত, আলাদা করে মতাদর্শগত দলিল তৈরি না-করে নতুন পার্টি কর্মসূচি তৈরি করতে হবে। এই দু’টো আলাদা হতে পারে না। এই পার্টি কংগ্রেস থেকেই নতুন ‘দলীয় কর্মসূচি’ (পার্টি প্রোগ্রাম) তৈরির কাজ শুরু হবে। তা হলে কি সিপিএমের সঙ্গে মিশে যাওয়ার ভাবনা শিকেয় তুলে রাখা হল? বর্ধন বলেন, “সম্ভাবনা সব সময়ই আছে। কিন্তু কবে সেই সম্ভাবনা আসবে, তা বলা সম্ভব নয়। তাঁর মতে, “দু’দলেরই পৃথক গণ-সংগঠন গড়ে উঠেছে। তাদেরও নিজস্ব জনভিত্তি রয়েছে। সব দিক ভাবতে হবে।” সুধাকর রেড্ডি বলেন, “আমাদের দলের নেতারা মনে করছেন, সিপিএমের সঙ্গে মিশে যাওয়ার কথা না-বলে দলের নিজস্ব সংগঠন মজবুত করাটাই বেশি প্রয়োজন।” সিপিএমের প্রকাশ কারাট জানিয়ে দিয়েছেন, দুই কমিউনিস্ট পার্টির পুনর্মিলন এখন তাঁর দলের কর্মসূচিতে নেই। বরম, তাঁরা বাম ঐক্যে জোর দিতে চান। সিপিআই নেতারাও তা-ই চান। তার জন্য সিপিএমের কাছে আরও বেশি মত বিনিময় ও যৌথ আন্দোলন গড়ে তোলার দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা। |