উত্তরপ্রদেশে প্রথম পর্বের ভোটের ঠিক দু’সপ্তাহ আগে স্বাস্থ্য কেলেঙ্কারিতে প্রধান অভিযুক্তের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হল। পুলিশের দাবি, নিজেরই রিভলবার থেকে গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করেছেন সুনীল বর্মা। রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, এই ঘটনায় চাপে পড়লেন মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী।
গত দু’বছরে উত্তরপ্রদেশে কেন্দ্রের জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন প্রকল্পের অর্থ তছরুপের ঘটনায় অভিযুক্ত দুই চিফ মেডিক্যাল অফিসার (সিএমও) খুন হয়েছেন! কয়েক মাস আগে জেলে বন্দি অবস্থায় রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে আর এক অভিযুক্ত স্বাস্থ্য কর্তার। এ বার মারা গেলেন প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজার সুনীল।
উত্তরপ্রদেশে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন প্রকল্পের টাকা তছরুপ তথা দুর্নীতির ঘটনায় এমনিতেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত। কেন্দ্রীয় অনুদানের সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার মধ্যে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকাই বেহাত হয়ে গিয়েছে। ইলাহাবাদ হাইকোর্টের নির্দেশে ভোটের মুখে সিবিআই তদন্ত এবং তল্লাশিও শুরু হয়েছে। ঘটনার আঁচ থেকে ‘বাঁচতে’ মন্ত্রিসভা থেকে দুই মন্ত্রী বাবুসিংহ কুশওয়াহা এবং অনন্ত মিশ্রকে সরিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তার পরেও ‘আত্মহত্যার’ ঘটনা আজ বিএসপি তথা মায়াবতীকে কিছুটা বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। গত ৪ জানুয়ারি কুশওয়াহা ও অনন্ত মিশ্রের বাড়ির পাশাপাশি সুনীল বর্মার বাড়িতেও সিবিআই তল্লাশি চালিয়েছিল।
বসপা যে চাপে পড়েছে তা মায়াবতীর মন্তব্যেও প্রতিফলিত হয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবির। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “সবই কংগ্রেসের ষড়যন্ত্র। স্বাস্থ্য মিশনের অর্থ কয়েক কিস্তিতে কেন্দ্র মঞ্জুর করেছে। কিন্তু তছরুপের বিষয়টি আগে জানতে পারল না কেন? কেন্দ্র কি ঘুমোচ্ছিল?” স্বাস্থ্য মিশনের টাকা তছরূপের বিষয় নিয়ে অনেক দিন ধরেই সরব কংগ্রেস। আজ ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন দলের নেতারাও। লখনউ থেকে দিল্লিকংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, “সুনীল বর্মার মৃত্যু আদৌ আত্মহত্যা কি না, তদন্ত করে দেখা হোক। প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত একের পর এক কর্তার কেনই বা রহস্যজনক মৃত্যু হচ্ছে?” সেই সঙ্গে মায়াবতীকে আক্রমণ করে কংগ্রেসের বক্তব্য, কেন্দ্রই যদি দায়ী হয়, তা হলে ভয় পেয়ে দুই মন্ত্রীকে বরখাস্ত করলেন কেন মুখ্যমন্ত্রী?
উত্তরপ্রদেশে মায়াবতী সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ কংগ্রেসের প্রচারের অন্যতম বিষয়। দলের শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য, মায়ার দুর্নীতি নিয়ে রাজ্যে সর্বস্তরের মানুষের অসন্তোষ রয়েছে। সেই সঙ্গে যে ভাবে রহস্যজনক সব মৃত্যু ঘটছে, তাতে ভোট মরসুমে বিএসপি-র বিরুদ্ধে ক্ষোভের প্রবল বহিঃপ্রকাশ হবে বলেই কংগ্রেস আশাবাদী।
স্বাস্থ্য মিশন প্রশ্নে মায়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কংগ্রেস কিছুটা এগিয়ে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা রয়েছে বিজেপি-র। এই অবস্থায়, কংগ্রেসের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেছে বিজেপি-ও। দলের মুখপাত্র রবিশঙ্কর প্রসাদের কথায়, “ভোটের আগে কংগ্রেস সিবিআই-কে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছে। বিজেপি-র প্রশ্ন হল, ছোটখাটো সরকারি আমলার বদলে সিবিআই কেন রাঘববোয়ালদের ধরছে না?” রাজনৈতিক সূত্রে বলা হচ্ছে, স্বাস্থ্য মিশন প্রকল্প নিয়ে তদন্ত যে পথে এগোচ্ছে তাতে অদূর ভবিষ্যতে আরও তল্লাশি, ধরপাকড় হওয়ার সম্ভাবনা রয়ে গেল। যা অনিবার্য ভাবেই ভোটে প্রভাব ফেলতে পারে। |