উত্তরপ্রদেশের জনমত সমীক্ষার ফলাফল আগেই অক্সিজেন জুগিয়েছে। আজ প্রাক্-ভোট জনমত সমীক্ষায় পঞ্জাবের ফল সামনে আসার পরে আরও উজ্জীবিত কংগ্রেস। কিন্তু সেই সমীক্ষা অনুযায়ীই উত্তরাখণ্ডের ফল কিছুটা হলেও চিন্তায় রাখল দশ জনপথকে।
স্টার নিউজ-এ সি নিয়েলসেন-এর যে জনমত সমীক্ষা আজ প্রকাশিত হয়েছে, তাতে পঞ্জাবে কংগ্রেসের জয়ের পূর্বাভাস স্পষ্ট। সমীক্ষা অনুযায়ী রাজ্যে ১১৭টি বিধানসভা আসনের মধ্যে কংগ্রেস পেতে পারে ৬৩টি আসন। আর অকালি-বিজেপি জোট ৫৮টি আসনে জিততে পারে বলে প্রাক্-ভোট সমীক্ষায় বলা হয়েছে। একই ভাবে উত্তরাখণ্ডে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। সেখানে মোট আসন সংখ্যা ৭০। সমীক্ষা অনুযায়ী, সেখানে মুখ্যমন্ত্রী ভুবনচন্দ্র খান্ডুরির নেতৃত্বে বিজেপি ৩৯টি আসনে জিততে পারে। কংগ্রেস পেতে পারে মাত্র ২৯টি আসন।
অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে, বহু ক্ষেত্রেই এই জাতীয় জনমত সমীক্ষার ফলাফল বাস্তবের সঙ্গে মেলে না। তবে ভোটদাতাদের মনোভাবের আগাম আঁচ পেতে এই ধরনের সমীক্ষার একটা গ্রহণযোগ্যতাও রয়েছে। উত্তরাখণ্ডের ক্ষেত্রে যে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, তা যে কোনও সময় বদলে যেতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে সমীক্ষাতেই। কারণ স্টার নিউজ-এ সি নিয়েলসেন-এর মতে, এখনও পর্যন্ত যা রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তাতে উত্তরাখণ্ডে বিজেপির তুলনায় কংগ্রেসের ভোট শতাংশের ফারাক মাত্র এক শতাংশ। যা টানতে পারলে হিসেব উল্টে যেতেই পারে কংগ্রেসের পক্ষে। এই খুঁটিনাটি হিসেবটি সেখানে যেমন কংগ্রেসকে উদ্বেগের মধ্যেও আশা দেখাচ্ছে, তেমনই জয়ের আশার মধ্যেও আশঙ্কা তৈরি করেছে বিজেপিতে। |
বেশ কিছু দিন আগেই উত্তরপ্রদেশ নিয়ে এক দফা প্রাক্-ভোট জনমত সমীক্ষা প্রকাশ করেছে স্টার নিউজ-এ সি নিয়েলসেন। সেই সমীক্ষার মতে, হিন্দিবলয়ের সব থেকে বড় এই রাজ্যে বিধানসভা ভোটে এ বার চমক দেখাতে পারে কংগ্রেস। দীর্ঘদিন ধরে উত্তরপ্রদেশে চতুর্থ স্থানে থাকা কংগ্রেসের ভোট শতাংশ এ বার এক ধাক্কায় অনেকটাই বাড়তে পারে বলে সমীক্ষার ইঙ্গিত। কংগ্রেস ও রাষ্ট্রীয় লোকদল জোট ৮০টি আসন পেতে পারে বলে সমীক্ষার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। যা কংগ্রেসের কাছে উৎসাহব্যঞ্জক। কারণ, প্রকৃতপক্ষে এমন ফল হলে কংগ্রেস উত্তরপ্রদেশে সরকার গঠনে নিয়ন্ত্রক শক্তি হয়ে উঠতে পারে। যে হেতু এর আগে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে স্টার নিউজ-এ সি নিয়েলসেনের প্রাক্-ভোট সমীক্ষা ভোটের ফলাফলের সঙ্গে প্রায় মিলে গিয়েছিল, তাই এ বার তিন রাজ্যে এদের সমীক্ষাকে গুরুত্ব দিচ্ছে কংগ্রেস।
কংগ্রেস শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, পঞ্জাবে গত পঁচিশ বছর ধরে পাঁচ বছর অন্তর সরকার বদলের ধারা অব্যাহত রয়েছে। গত বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসকে হারিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল অকালি-বিজেপি জোট। ধারা অব্যাহত থাকলে এ বার পালা কংগ্রেসের। কিন্তু স্রেফ তার ওপর ভরসা রেখেই কংগ্রেস হাত গুটিয়ে নেই। বরং অনুন্নয়ন, দেনাগ্রস্ত পরিস্থিতি ও প্রকাশ সিংহ বাদল সরকারের বিরুদ্ধে পুঞ্জীভূত দুর্নীতির অভিযোগের কারণে যে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা তৈরি হয়েছে, তাকে কাজে লাগাতে মরিয়া তারা। অম্বিকা সোনি, পবন বনশল, কপিল সিব্বল-সহ কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা তো বটেই, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ সস্ত্রীক পঞ্জাবে ভোট প্রচারে গিয়েছেন। তা ছাড়া পঞ্জাবে গত বিধানসভা ভোটে ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিংহ ও রাজেন্দ্র কউর ভাট্টালের মধ্যে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব নিয়ে যে লড়াই ছিল, এ বার সেই অবস্থা নেই। অমরেন্দ্র সিংহই সর্বজনগ্রাহ্য নেতা হয়ে উঠেছেন।
তবে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছেন, উত্তরাখণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে রমেশ পোখরিয়াল নিশঙ্ককে ভোটের ঠিক আগে সরিয়ে দিয়ে তুলনায় স্বচ্ছ ভাবমূর্তির ভুবনচন্দ্র খান্ডুরিকে মুখ্যমন্ত্রী করে বিজেপি মোক্ষম চাল দিয়েছে। নিশঙ্কের বিরুদ্ধে কুম্ভমেলার টাকা তছরুপ থেকে শুরু করে গুচ্ছ অভিযোগ ছিল। তিনি মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকলে কংগ্রেসের জয় অনেক সহজ হত বলেই ২৪ আকবর রোডের নেতাদের ধারনা। তবে দলের এক শীর্ষ সারির নেতার কথায়, “প্রাক্-ভোট সমীক্ষার পরেও কংগ্রেস উত্তরাখণ্ডে উৎসাহ হারাচ্ছে না। কারণ, হিসেব মতো ভোট শতাংশের ফারাক নিতান্তই কম। তাই আরও আগ্রাসী প্রচার করলে ফল ঘুরে যেতে পারে।” উত্তরাখণ্ডে বিজেপির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে সরব হওয়ার পাশাপাশি অনুন্নয়নের বিষয়টিও তুলে ধরছে। কারণ, অতীতে খান্ডুরি মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন উন্নয়নের কাজ বিশেষ হয়নি। আজ উত্তরাখণ্ডে ভোট প্রচারে গিয়ে রাহুল অনুন্নয়নের বিষয়টি তুলে বলেন, “খান্ডুরি যদি ভালো কাজ করছিলেন, তা হলে তাঁকে সরিয়ে কেন নিশঙ্ককে মুখ্যমন্ত্রী করেছিল বিজেপি? আবার এখন দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় নিশঙ্ককে সরিয়ে খান্ডুরিকে এনেছে। বিজেপির এই খেলা মানুষ ধরে ফেলেছে।” |