সব দায় কি শিল্পপতিদের, বিতর্ক জমজমাট
ট্রেন দুর্ঘটনায় তো কত লোকের মৃত্যু হয়, তা বলে কি রেলমন্ত্রীকে গ্রেফতারের দাবি ওঠে! তা হলে শিল্প সংস্থায় দুর্ঘটনা ঘটলেই তার মালিককে গ্রেফতার করা হবে কেন? শিল্পপতি মানেই কি তাঁর দায় সবার চেয়ে বেশি?
সোমবার সন্ধ্যায় শহর শীতে কাতর হলে কী হবে, ক্যালকাটা ক্লাবের প্রশস্ত লন রীতিমতো উত্তপ্ত হয়ে উঠল এই প্রশ্নকে সামনে রেখে। ‘শিল্পপতিদের উপর সামাজিক দায়বদ্ধতার চাপ ও তার ফাঁকফোকর’ নিয়ে বিতর্কে বারবারই উঠে এল আমরি-কাণ্ড এবং তার জেরে সংস্থার সাত বোর্ড সদস্যের গ্রেফতারের প্রসঙ্গ। শিল্পপতিদের পক্ষে দাঁড়িয়ে যাঁরা রেল দুর্ঘটনার উদাহরণ টানলেন, বিপক্ষের বক্তারা তাঁদের জবাব দিলেন এই বলে যে, গাড়ির চালক কাউকে চাপা দিলে মৃত ব্যক্তির পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া বা আইনি ঝক্কি তো গাড়ির মালিককেই নিতে হবে।
কিন্তু সমাজের প্রতি শিল্পপতিদের দায় কতটা?
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট অ্যান্টনি কলেজের অধ্যাপক তপন রায়চৌধুরীর মতে, শিল্পপতিরা হলেন সম্পদের স্রষ্টা। কিন্তু শ্রমিক ছাড়া এই সম্পদ উৎপাদন অসম্ভব। তা হলে শ্রমিক যে সমাজ থেকে আসছে, তার প্রতি শিল্পসংস্থার দায় থাকাটাই স্বাভাবিক।
যদিও চিকিৎসক কুণাল সরকার বা প্রাক্তন আইপিএস, বর্তমানে সাংসদ অজয় কুমারেরা এই ভাবে শিল্পসংস্থার উপর যাবতীয় দায় চাপানোর পক্ষপাতী নন। অজয়ের প্রশ্ন, “ওড়িশায় কোনও প্রকল্পের বিরুদ্ধে স্থানীয় মানুষ বিক্ষোভ জানায়। সেই সংস্থাকে দোষারোপ করা হয়। কই, কেউ তো যে অনুমোদন দিয়েছে সেই সরকারি কর্তাব্যক্তিদের কিছু বলে না!” একই সুরে কুণাল বলেন, “সরকার কর নিচ্ছে কিন্তু কী ভাবে কোন খাতে সেই টাকা খরচ হচ্ছে, কেন সর্বত্র উন্নয়ন থেমে আছে কিছুই জানাতে তারা বাধ্য নয়। কেন? কেন যাবতীয় জবাবদিহি শুধু বাণিজ্যসংস্থাকে করতে হবে?”
আইনজীবী জয়ন্ত মিত্র পাল্টা বলেন, “জবাবদিহি করতে হবে। আইন সেটাই বলে। বাণিজ্য সংস্থার যাঁরা মাথা, কোনও বিপর্যয় ঘটলে তাঁদেরই দায় নিতে হবে। কারণ, ধরে নেওয়া হবে, তাঁরা অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ঠিক রাখতে পারেননি বলেই এটা ঘটেছে।”
যা খণ্ডন করে প্রবীণ চাটার্ড অ্যাকাউট্যান্ট পি আর রমেশের যুক্তি, কোনও সংস্থা সামাজিক কাজ করলে সরকার তো তাকে বাড়তি সুবিধা দেয় না। সরকার কোনও সংস্থাকে বাছাই করতে গেলে শুধু তার লাভের অঙ্ক দেখে। তা হলে সংস্থাগুলি কেন সামাজিক কাজ নিয়ে মাথা ঘামাবে? তাঁকে সমর্থন করে স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ সন্দীপ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, অন্যায় ভাবে চিকিৎসা বর্জ্য ফেলার দায় হাসপাতাল যেমন এড়াতে পারে না তেমনই সরকার বা স্থানীয় মানুষও এটা রোখার দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলতে পারেন না।
কিন্তু তাঁদের যুক্তি উড়িয়ে সিআইআইয়ের ন্যাশনাল কাউন্সিলের সদস্য দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “আমেরিকার ২০টি বৃহৎ শিল্পসংস্থায় ভাটা পড়লে গোটা বিশ্বের অর্থনীতি টালমাটাল হয়ে যায়। অতএব এদের সামাজিক দায় বেশি হবেই। তার উপর শিল্পসংস্থার স্বাভাবিক প্রবণতা হল লাভ করার ও প্রতিদ্বন্দ্বীকে শেষ করার, সে ক্ষেত্রে তাদের বাড়তি দায়বদ্ধতা বজায় রাখতে হবে বইকি।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.