|
|
|
|
১০ দিন পার, বৃদ্ধা খুনে দেখা দিয়েছে প্রচুর প্রশ্ন |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
শান্তিনিকেতনে অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষিকা রেণু সরকার খুনের ঘটনার কিনারা তো দূর, বরং পুলিশি তদন্তে বিস্তর ‘ফাঁকফোকর’ই সামনে আসছে। পুলিশেরই পরস্পরবিরোধী দাবিকে ঘিরে তৈরি হচ্ছে ধোঁয়াশা।
সোমবার ওই খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ আরও এক জনকে গ্রেফতার করেছে। পিন্টু দাস নামে ওই ব্যক্তি বোলপুরের বাসিন্দা। এর আগে এই ঘটনায় মঙ্গল সাহানি নামে এক যুবককে ধরেছিল পুলিশ। পিন্টু তারই সঙ্গী। পুলিশের দাবি ছিল, জেরায় মঙ্গল তাদের জানিয়েছে, সে আর পিন্টু মিলে ১৩ জানুয়ারি রাতে শান্তিনিকেতনের বাগানপাড়ায় রেণুদেবীর বাড়িতে চুরি করতে যায়। চুরিতে বাধা পেয়ে মঙ্গল রেণুদেবীকে লোহার রড দিয়ে আঘাত করে। তাতেই ওই বৃদ্ধার মৃত্যু হয়।
অথচ খুনের ঘটনায় প্রথম যাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, ওই বাড়ির কেয়ারটেকার উজ্জ্বল তপাদারই রেণুদেবীকে খুন করেছে বলে প্রাথমিক ভাবে পুলিশ দাবি করছিল। কেন? পুলিশের বক্তব্য, উজ্জ্বল ওই বাড়িতে লজ তৈরি করতে চেয়েছিল। রেণুদেবী সেই প্রস্তাব মানেননি। সেই ‘আক্রোশেই’ উজ্জ্বল কিছু সঙ্গীর সাহায্যে রেণুদেবীকে ‘বালিশ চাপা’ দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করেছে।
১৮ জানুয়ারি পুলিশ তারাপীঠ থেকে মঙ্গলকে ধরে। রাতারাতি ‘অবস্থান’ বদলে বীরভূমের পুলিশ সুপার থেকে শুরু করে স্থানীয় থানা খুনের দায় মঙ্গলের উপরেই চাপায়। মঙ্গলও সংবাদমাধ্যমের সামনে দাবি করে, চুরি করতে গিয়ে ওই বৃদ্ধা জেগে যাওয়ায় তাঁকে খুন করা ছাড়া তাদের উপায় ছিল না। গত শুক্রবার রেণুদেবীর বাড়ির অদূরে ‘খুনের অস্ত্র’ সেই লোহার রডটিও উদ্ধার হয় বলে পুলিশ দাবি করে। |
|
ধৃত মঙ্গল সাহানি ও উজ্জ্বল তপাদার। নিজস্ব চিত্র |
এই অবস্থায় নিহত বৃদ্ধার বাড়ির লোকের প্রশ্ন, গোটা ঘটনাটাই সাজানো নয় তো? পুলিশের কোন দাবিটা ঠিক? পুলিশ সুপার হৃষিকেশ মিনা সোমবারও এ প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়েছেন। তিনি শুধু বলেছেন, “মঙ্গল সাহানির সঙ্গী পিন্টু দাসকে এ দিন তার বোলপুরের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে জেরা করা হচ্ছে।” প্রথমে কেন বলা হয়েছিল বালিশ চাপা দিয়ে উজ্জ্বল খুন করেছে তার গৃহকর্ত্রীকে? পুলিশ সুপারের দাবি, “আমরা তা বলিনি। আমাদের অনুমান ছিল, বালিশ চাপা দিয়ে খুন হয়েছে। ধৃত কেয়ারটেকার তা বলেনি।” তা হলে কি মঙ্গল সাহানিই আসল খুনি? মিনার জবাব, “মঙ্গলের বিষয়টিও তদন্তসাপেক্ষ। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পেলেই নিশ্চিত ভাবে কিছু বলা যাবে।”
যদিও পুলিশ সূত্রের খবর, বোলপুর হাসপাতাল থেকে ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট পুলিশের হাতে এসেছে। ওই রিপোর্টে রেণুদেবীর নাকের হাড় ভাঙা ও মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার কথা উল্লেখ আছে। দুই চোখে কালশিটে দাগও ছিল। মাথায় কোনও গভীর চোট বা ক্ষতচিহ্ন পাওয়া যায়নি। শ্বাসরোধ করে মারার চিহ্ন ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে নেই। তবে ভিসেরা-পরীক্ষার রিপোর্ট আসেনি।
এই অবস্থায় প্রশ্ন হল:
১) একই খুনের কথা দু’জন কবুল করে কী ভাবে? কে আসল খুনি? প্রোমোটিংয়ের ‘তত্ত্ব’ থেকে পুলিশ কেন হঠাৎ খুনের কারণ হিসাবে চুরিতে বাধা দেওয়ার কথা বলল? পুলিশ কি ‘চাপ’ দিয়ে মঙ্গল বা উজ্জ্বলকে দিয়ে খুনের ঘটনা কবুল করিয়েছে? না হলে খুনের কারণ কেন পুলিশ স্পষ্ট বলছে না?
২) মঙ্গল দাবি করেছিল, নিহত বৃদ্ধার মোবাইল থেকেই সে উজ্জ্বলকে ফোন করে সব জানায়। অথচ উজ্জ্বল বা তাঁর স্ত্রী জেরায় এমন কিছু বলেছে বলে পুলিশ জানায়নি। তা হলে কে ঠিক বলছে?
৩) দোতলার যে ঘরে রেণুদেবী খুন হন, সেই ঘরের বাথরুমের বেসিনে ও জানলার পাশে ছাইদানিতে দামি ব্র্যান্ডের আধপোড়া সিগারেট পাওয়া গিয়েছে। পুলিশের কিছু অফিসার বলছেন, উজ্জ্বল, মঙ্গল বা পিন্টু, তিন জনের কেউই অত দামি সিগারেট খেতে পারে না। তা হলে, ওই সিগারেটের টুকরো এল কোথা থেকে? পাশাপাশি, ওই ঘর থেকেই মিলেছে আধপোড়া বিড়ি। ধৃত তিন জনই যা খায় বলে পুলিশের দাবি।
৪) মঙ্গল আর পিন্টু যদি চুরির উদ্দেশ্যেই ঢুকে থাকে, তা হলে রেণুদেবীর হাতের সোনার নোয়া বা কানের দুল কেন নেয়নি? কেন চুরি করেছে সামান্য কিছু টাকা আর বৃদ্ধার সাধারণ মোবাইল? রাজ্য পুলিশেরই একটি মহল অবশ্য মনে করে, এই খুনের কিনারা করার জন্য জেলা পুলিশের উপরে বিভিন্ন মহল থেকে চাপ রয়েছে। ফলে, যেনতেনপ্রকারেণ কাউকে একটা ‘খুনি’ খাড়া করে পুলিশ ‘মুখরক্ষা’র চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠছে। |
|
|
|
|
|