নিজস্ব সংবাদদাতা • কাঁকরতলা |
আচরণে ‘অস্বাভাবিকতা’ দেখা দেওয়ায় একই পরিবারের ৯ জন সদস্যকে সিউড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করল পুলিশ। সোমবার ঘটনাটি ঘটেছে কাঁকরতলা থানা এলাকার পারশুণ্ডি দাস পাড়ায়। কিন্তু কেন এই পরিস্থিতি তা কারও কাছে পরিষ্কার নয়।
যদিও সিউড়ি সদর হাসপাতালের মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ বিশ্বজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রাতারাতি তাঁদের মধ্যে পরিবর্তন আসেনি। তিন-চার দিন ধরে ধীরে ধীরে এই পরিবর্তন হয়েছে। তাঁদের মধ্যে সে সব লক্ষণ দেখা গিয়েছে, তাতে আমাদের মনে হয়েছে দিনের পর দিন তাঁরা নেশা জাতীয় কিছু খেয়েছেন।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পারশুণ্ডি গ্রামের দাস পাড়ার বাসিন্দা কৃষিজীবী আকু রুইদাস তাঁর পাঁচ ছেলের মধ্যে চার ছেলে ও বউমা, নাতি-নাতনিদের নিয়ে বাস করেন। ওই গ্রামে বসবাসকারী চার ভাইয়ের ১২ জন সম্তান আছে। কর্মসূত্রে আকু রুইদাসের আর এক ছেলে তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে বাইরে থাকেন। পড়শিদের কথায়, গত তিন দিন ধরে ওই পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক সদস্যদের আচরণে পরিবর্তন লক্ষ্য করা গিয়েছিল। পড়শি অনীক দাস, নারায়ণ দাস, অনিল দাসরা বলেন, “রবিবার রাতে ভদ্র রুইদাসের বছর চারেকের ছেলের গলায় শাবল ঠেকিয়ে রেখেছিলেন পরিবারের সব পুরুষ সদস্যরা। সেই সঙ্গে তাঁরা চিৎকার করছিলেন। শুধু তাই নয়, নিজেদের মধ্যে মারামারি করছিলেন। কেউ বাড়িতে ঢুকতে গেলে ওই শিশুকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছিলেন। ভয়ে কেউ আর তাঁদের বাড়িতে যেতে পারিনি।” |
তাঁরা জানান, সোমবার সকালে ওই টুকু শিশুর উপরে অত্যাচার করছে। তা ছাড়া, ত্রিশূল, শাবল নিয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারি করছিলেন। পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে যাচ্ছে দেখে বাসিন্দারা কাঁকরতলা থানায় খবর দেন। পুলিশ এসে তাঁদের সিউড়ি সদর হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। তবে যাওয়ার পথে তাঁরা ফের উৎপাত করায় বেগ পেতে হয় পুলিশ ও গাড়ি চালকদের।
পুলিশ জানিয়েছে, বাচ্চাদের মধ্যে অসুস্থতা লক্ষ্য করা যায়নি। তবে মহিলাদের থেকে পুরুষদের মধ্যে অস্বাভাবিকতা বেশি লক্ষ্য করা গিয়েছে। তবে বাচ্চারা বর্তমানে আত্মীয়দের কাছেই আছে।
সোমবার সিউড়ি সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, অসুস্থদের বেডে হাত-পা বেঁধে শুইয়ে রাখা হয়েছে। তাঁদের দেখাশোনার জন্য জেলাশাসকের নির্দেশ মেনে তিন জন চিকিৎসককে নিয়ে একটি দল গঠিত হয়েছে। চিকিৎসক বিশ্বজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পুরুষদের মধ্যে আক্রমনাত্মক ভাব বেশি। তাই সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি দেখে পরবর্তী পদক্ষেপের ব্যাপারে ভাবা হবে।”
মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যাল জানিয়েছেন, এই ধরনের ঘটনাকে চিকিৎসা পরিভাষায় বলে ‘স্ট্রেস রিঅ্যাকশন’। এই পরিবারের মানসিক চাপ সহ্য করার ক্ষমতা স্বাভাবিকের তুলনায় কম বলে তাঁর অভিমত। তিনি বলেন, “সম্ভবত ওই পরিবারে এমন কিছু ঘটেছে, যার সমাধান নিয়ে তাঁরা বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনা চালাচ্ছেন। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি। এই সব ঘটনায় সাধারণত দেখা যায় যে, পরিবারের এমন কোনও সদস্য, যাঁর উপরে বাকিরা ভরসা করতেন, তাঁকে ভেঙে পড়তে দেখে বাকিদের মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।” |