উত্তরের চিঠি
পুজোর পর এমন অনাদর কেন
পুজোর পর বিগ্রহের দিকে কেউ ফিরে তাকায় না।
অনেক আনন্দ নিয়ে পুজো আসে। কিন্তু পুজো শেষে বিগ্রহগুলোকে দেখা যায় রাস্তা-ঘাটে, পুকুর কি নর্দমার আশেপাশে, আবর্জনার স্তূপে চূড়ান্ত অবহেলায় পড়ে থাকতে। বিগ্রহের প্রয়োজন পুজোর সময়। তার পর তাদের কোনও মূল্য নেই। হয়তো লক্ষ্মীকে বিবস্ত্র করে দেওয়া হল। সরস্বতীর মাথা-হাত-পা ভেঙে দেওয়া হল। চেহারায় হাস্যকর বিকৃতি ঘটান হল। রাখবার জায়গা নেই তো জলে বিসর্জন দিলেই হয়। না, তা করা যাবে না। সরস্বতীকে জলে ফেললে বিদ্যা বিসর্জন হয়ে যাবে! আবার বিশ্বকর্মাকে বিসর্জন দিয়ে কেউ কর্মক্ষমতা হারাতে চান না! তাই বিশ্বকর্মার স্থান হয় পুকুর পাড়ে। আর লক্ষ্মীকে তো বিসর্জন দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তা হলে ধন-সম্পদ সব চলে যাবে। তাই এক বছর পর আবর্জনায় বসে কাঁদতে হয় বিগত বছরের লক্ষ্মীদের।
বন্ধের কাছে হার
শিশুশিক্ষা নিয়ে জ্ঞানীগুণী মানুষদের ভাবনার বিরাম নেই। কী ভাবে এদের শিক্ষার অঙ্গনে আনা হবে, বিকেল চারটে অবধি ধরে রাখা হবে, মিড-ডে মিলের মেনু কী হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু ভাবনা আর বাচ্চাগুলো জল আর তেলের মতো। আলাদা আলাদা ভাসে, মেশে না। রাস্তা দিয়ে বাজনা যাচ্ছে, বাচ্চারা হাঁ করে দেখছে। কেউ বা হাত দু’টো পেছনে দিয়ে এক হাত দিয়ে অন্য হাতের কনুই ধরে আছে স্মার্ট ভঙ্গিতে। প্যান্ট হাঁটু অবধি ঝুলছে! শার্টে বোতাম নেই। কেউ বা হাত দু’টো মাথার ওপর তুলে নাচছে। এই দৃশ্য জলপাইগুড়ি মোহিতনগর এলাকার একটি প্রাইমারি স্কুলের। সাড়ে দশটা নাগাদ দিদিমণি এসে দেখবেন, বারান্দার টিনের চালের বাটাম ধরে ঝুলছে কেউ। তার পা ধরে নিচের দিকে টানছে আর কেউ। জাতীয় সড়কের গা ঘেঁষে প্রাইমারি স্কুল, কিন্তু পাঁচিল নেই। গেটে তালা নেই। পাশের রাস্তা দিয়ে ট্রাক যাচ্ছে। স্পিড একটু কম। একটি ছেলে ট্রাকের সামনের চাকার পাশে পাশে হামাগুড়ি দিয়ে এগোচ্ছে। দেখছে চাকাটা ঘোরে কী ভাবে? ড্রাইভার বাচ্চাটিকে দেখতে পাচ্ছে না। স্পিড বাড়ালেই পিছনের চাকাটি বাচ্চাটির ওপর দিয়ে চলে যাবে। কোনও রকমে দিদিমণি ওকে সরিয়ে আনলেন। ওরা ফাঁকা শানে বসে পড়ে, খায়, নিজেরাই নিজেদের থালা ধোয়, তার পর বারান্দায় এঁটো মাড়িয়ে ক্লাসে ঢুকে মেঝেতে বসে আবার পড়া করে। এই বাচ্চারা অত্যন্ত স্বাভাবিক। প্রাণশক্তিতে ভরপুর। ছয় থেকে চৌদ্দো এই বয়সটা একটা মানুষের সারা জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। যে আনন্দ নিয়ে এরা সকালবেলায় স্কুলে আসে, দিনের শেষে তা অন্তত দ্বিগুণ করে যেন ওরা ফিরতে পারে। চিন্তার বিষয়, এটা নিয়ে কেউ ভাবেই না। এ বছর প্রত্যেক বিদ্যালয়ে শিশুদের ইউনিফর্ম-এর জন্য ৪০০ টাকা করে দেওয়া হল। কিছু বাচ্চা টাকাটা পেল না। কারণ তারা জেনারেল। অথচ এদের কারও বাবা ভ্যানরিকশা চালান, মা বাড়ি বাড়ি কাজ করেন আবার কারও হয়তো বাবা নেই। কেন টাকাটা পেল না, সেটা ওরা বুঝতে পারছে না। আর যদি বোঝেও, এই নতুন প্রজন্মের অন্তরে ভেদাভেদ সৃষ্টি হবে স্বামীজির স্বপ্নের ভারতবর্ষে।
প্রাথমিক শিক্ষার উন্নতিকল্পে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা আসছে। স্কুলের সময় বাড়িয়ে, ছুটি কমিয়ে উন্নতির চেষ্টা চলছে। কিন্তু ভুললে চলবে না যে, মূল উদ্দেশ্য ওদের শিক্ষিত হতে সাহায্য করা। তার জন্য কিছু মানবিক গুণ বিকাশের সহায়ক পরিবেশ দরকার। যেমন স্কুলের ভেতরে গাছ থাকবে। স্কুলে পাঁচিল থাকবে। ভদ্র ভাবে বসে খাওয়ার জন্য একটা ঘর থাকবে। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে সাহায্য করবার জন্য এক জন মাসি থাকবেন। ক্লাসে বসার বেঞ্চ থাকবে। কেন্দ্রীয় নতুন শিক্ষা আইন শিশুদের কতটা কাজে আসে সেটাই দেখার। বিশ্বাস করা যায় যে, এর পরের উন্নতিটা ওরা নিজেরাই করে নিতে পারবে।
দেশে বিদেশি নোট
ময়নাগুড়ি থেকে শুরু করে ডুয়ার্সের যতই ভেতরে যাওয়া যায়, বড় বড় ব্যবসায়ীদের কাছে মিলবে পাঁচশো-হাজার টাকার ভুটানি নোট। দেশীয় নোটের সিকি ভাগ ও ওদের কাছে নেই। দেশের মাটিতে থেকে বিদেশি নোট এটা বিরাট লজ্জ্বার ব্যাপার। ভোট দিয়েই আমাদের কর্তব্য শেষ। প্রতিবাদ করার কোনও অধিকার নেই। অবশ্য মৌখিক প্রতিবাদ করলে নানা ভাবে হেনস্তা হতে হয়। প্রশাসন ও আবগারী দফতর কি শুধু বাংলার নীতি বাক্য অনুসরণ করে চলবে? আমাদের চার পাশে তো আরও প্রতিবেশী রাজ্য রয়েছে। অন্য রাজ্যে তো এ রকম বিদেশী নোটের ব্যবহার নেই। আর যদি বিদেশি নোটেই কাজ করতে হয়, তবে ভারতীয় নোটের কী দরকার? দেশীয় নোটের কী এতই অভাব? তা হলে এত দেশীয় নোট যাচ্ছে কোথায়?
এই বিভাগে চিঠি পাঠান সম্পূর্ণ নাম ও ঠিকানা উল্লেখ করে।
‘উত্তরের চিঠি’
এ বি পি প্রাঃ লিঃ,
১৩৬/৮৯ চার্চ রোড,
শিলিগুড়ি ৭৩৪৪০১



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.