দুই ডাক্তার বদলি, বাড়ছে ৮০ শয্যা
মালদহের শিশু ওয়ার্ডে সিঁদুরে মেঘ দেখছে টাস্ক ফোর্স
রুগ্ণ নবজাতকদের পরিচর্যায় সদ্য চালু বিশেষ ইউনিটের (সিক নিউবর্ন কেয়ার ইউনিট, সংক্ষেপে এসএনসিইউ) ব্যবস্থাপনা দেখে তাঁরা মোটামুটি সন্তুষ্ট। কিন্তু মালদহ জেলা হাসপাতালের শিশু বিভাগের (পেডিয়্যাট্রিক ইউনিট) বাকি অংশের পরিষেবার মান নিয়ে অতটা নিঃসংশয় হতে পারছে না স্বাস্থ্য দফতরের টাস্ক ফোর্স। বরং ওই হাসপাতালে সাম্প্রতিক শিশুমৃত্যুর ঘটনার পরে বিভিন্ন রোগীর পরিজনের অভিযোগ যাচাই করে ফোর্সের সদস্যেরা স্বাস্থ্য-কর্তাদের জানিয়েছেন, অবিলম্বে সতর্ক না-হলে এসএনসিইউয়ের পরে শিশু বিভাগের অন্যত্রও যে কোনও দিন বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে।
স্বাস্থ্য-সূত্রের খবর: চিকিৎসকদের নিয়মিত রাউন্ড না-দেওয়া এবং দরকারের সময়ে ওয়ার্ডে হাজির না-থাকা নিয়ে টাস্ক ফোর্সের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন মালদহ হাসপাতালে ভর্তি বেশ কিছু শিশুর বাড়ির লোক। ওয়ার্ডে ঘুরে ও ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলে ফোর্সের মনে হয়েছে, অভিযোগগুলো অনেকাংশেই সত্যি। টাস্ক ফোর্সের এক সদস্যের কথায়, “মালদহের পেডিয়্যাট্রিক ইউনিটে ডাক্তারদের মধ্যে সমন্বয় একটা বড় সমস্যা। সরকার পরিকাঠামো উন্নতির চেষ্টা করে যাচ্ছে। বেড বাড়ছে, ওয়ার্মার বাড়ছে। কিন্তু ডাক্তারেরা সময়মতো হাসপাতালে না-এলে কিছুই লাভ না।”
মালদহ হাসপাতালে শিশু ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র। মনোজ মুখোপাধ্যায়
এবং এরই প্রেক্ষিতে মালদহ হাসপাতালের দুই চিকিৎসককে বদলির সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। পেডিয়্যাট্রিকের চিকিৎসকদের অবশ্য দাবি: বিপুল চাপের মধ্যেও তাঁরা যথেষ্ট পরিষেবা দেন। ডাক্তারের সংখ্যা না-বাড়লে পরিষেবার মান বাড়ানো সম্ভব নয় বলে ওঁরা মনে করছেন। যার উত্তরে স্বাস্থ্য-অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর মন্তব্য, “মানছি, রোগীর চাপ অত্যধিক। কিন্তু পরিষেবা নিয়ে অভিযোগকেও আমরা কম গুরুত্ব দিচ্ছি না।”
ওই চিকিৎসকদের প্রতি স্বাস্থ্য-কর্তাদের নির্দেশ: আরও ডাক্তার না-আসা পর্যন্ত প্রয়োজনে বাড়তি কাজ করতে হবে। স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “কাজে ফাঁকি দিয়ে প্রাইভেট প্র্যাক্টিসে বেশি সময় দেওয়া চলবে না। পরিষেবার মানের সঙ্গে সমঝোতা বরদাস্ত করব না।”
মালদহ হাসপাতালে পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ অবশ্য এই প্রথম নয়। এর আগে ওখানে হেল্থ সার্ভিস ও মেডিক্যাল এডুকেশন সার্ভিসের ডাক্তারদের মধ্যে চাপান-উতোর এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, খাস স্বাস্থ্যভবনকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। বস্তুত শিশু বিভাগে সেই সমস্যা এখনও মেটেনি বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর। এটা বাদ দিলে শিশু বিভাগের চিকিৎসা পরিকাঠামোর সার্বিক ছবিটা কেমন?
মালদহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন: এসএনসিইউয়ের দশটা ধরে গোটা শিশু ওয়ার্ডে ১০০টি শয্যা। অথচ সব সময়েই ভর্তি থাকে অন্তত আড়াইশো রোগী, অর্থাৎ আড়াইগুণ। এ দিকে এসএনসিইউ ছাড়া বাকি ওয়ার্ডের জন্য ডাক্তার সাকুল্যে ১১ জন। ক’দিন আগে এসএনসিইউয়ে বাড়তি দু’জন এলেও এঁদের সংখ্যা বাড়েনি। চিকিৎসকদের মতে, মাত্র এই ক’জনকে দিয়ে রোজ তিন শিফ্টে কাজ চালানো অত্যন্ত দুরূহ। এক জনের কথায়, “মালদহ তো আছেই। দুই দিনাজপুর, মুর্শিদাবাদ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, এমনকী বাংলাদেশ থেকেও রোগী আসছে! আড়াইশো বাচ্চা, তাদের মা, এমনকী বাবারাও ওয়ার্ডে বসে থাকছেন। এক জন রক্ষী, কাউকেই বার করতে পারছেন না। ফলে যখন-তখন সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। আমরাই ওয়ার্ডে ঢুকতে ভয় পাচ্ছি।”
মালদহ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, “মুমূর্ষু রোগীর বাড়ির লোকেরা বেডের পাশে সব সময়ে ডাক্তারকে চান। বাস্তবে যা অসম্ভব। তবে এক জন ডাক্তারের কাছে প্রত্যাশা থাকতেই পারে যে, অসুস্থ শিশুর মা-বাবার সঙ্গে তিনি সহানুভূতি নিয়ে কথা বলবেন। এই মানবিক মুখটা দেখিয়ে তাঁদের ক্ষোভ প্রশমিত করা যায়। জানি না, রোগীর চাপে এটুকু করাও ডাক্তারদের পক্ষে কতটা সম্ভব।”
বস্তুত চিকিৎসকদের এই ‘অসহায়তা’র কথাই মালদহ মেডিক্যালের কর্তারা জানিয়ে গিয়েছেন স্বাস্থ্যভবনকে। তাঁদের বক্তব্য: মালদহ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে মৃত্যু গত বছরের তুলনায় দেড় গুণ যেমন বেড়েছে, তেমন রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে আড়াই গুণ। সেই নিরিখে সামগ্রিক ভাবে মৃত্যু-হার কমেছে। তাই চিকিৎসকদের কোনও ভাবেই দোষী করা যায় না বলে ওঁদের দাবি।
সমস্যার সুরাহায় সরকারের পরিকল্পনা ঠিক কী?
চাপ সামলাতে ওখানকার নবজাতক বিভাগে ৮০টি শয্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। অধিকর্তা জানান, পূর্ত দফতরকে দিয়ে কাজ করানোটা সময়সাপেক্ষ বলে মেডিক্যাল কর্পোরেশনের সাহায্যে ‘প্রি-ফ্যাব্রিকেটেড স্ট্রাকচার’ বসিয়ে দিন কয়েকের মধ্যে বাড়তি শয্যার ব্যবস্থা হবে। শিশু বিভাগে বাড়তি চিকিৎসকের ব্যবস্থা কী ভাবে করা যায়, সে নিয়েও তাঁদের আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন বিশ্বরঞ্জনবাবু।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.