রাজ্যে তৃণমূল-কংগ্রেস জোট সরকারের বয়স আট মাস হয়ে যাওয়ার পরেও সিপিএমের প্রতি মানুষের আস্থা ফেরেনি বলে মন্তব্য করলেন বর্ষীয়ান কমিউনিস্ট নেতা তথা পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অশোক মিত্র। সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্মেলন উপলক্ষে রবিবার বরানগরের রবীন্দ্র ভবনে আয়োজিত এক সেমিনারে আমন্ত্রিত প্রধান বক্তা অশোকবাবু বলেন, “মানুষ বুঝতে পারছেন, তাঁরা খাল কেটে কুমির এনেছেন। কিন্তু যে কারণে তাঁরা খাল কেটেছিলেন, তা এখনও অপসারিত হয়নি। সেই পুরনো মানুষগুলির উপরে জনতার আস্থা ফিরে আসেনি।” সাম্প্রতিক অতীতে অশোকবাবুকে সব সময়েই সিপিএম তথা পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের প্রতি ‘সমালোচকের’ ভূমিকায় দেখা গিয়েছে। এ দিন অশোকবাবু ওই মন্তব্য করেন সিপিএমের মঞ্চে। তা শুনে শ্রোতারা করতালিও দেন। যা সিপিএমেরই একাংশের মতে যথেষ্ট ‘তাৎপর্যপূর্ণ’।
অশোকবাবু মনে করেন, পশ্চিমবঙ্গে ‘পুঁজিবাদী শোষণ’-এর পাশাপাশি বাড়তি সমস্যা হল, একটি ‘স্বৈরতন্ত্রী যাত্রাপালা’। তাঁর এই কটাক্ষ যে রাজ্যের প্রধান শাসকদল তৃণমূলের প্রতি, তা স্পষ্ট। তবে এই পরিস্থিতির জন্য সাম্প্রতিক অতীতের মতো এ দিনও সিপিএমকেই দায়ী করেছেন তিনি। তাঁর মতে, এই পরিস্থিতি থেকে বেরনোর ‘সোজা’ রাস্তা নেই। অশোকবাবুর কথায়, “এই স্বৈরতন্ত্রী যাত্রাপালার জনক আমরাই। আমরাই একে সুযোগ করে দিয়েছি। আমরা এমন কতগুলি ভুল করেছি যে, ক্ষণিকের জন্য হলেও ‘জনতার মুখরিত সখ্য’ থেকে সরে গিয়েছি।” অশোকবাবু মূলত সিপিএমের দু’ ধরনের ‘ভুল’ চিহ্নিত করেছেন। এক, সিপিএমের একাংশ ভাবতে শুরু করেছিল, তারাই জনতার হয়ে চিন্তা এবং সিদ্ধান্ত করার অধিকারী। আর জনতাও তা মানতে বাধ্য। দুই, দীর্ঘ দিন শৃঙ্খলাপরায়ণ কমিউনিস্ট সৈনিকের জীবন যাপন করার পরে সিপিএমের একাংশ সুখী, বিলাসী জীবনের মায়ায় পড়ে গিয়েছিল। তাদের ‘শ্রেণিবিভ্রম’ ঘটেছিল। কবে এই ‘বিভ্রম’ কাটবে, তার জন্য মানুষ বসে থাকবেন না জানিয়ে অশোকবাবুর পরামর্শ, “আমরা মানুষের উপযুক্ত হতে পারি কিনা, তা বুঝতে আমাদের পরীক্ষা দিতে হবে।” |