শিক্ষক নিগ্রহ বন্ধে কড়া হোক রাজ্য, চান প্রণব
রাজ্যে শিক্ষক নিগ্রহের ঘটনা নিয়ে এ বার মুখ খুললেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী তথা বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা মোকাবিলায় রাজ্য প্রশাসনের ‘কঠোর’ ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষেও সওয়াল করেছেন তিনি। শিক্ষায় বিশৃঙ্খলা সামাল দিতে রাজ্য প্রশাসনের ‘ব্যর্থতা’র দিকেই প্রকারান্তরে প্রণববাবু ইঙ্গিত করেছেন বলে প্রশাসনিক মহলের একাংশের ব্যাখ্যা। বহরমপুরে রবিবার এই সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বলেন, “কলেজে শিক্ষক নিগ্রহের ঘটনা অবাঞ্ছিত। কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে মনোমালিন্য হতে পারে। কিন্তু ওই ঘটনার জেরে শিক্ষক নিগৃহীত হবেন, তা কাঙিক্ষত নয়। এ ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরি। কলেজের আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে প্রশাসনের উচিত কঠোর ভাবে দমন করা।” শাসক জোটে টানাপাড়েনের আবহে প্রণববাবুর এই মন্তব্য যথেষ্ট ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই রাজনৈতিক শিবিরের অভিমত। তা-ও আবার প্রণববাবু ওই মন্তব্য করেছেন অধীর চৌধুরীর জেলা মুর্শিদাবাদে গিয়ে। প্রণববাবুর লোকসভা কেন্দ্রও অবশ্য সেই জেলাতেই। বস্তুত, প্রণববাবু এ দিন যে কথা বলেছেন, কলেজে শিক্ষক নিগ্রহের প্রেক্ষিতে প্রায় একই বক্তব্য ছিল রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনেরও।
রাজ্যপালের সেই বক্তব্য এবং শিক্ষামন্ত্রীকে তাঁর চিঠিকে ঘিরে রাজভবনের সঙ্গে মহাকরণের সংঘাতের বাতাবরণ তৈরি হয়েছিল। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রণববাবুর বক্তব্যে রাজ্য সরকার এবং প্রধান শাসক দল তৃণমূল শিবিরের কী প্রতিক্রিয়া হয়, তা-ই এখন দেখার। প্রসঙ্গত, প্রণববাবু নিজেও কলেজ শিক্ষকতা দিয়েই তাঁর কর্মজীবন শুরু করেছিলেন।
প্রণববাবুর বক্তব্যের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এ দিন অবশ্য পাল্টা মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, “কলেজে কলেজে যে সন্ত্রাস এবং বিশৃঙ্খলা দেখা যাচ্ছে, তা ঠেকানোর দায়িত্ব প্রশাসনের আইন-শৃঙ্খলা বিভাগের। এই ব্যাপারে আমি কোনও কথা বলব না। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।” প্রসঙ্গত, ‘আইন-শৃঙ্খলা বিভাগ’ হিসেবে পুলিশ দফতরটি রয়েছে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতেই।
ঘটনাচক্রে, এ দিনই সিপিএমের হুগলি জেলা সম্মেলন উপলক্ষে রিষড়ায় সমাবেশে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেছেন, “আমাদের আমলে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে কী পরিস্থিতি ছিল, সকলেই জানেন।
ওরা এসে সব আইন বাতিল করে দিল। কী ভুল হচ্ছিল? কী অন্যায় হচ্ছিল? অসম্মান করলেন বিশ্ববিদ্যালয়কে! কে উপাচার্য হবেন, তা বিধায়ক-সাংসদেরা ঠিক করে দেবেন? নদিয়া, রায়গঞ্জের কলেজে কী হল, তা সকলেই দেখলেন!” নিজের দলের ছাত্র সংগঠনের প্রতি বুদ্ধবাবুর বার্তা, “আমরা ছাত্রদের বলে দিয়েছি, কোনও পরিস্থিতিতেই অধ্যক্ষের ঘরে গিয়ে নাচানাচি করবে না! এটা আমাদের পথ নয়। ওরা তা মেনে নিয়েছে।” তৃণমূলের নাম না-করেই এই সূত্রে বুদ্ধবাবুর বক্তব্য, “ওরা কলেজে নির্বাচন হতে দেবে না।
ইউনিয়ন জবরদখল করবে। দরকারে অধ্যক্ষকে মারবে!”
প্রণববাবুর বক্তব্য জোটে প্রভাব ফেলবে কি না, তা নিয়ে কৌতূহল সৃষ্টি হলেও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী কিন্তু কংগ্রেস ও তৃণমূলের ‘সংঘাত’ মেটাতে আলোচনার কথাই বলেছেন। এই বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে প্রণববাবুর সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, “মতবিরোধ থাকতেই পারে। কিন্তু তা বসে আলোচনা করে মিটিয়ে নেওয়া উচিত।” এর আগে দলীয় সভায় দাঁড়িয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনে মুর্শিদাবাদ জেলায় কংগ্রেস একাই লড়বে বলে অধীরবাবু জানান। প্রণববাবু অবশ্য তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, “এটা জেলার ব্যাপার। আমি কোনও মন্তব্য করব না।”
কলকাতায় প্রণববাবুর বাড়িতে রবিবার রাতেই দেখা করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য। বহরমপুরের বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তীকে মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই কংগ্রেস হাইকম্যান্ড ‘অনুমতি’ দিয়েছেন। তাঁর জায়গায় কংগ্রেস অন্য কাউকে মন্ত্রিসভায় পাঠাবে কি না, তা নিয়েই প্রণববাবুর সঙ্গে আলোচনা করেন প্রদীপবাবু। তবে কংগ্রেস সূত্রের খবর, বিষয়টি নিয়ে তাঁরা কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। প্রণববাবু ও প্রদীপবাবু আলাদা আলাদা ভাবে এই ব্যাপারে দিল্লির সঙ্গে কথা বলবেন বলে কংগ্রেস সূত্রের খবর।
প্রণব-প্রদীপের প্রায় আধ ঘণ্টার বৈঠকে পঞ্চায়েত ভোটের আগে কংগ্রেসের সংগঠন মজবুত করার কথা হয়েছে। ‘জনস্বার্থে’ কেন্দ্রীয় সরকারের চালু প্রকল্পগুলি নিয়ে অবিলম্বে প্রদীপবাবুদের জেলায় জেলায় প্রচারের ‘পরামর্শ’ দিয়েছেন প্রণববাবু। বিশেষত, পঞ্চায়েতকেন্দ্রিক ও গ্রামের মানুষের উন্নয়নে কেন্দ্রের ‘জনমুখী প্রকল্প’গুলি নিয়ে জনসচেতনা বৃদ্ধি করতে প্রদীপবাবুদের কর্মসূচি নেওয়ার ‘নির্দেশ’ দিয়েছেন প্রণববাবু।
অন্য দিকে, মুর্শিদাবাদ সীমান্তে বাংলাদেশি এক গরু পাচারকারীর উপর বিএসএফের জওয়ানদের অত্যাচার নিয়ে প্রশ্নের জবাবে প্রণববাবু বলেছেন, “আগেও বলেছি, গোটা বিষয়টি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতর গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। এ ব্যাপারে নতুন করে কিছু বলার নেই।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.