সম্মেলনকে ঘিরে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল প্রকাশ্যে এল মেদিনীপুর শহরে।
রবিবার বিদ্যাসাগর হলে তৃণমূলের মেদিনীপুর শহর কমিটির সম্মেলন ছিল। সেখানে পুরপ্রধানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি অভিযোগে সাংসদ তথা তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর সামনেই বিক্ষোভ দেখায় একদল যুবক। তাঁদের অভিযোগ, শহরে সম্মেলন হল। অথচ, এই সম্মেলনে আমন্ত্রণই জানানো হয়নি মেদিনীপুরের পুরপ্রধান প্রণব বসুকে! বিক্ষোভ থেকে ‘ক্ষমতাসীন’ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে স্লোগান ওঠে। এমনকী হাতাহাতিও হয়। তবে, এই বিক্ষোভকে আমলই দেননি রাজ্য সভাপতি। বরং কর্মীদের প্রতি তাঁর পরামর্শ, “উপদলীয় কাজকর্ম যাঁরা করছেন, তাঁদের উপেক্ষা করুন। যে যত বড়ই নেতা হন না-কেন, দলবিরোধী কাজ করলে কাউকে বরদাস্ত করা হবে না।”
গোষ্ঠীকোন্দলের কথা অবশ্য প্রকাশ্যে স্বীকার করেননি রাজ্য সভাপতি। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মেদিনীপুরের বিধায়ক মৃগেন মাইতি, দাসপুরের বিধায়ক অজিত ভুঁইয়া, তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়, কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষ প্রমুখ। রাজ্য সভাপতির উপস্থিতিতে দলীয় কোন্দল প্রকাশ্যে এসে পড়ায় এঁরা সকলেই বিড়ম্বনায় পড়েন। পরিস্থিতি দেখে বক্তব্য রাখার পরই সম্মেলন-স্থল ছাড়েন সুব্রতবাবু। |
শহরে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলের খবর অবশ্য নতুন নয়। পুরপ্রধান প্রণব বসুর অনুগামীদের সঙ্গে শহর সভাপতি সুকুমার পড়্যার অনুগামীদের ‘বিরোধ’ আগে থেকেই রয়েছে। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সেই ‘বিরোধ’ প্রকাশ্যে এসেছে মাত্র। এ দিন বিক্ষোভকারী’দের দাবি উড়িয়ে তৃণমূলের শহর সভাপতি সুকুমার পড়্যা বলেন, “সম্মেলনে পুরপ্রধানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কেন তিনি এলেন না, তা আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়।” এই নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি প্রণববাবু। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু, তাতে পুরপ্রধানের নাম ছিল না। অসন্তোষের সূত্রপাত তা থেকেই। আমন্ত্রণপত্রে কেন পুরপ্রধানের নাম লেখা হল না? শহর সভাপতি বলেন, “শুধু পুরপ্রধান নয়, ওখানে কোনও কাউন্সিলরেরই নাম লেখা নেই। এটা দলের সম্মেলন।” সম্মেলনে পুরপ্রধান উপস্থিত না-থাকলেও তৃণমূলের বাকি ৮ জন কাউন্সিলরই ছিলেন। এঁদের একাংশ আবার প্রণববাবুর অনুগামী বলে পরিচিত।
পরিস্থিতি দেখে রাজ্য সভাপতি এ দিন কর্মীদের উদ্দেশে ‘কড়া’ বার্তা দেন। বলেন, “জল নষ্ট হলে মাছ বাঁচবে না। তাই মাছ বাঁচাতে হলে জল পরিষ্কার রাখতে হবে। আমরা যাঁরা দলের কর্মী তাঁদের সকলকেই পরিষ্কার থাকতে হবে।” তাঁর কথায়, “দলবিরোধী কাজের অভিযোগ এলেই সংশ্লিষ্ট নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে। কিছু লোক উপদলীয় কাজকর্ম করছেন। আমরা তাঁদের নজরে রেখেছি। তৃণমূলের পতাকা নিয়ে কেউই অস্বচ্ছ ভাবে চলতে পারে না।”
পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করার নির্দেশ দিয়ে সুব্রতবাবু বলেন, “আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে এ জেলায় সিপিএমকে ছন্নছাড়া করে পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ দখল করতে হবে।” রাজ্য সভাপতি আরও বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে বাংলা নিরাপদ। কিছু বিরোধী, কিছু সহযোগী রাজনৈতিক দল মাঝেমধ্যে ফোঁস করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছেন। আমরা কী করেছি, তার ভিত্তিতেই মানুষ ভোট দিক। শান্তির পথেই চলতে চায় তৃণমূল।” |