ফের বিতর্ক এবং সেই সলমন রুশদি।
জয়পুর সাহিত্য উৎসবের তৃতীয় দিনেও রুশদিকে নিয়ে বিতর্ক জারি থাকল। ওপরা উইনফ্রে যতই ‘শো স্টপার’ হোন না কেন, ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’-এর লেখকের অনুপস্থিতি রোজই সব কিছুকে ছাপিয়ে যাচ্ছিল, আজ আরও এক বার সেটাই হল।
টুইটারে সরাসরি আজ রাজস্থান পুলিশকে এক হাত নিয়েছেন রুশদি। আর জানিয়েছেন, সাহিত্য উৎসবে তাঁর না আসার পিছনে মূলত তাদেরই একাংশের ‘হাত’ রয়েছে। কারণ রুশদি মনে করেন, মুম্বইয়ের অন্ধকার জগতের ভাড়াটে খুনিদের ‘খবর’ প্রচার আসলে রাজস্থান পুলিশেরই মস্তিষ্কপ্রসূত। তিনি যাতে উৎসবে না আসেন, তাই এই ‘ব্যবস্থা’। এই বিষয়ে টুইটারে একটি লিঙ্কও পোস্ট
করেছেন তিনি।
“রাজস্থান পুলিশ একটা গল্প তৈরি করেছিল রুশদিকে দূরে রাখতে। আমি জানতে পেরেছি, আর বিশ্বাস করি আমাকে মিথ্যে বলা হয়েছিল। খুব রাগ হচ্ছে।” টুইট করেছেন রুশদি। উচ্চতর কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই যে এমনটা হয়েছে, সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন রুশদি। লিখেছেন, “জানি না কে এমন নির্দেশ দিয়েছে, নিশ্চয়ই সেই পুলিশ যারা হরি, অমিতাভ, জিৎ আর রুচিরকে (লেখক) গ্রেফতার করতে চায়। বিরক্তিকর।” আসলে এই চার জন লেখকের বিরুদ্ধেও পুলিশে অভিযোগ জমা পড়েছে। রুশদির নিষিদ্ধ বই ‘স্যাটানিক ভার্সেস’-এর অংশ পাঠ করার জন্য। সব মিলিয়ে রুশদি আজ ক্ষোভটা উগরে দিয়েছেন রাজস্থান পুলিশেরই বিরুদ্ধে।
তবে রুশদির সব অভিযোগ নস্যাৎ করে দিয়েছে রাজস্থান সরকার। সরকারেরই এক পদস্থ কর্তা বলেছেন, “আইবি-র থেকে এই তথ্য এসেছিল। যার ভিত্তিতে উৎসবের উদ্যোক্তারা রুশদিকে না আসার পরামর্শ দিয়েছিলেন। রাজ্য প্রশাসন কোনও রকম মশলা মেশায়নি সেই খবরে। টুইটারের মাধ্যমেই আমরা জানতে পারি রাজস্থান পুলিশের বিরুদ্ধে এত বড় অভিযোগ এনেছেন লেখক। এ সব মিথ্যে।” ওই কর্তার সুরেই সুর মিলিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত। বলেছেন, “কারও জীবন সংশয় রয়েছে, এমন খবর পেলে তাঁর সুরক্ষার সব রকমের বন্দোবস্ত করা আমাদের কর্তব্য।”
এখানেই শেষ নয়। শুক্রবার সন্ধেবেলায় যে চার জন
লেখক ‘স্যাটানিক ভার্সেস’ থেকে পাঠ করেছিলেন, তাঁদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে অশোকনগর থানায় অভিযোগ জমা পড়েছে। ওই থানার অফিসার এ মহম্মদ আজ জানিয়েছেন, গত কাল হরি কুঞ্জরু, অমিতাভ কুমার, জিৎ থাইল আর রুচির জোশীর বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে। তবে এফআইআর হয়নি। এ মহম্মদ আরও জানাচ্ছেন, অশোক কুমার নামে ওই অভিযোগকারী চান, এই চার জনের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হোক। |
“আমি বিশ্বাস করি আমাকে মিথ্যে বলা হয়েছিল। খুব রাগ হচ্ছে।” —সলমন রুশদি |
|
এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরে নাকি উদ্যোক্তাদের একাংশ ওই চার লেখকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অভিযোগ, তাঁরা ওই চার লেখককে উৎসব ছেড়ে চলে যেতেও বাধ্য করেছেন। যদিও উদ্যোক্তাদের অন্যতম নমিতা গোখেল জানিয়েছেন, এই অভিযোগ একেবারেই ভিত্তিহীন। নমিতার কথায়, “তাঁদের যেতে বলা হয়নি।” উৎসবে উপস্থিত লেখকদের একাংশ সেটা মানতে নারাজ। এ বিষয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন প্রকাশকদের একটা অংশও। এস আনন্দ নামে এক প্রকাশক উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে আজ তোপ দেগেছেন। নমিতার সঙ্গে বাদানুবাদেও জড়িয়ে পড়েন আনন্দ। নমিতারা যতই বিষয়টি অস্বীকার করুন, একটা সূত্র কিন্তু জানাচ্ছে আগামী কাল সেশন থাকা সত্ত্বেও হরি কুঞ্জরু জয়পুর ছেড়ে চলে গিয়েছেন। তবে সেই খবরের সত্যতা যাচাই করার মতো কাউকে পাওয়া যায়নি।
এই সব কিছুর সঙ্গে আবার আছেন চেতন ভগত। রুশদির সমালোচনা করার সুযোগ আজও ছাড়েননি তিনি। রুশদি বিতর্ক নিয়ে আজ তাঁকে কিছু প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি বলেন, “রুশদির অন্যান্য লেখার খাতিরে তাঁকে অবশ্যই নায়ক বলা যায়। কিন্তু কারও ভগবানকে আঘাত করে কিছু লেখাটাকে আমার নায়কের কাজ বলে মনে হয় না। এটা ভারতবর্ষ। আপনি এখানে কারও ভাবাবেগে আঘাত করতে পারেন না।” ‘ফাইভ পয়েন্ট সামওয়ান’-এর লেখক যদিও তার সঙ্গে এ-ও বললেন, “আমি সামান্য লেখক। ওঁর সঙ্গে আমার তুলনাই চলে না। উনি যে বছর বুকার জিতেছেন, সে বছর আমি জন্মেছি।” |