জল ছিল অঢেল, তবু বস্তি পুড়ে ছাই বাইপাসে
সামনেই খাল। পিছনেও বিশাল জলাশয়। তা সত্ত্বেও বিধ্বংসী আগুনের গ্রাস থেকে কালিকাপুরে মন্দিরপাড়ার তিন নম্বর বস্তিকে বাঁচানো গেল না। উত্তুরে হাওয়ার দাপটে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ায় ছাই হয়ে গেল ওই বস্তির অন্তত ১২০টি ঝুপড়ি।
ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের ধারের ওই বস্তিতে আগুন লাগে রবিবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ। দমকলের ১৫টি ইঞ্জিন যায়। ঘণ্টা দেড়েকের চেষ্টায় তারা আগুন নিয়ন্ত্রণ করলেও তত ক্ষণে ছাই হয়ে গিয়েছে শ’খানেকের বেশি ঝুপড়ি। অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন কয়েক জন বাসিন্দাও। অগ্নিকাণ্ডের জেরে বাইপাসের ওই এলাকায় যান নিয়ন্ত্রণ করে ট্রাফিক পুলিশ। যানজটে কিছু ক্ষণের জন্য থমকে যায় ওই ব্যস্ত সড়ক।
দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা মন্ত্রী জাভেদ খান এবং পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম ছাড়াও রাত সওয়া ৯টা নাগাদ ঘটনাস্থলে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজের গায়ের চাদরটি জড়িয়ে দেন এক দমকলকর্মীর গায়ে। দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। অনেক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর বইপত্রও পুড়ে গিয়েছে। তাদের বই দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষায় বসার ব্যবস্থা করারও নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
লেলিহান জ্বলছে কালিকাপুরে মন্দিরপাড়ার তিন নম্বর বস্তি।
রবিবার কলকাতায় জ্যোতির্ময় সমাজদারের তোলা ছবি।
মমতা দুর্গতদের আশ্বাস দেন, “এটা মন্ত্রী জাভেদের এলাকা। ও-ই আপনাদের জামাকাপড়ের ব্যবস্থা করবে। আর বইয়ের ব্যাপারটা দেখবে ফিরহাদ। ঘর তৈরি করে দেবে পুরসভা। এখানেই সরকার ফের সব তৈরি করে দেবে। আপনাদের চিন্তা করতে হবে না।” দমকলমন্ত্রী জানান, বস্তির লাগোয়া একটি স্কুলে দুর্গতদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা হচ্ছে। কম্বল, ত্রিপল এবং খাদ্যেরও ব্যবস্থা করা হবে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, বাইপাস সংলগ্ন খালের পাশেই জেলেবস্তি নামে পরিচিত ওই এলাকায় প্রায় ১৫০টি পরিবারের বাস। তারই একটি ঝুপড়িতে আগুন লাগে। দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশে। তীব্র আতঙ্ক ছড়ায় গোটা এলাকায়। ঝুপড়ির বহু রান্নাঘরে একের পর এক গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে আগুন ভয়াল হয়ে উঠতে থাকে। প্রাণ বাঁচাতে বাইপাসে জড়ো হন কয়েকশো বাসিন্দা। কান্নায় ভেঙে পড়েন মহিলা ও শিশুরা। বস্তির পিছন দিকে একটি ঝিল রয়েছে। বাসিন্দারা খাল ও ঝিল থেকে জল তুলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতে বিশেষ কাজ হয়নি। তার পরেই দমকলে খবর দেওয়া হয়। বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় গোটা এলাকায়।
ওই বস্তির সামনেই তেলেভাজার দোকান পারুল মণ্ডল নামে এক মহিলার। তিনি বলেন, “সওয়া ৬টা নাগাদ হইচই শুনে দোকানের বাইরে এসে দেখি, বস্তির কয়েকটা ঘরে আগুন লেগেছে। প্রচণ্ড হাওয়ায় আগুন হুহু করে ছড়াতে থাকে। ভয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিলাম। হাতের কাছে যা ছিল, সব নিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে এলাম।” উত্তম দত্ত নামে বস্তির এক বাসিন্দা বলেন, “একটা ঘর থেকেই আগুন ছড়িয়েছিল। সকলেই যতটা পারে, নিজের জিনিস নিয়ে পালানোর চেষ্টা করছিল।”
জ্বলছে কালিকাপুরের বস্তি। ছবি স্টার আনন্দের সৌজন্যে
আগুনের কবল থেকে পরিজন, পড়শিদের বাঁচাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হন কয়েক জন যুবক। তাঁদেরই এক জন, শ্যামল মল্লিক বলেন, “বাচ্চাদের বাঁচানোর জন্য আগুনের ভিতর দিয়েই ছুটছিলাম। হঠাৎ একটা ঘরের চালা জ্বলতে জ্বলতে পড়ে গেল আমার উপরে। মুখের অনেকটা পুড়ে গেল।” আগুনের কবল থেকে লেখাপড়ার বই বাঁচাতে না-পেরে কান্না জুড়ে দেয় অনেক পড়ুয়াই। তাদের মধ্যে ছিল এ বারের কিছু মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীও।
এলাকার বাসিন্দারা জানান, আগুন লাগার পরেই আশপাশের বস্তির বাসিন্দারা ছুটে আসেন। আগুন যাতে আর ছড়িয়ে পড়তে না-পারে, সেই জন্য ওই বস্তির দু’তিনটে বাড়ি ভেঙে দেন তাঁরা। কিন্তু তাতে আগুনের দাপট ঠেকানো যায়নি। পরিস্থিতি সামলাতে আসে পূর্ব যাদবপুর, তিলজলা থানার পুলিশও।
জল থাকা সত্ত্বেও বস্তি বাঁচানো গেল না কেন?
পুড়ে গিয়েছে সর্বস্ব। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য
দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, বাইপাস থেকে ওই বস্তিতে যাওয়ার রাস্তা সঙ্কীর্ণ। তাই বস্তির কাছাকাছি পৌঁছতে সমস্যা হচ্ছিল দমকলের ইঞ্জিনের। স্থানীয় যুবকেরাই টিন ও বেড়া ভেঙে দমকলকে রাস্তা করে দেন। কিন্তু তত ক্ষণে ওই বস্তির অধিকাংশ ঘরই পুড়ে গিয়েছে। আগুন যাতে আর ছড়াতে না-পারে, সেই চেষ্টাই চালিয়ে যান দমকলকর্মীরা।
আগুন লাগল কী ভাবে? দমকলমন্ত্রী জাভেদ ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে জানান, আগুন লাগার কারণ জানতে তদন্ত হবে। সেই সঙ্গেই তিনি বলেন, “প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, কোনও ঝুপড়িতে রান্নার সময়েই আগুন লেগেছিল। দমকলের ১৫টি ইঞ্জিন দ্রত পৌঁছে যায়। কিন্তু ঘিঞ্জি এলাকা বলে একসঙ্গে ৪-৫টির বেশি ইঞ্জিন কাজ করতে পারেনি।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.