পাল্টানো পরিস্থিতিতে অতিথির অপেক্ষায় বন্ধ পর্যটক আবাস
শাল-মহুয়ার জঙ্গলে ভ্রমণ প্রিয় বাঙালি আসবেন। জঙ্গলে ঘুরবেন। রাত্রিবাসও করবেন।
এমনটাই আশা ছিল প্রশাসনের। পর্যটকদের থাকার সুবিধার জন্য তাই তৈরি করা হয়েছিল পর্যটক আবাসও। কিন্তু যাঁদের কথা ভেবে তৈরি করা, সেই পর্যটকদেরই দেখা মেলেনি। তাই তৈরি হওয়ার একবছরের মধ্যেই বাঁকুড়ার রানিবাঁধ ব্লকের ছেঁন্দাপাথরের পর্যটক আবাসটি বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। প্রায় ১০ বছর ধরে তা তালাবন্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০২ সালে রানিবাঁধ ব্লকের জঙ্গল ঘেরা ছেঁন্দাপাথরে শহিদ ক্ষুদিরাম উদ্যান তৈরি হয়। সেখানেই দ্বিতল বিশিষ্ট পর্যটক আবাসটি বানানো হয়। পর্যটক আবাসের নীচের তলায় একটি বিশ্রামাগার রয়েছে। আবাসে একটি বড় ঘর রয়েছে। তিনশয্যার ঘরটির প্রতিদিনের ভাড়া জন প্রতি মাত্র কুড়ি টাকা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রানিবাঁধের তৎকালীন বিডিও’র উদ্যোগে ওই উদ্যান ও পর্যটক আবাসটি তৈরি হয়েছিল। উদ্বোধন করেছিলেন প্রাক্তন অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী উপেন কিস্কু। রানিবাঁধ থেকে ২৫ কিমি দূরে বারিকুল ঝিলিমিলি রাস্তার ধারে বর্ধিষ্ণু গ্রাম ছেঁন্দাপাথর। ১৯০৮ সালের ১১ অগাস্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী ক্ষুদিরাম বসু এই ছেঁন্দাপাথরেই আত্মগোপন করেছিলেন বলে জানা যায়। তাঁর স্মৃতিবিজড়িত এই উদ্যানের মধ্যেই রয়েছে পর্যটক আবাসটি। যা পর্যটকের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে।
নিজস্ব চিত্র।
স্থানীয় মানুষ থেকে শুরু করে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা পর্যটকদের না আসার জন্য একটি কারণকেই দায়ী করছেনমাওবাদী ভীতি। ২০০৩ সাল থেকেই এলাকার রাজনৈতিক পরিবেশ সন্ত্রস্ত হয়ে ওঠে। রানিবাঁধের সঙ্গে জুড়ে যায় মাওবাদী প্রভাবিত এলাকার তকমা। এলাকায় একের পর এক সিপিএম নেতা-কর্মী খুন হয়েছেন। এ সবই মধ্যবিত্ত, ভ্রমণ পিপাসু বাঙালির কাছে ভয় পাওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট। বাস্তবে হয়েছেও তাই। শহিদ ক্ষুদিরামের স্মৃতি জড়িয়ে থাকা এলাকায় পর্যটকেরা আর পা বাড়াতে সাহস করেন না।
ওই পর্যটক আবাসের দেখাশোনা করতেন গ্রামেরই ত্রিপুরা মাহাতো। বিনা বেতনে বেশ কিছুদিন কেয়ারটেকারের কাজ করা প্রৌঢ় ত্রিপুরাবাবু বলেন, “পর্যটকরা আসছিলেন না। তাই কলকাতা-ছেঁন্দাপাথর রুটের একটি সরকারি বাসকর্মীরা রাতে কিছুদিন পর্যটক আবাসে থাকছিলেন। সেই বাস চলাচলও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তারপরে পর্যটক আবাসের দায়িত্ব আমি ছেড়ে দিই। সেই থেকে বন্ধই রয়েছে ওই আবাসটি।”
সম্প্রতি এলাকার পরিস্থিতি পালটাতে শুরু করেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও পর্যটক আবাস শূন্য পড়ে রয়েছে। মহকুমাশাসক (খাতড়া) দেবপ্রিয় বিশ্বাস বলেন, “মাওবাদীদের ভয়েই ওই এলাকায় পর্যটকরা যাওয়া বন্ধ করেছেন। তা ছাড়া পর্যটন কেন্দ্রের উপযোগী আরও পরিকাঠামো গড়ে তোলা দরকার। তবে, আগের থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।” একই কথা শুনিয়েছেন রানিবাঁধ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সিপিএমের লব মণ্ডলের গলায়। তিনি বলেন, “পরিস্থিতি আগে খুব খারাপ হয়ে পড়েছিল। তাই ভয়ে পর্যটকেরা জঙ্গলমহলে আসতে চাইতেন না। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি পাল্টাচ্ছে। পর্যটকরা এখানে আসা-যাওয়া শুরু করলেই ওই পর্যটক আবাস ফের খুলে দেওয়া হবে।”
এ বছর রেকর্ড সংখ্যক পর্যটক ভিড় করেছিলেন মুকুটমণিপুরে। সেই ছোঁয়া এ বার লাগুক শাল-মহুয়ার জঙ্গলে ঘেরা ছেঁন্দাপাথরেও। সব ভয় দূরে ঠেলে পর্যটকেরা আসুন- চাইছেন এলাকার মানুষ। আর তাহলেই ফের খুলবে শহিদ ক্ষুদিরাম উদ্যানের পর্যটক আবাসের দরজা। এলাকার অর্থনীতিতেও তার প্রভাব পড়বে। ভাটা কাটিয়ে ফের কবে জঙ্গলমহলে পর্যটকদের দেখা মিলবে- সেই প্রতীক্ষায় ছেঁন্দাপাথরের পর্যটক আবাস।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.