উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের (এনবিএসটিসি) বাস থেকে নামতে গিয়ে রাস্তায় পড়ে চাকায় দুটি পা পিষে গেল এক যাত্রীর। শুক্রবার রাতে কোচবিহারের তুফানগঞ্জ থানার দেওচড়াই মোড় লাগোয়া এলাকায় ওই ঘটনা ঘটে। তুফানগঞ্জের ঘোগারকুঠি এলাকার বাসিন্দা জখম ওই যাত্রীর নাম খগেন্দ্রনাথ দাস। এনবিএসটিসি-র কর্মীরা তাঁকে প্রথমে তুফানগঞ্জ মহুকুমা হাসপাতালে ও পরে কোচবিহার জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করেন। ওই ঘটনার পরে বিভিন্ন রুটে এনবিএসটিসি-র বাস রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাত্রীদের ওঠানো-নামানোর পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যাত্রী সুরক্ষার বিষয়ে সরব হয়েছে কোচবিহার নাগরিক কমিটি।
এনবিএসটিসি সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাতে কোচবিহার থেকে তুফানগঞ্জের শালডাঙ্গাগামী বাসে উঠেছিলেন খগেন্দ্রনাথবাবু। ভিড়ে ঠাসা বাসটি দেওচড়াই মোড়ের কাছে যাত্রী নামাতে দাঁড়ায়। ওই সময় তিনি নেমে যাওয়ার চেষ্টা করেন। বাসের ভিতরে থাকা অন্য এক যাত্রী আচমকা বাস ছাড়ার জন্য আওয়াজ দিলে চালক বাস ছেড়ে দেন। খগেন্দ্রনাথবাবু রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। বাসের চাকায় পিষে যায় তাঁর দুই পা। নিগমের কর্মীরা তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান। ঘটনার পরে জখম যাত্রী বাসে থাকা অন্য যাত্রীর ওই ভূমিকা নিয়েও অভিযোগ করেছেন। |
হাসপাতালে খগেন্দ্রনাথবাবু। নিজস্ব চিত্র। |
বাসে যাত্রীদের নিরাপদে ওঠা-নামার কাজ করান খালাসিরা। কিন্তু ১৯৮০ সালে ওই পদ দেওয়া হয়। বর্তমানে বাসের কন্ডাক্টারকে এক হাতে ভাড়া আদায়ের সঙ্গে যাত্রীদের ওঠা-নামার কাজ করতে হচ্ছে। ফলে দুর্ঘটনার সমস্যা থেকেই যাচ্ছে। এ ছাড়াও নিয়ম মতো বাসের চালকের সামনে ঘন্টা থাকার কথা। ওই ঘন্টার দড়ি বাসের শেষ প্রান্তে বাঁধা থাকবে। যাত্রী ওঠা-নামার জন্য ভাড়া আদায়ের ফাঁকে বাস দাঁড় করাতে হলে কন্ডাক্টর দড়ি টেনে একবার ঘন্টা বাজাবেন। আবার বাস ছাড়ার সঙ্কেত দিতে দু’বার ঘন্টা বাজাবেন। কিন্তু অন্য রুটের কিছু বাসের মত কোচবিহার-শালডাঙ্গার বাসেও ঘন্টা বিকল। কন্ডাক্টর বাসের গায়ে শব্দ করে দাঁড়ানো ও চলার সঙ্কেত দেন।
শুক্রবার ভিড়ে ঠাসা বাসে কন্ডাক্টার টিকিট কাটার কাজে ব্যস্ত থাকায় আচমকা অন্য এক যাত্রী বাসের গায়ে দু’বার শব্দ করেন। জখমযাত্রী খগেন্দ্রনাথবাবু বলেন, “পিছনের যাত্রীদের সুবিধের জন্য দরজার সামনে থাকা আমার মত কয়েকজন আগে নেমে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। আমি এক পা পাদানিতে অন্য পা রাস্তায় রাখতে এক যাত্রী বাসের গায়ে শব্দ করে। বাস ছেড়ে দেয়। ধাক্কা সামলাতে না-পেরে পড়ে যাই। মুহূর্তের মধ্যে বাসের চাকায় দুটি পা পিষে থেতলে যায়।” বাসের কন্ডাক্টর ইন্দ্রজিৎ পাল বলেন, “ভিড়ে ঠাসা বাস থামার সময় আমি ভাড়া নিচ্ছিলাম। হঠাৎ এক যাত্রী বাসের গায়ে শব্দ করার ফলে ঘটনাটি ঘটেছে। জখম ব্যক্তিকে নিয়ে প্রত্যেকে ব্যস্ত থাকায় ওই যাত্রীকে চিহ্নিত করা যায়নি।”
শুক্রবার রাতের ঘটনায় উদ্বেগ বেড়েছে সাধারণ যাত্রী মহলে। যাত্রী সুরক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন কোচবিহার নাগরিক অধিকার সুরক্ষা মঞ্চের সভাপতি রাজু রায় বলেন, “যাত্রী সুরক্ষার জন্য বিকল ঘন্টা মেরামত করার পাশাপাশি খালাসির পদ ফেরানোর দাবি নিয়ে নিগমের চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করব।” উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “যাত্রীর ভুলে শুক্রবারের দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রাথমিকভাবে সরকারি হাসপাতালে রেখে জখম ব্যক্তির চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ দিনের ঘটনার পরে বাম আমলে তুলে দেওয়া খালাসির পদ ফেরানোর জন্য রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে। বিকল ঘন্টা মেরামতের দিকটিও দেখা হচ্ছে।” |