হোটেলে ঢুকে ম্যানেজার ও ওয়েটারকে কুপিয়ে, গলার নলি কেটে খুন করে পালিয়েছে একদল দুষ্কৃতী। শনিবার সকালে ঘটনাটি ঘটে দার্জিলিং সদর থানার গাঁধী রোডে।
পুলিশ জানায়, মৃতদের নাম সন্দীপ রাই (২৫) ও মহম্মদ মুস্তাফা (৩৫)। সন্দীপ ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাঁর বাড়ি তিনধারিয়ায়। মুস্তাফা ওয়েটারের কাজ করতেন। তাঁর বাড়ি ইসলামপুরে। তাঁদের গলার নলি কেটে দেওয়া হয়। বুকে, পিঠে ও শরীরের বিভিন্ন অংশে ভোজালি দিয়ে কোপানোর চিহ্ন রয়েছে। যে ঘর থেকে তাঁদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়, সেটি বাইরে থেকে তালা বন্ধ ছিল।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই হোটেল চত্বরেই রয়েছে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক। মুস্তাফা হোটেলের পাশাপাশি ব্যাঙ্কেও সাফাইয়ের কাজকর্ম করতেন। ব্যাঙ্কের অফিস ঘরের চাবিও তাঁর কাছে রাখা থাকত। দেহ উদ্ধারের পরে চাবি পেলেও পুলিশ দেখেছে ব্যাঙ্কের ঘরের দরজা খোলা। সেখানে লকার খোলার চেষ্টাও হয় বলে পুলিশের সন্দেহ। কিন্তু, লকারের চাবি মুস্তাফার কাছে ছিল না। দুষ্কৃতীরা চাবি ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য প্রথমে মুস্তাফাকে খুন করে থাকতে পারে বলে পুলিশের সন্দেহ। পরে আওয়াজ পেয়ে ম্যানেজার সেখানে গেলে তাঁকেও খুন করা হয়। তার পরে দু’টি দেহ ঘরে বন্ধ করে দুষ্কৃতীরা পালায় বলে পুলিশের অনুমান। ব্যাঙ্কে চুরির চেষ্টা বাধা হয়ে দাঁড়ানোর জন্য ম্যানেজার ও ওয়েটারকে খুন করা হয়েছে কি না, তা শীঘ্রই স্পষ্ট হয়ে যাবে বলে পুলিশের আশা।
দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার আনন্দ কুমার বলেন, “সমস্ত সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বেশ কিছু সূত্র মিলেছে। যত দ্রুত সম্ভব খুনের কিনারা করার চেষ্টা হচ্ছে।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই হোটেলে ১৫ জন কর্মী রয়েছেন। প্রচণ্ড ঠান্ডার কারণে দার্জিলিং এখন প্রায় পর্যটক শূন্য। হোটেল ফাঁকা থাকায় সম্প্রতি হোটেলের ১৩ জন কর্মী ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে যান। সন্দীপ ও মুস্তাফা দু’জন হোটেলে ছিলেন। শুক্রবার রাত ৯টা পর্যন্ত এলাকার বাসিন্দারা ওই দু’জনকে বাইরে দেখেছেন। পরে হোটেল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এ দিন সকাল ১১টা পর্যন্ত হোটেলে কোনও সাড়াশব্দ না-পেয়ে প্রতিবেশী কয়েক জন হোটেলের ভিতরে ঢোকেন। ডাকাডাকি করে সাড়া না-পেয়ে তাঁরা হোটেলের বিভিন্ন ঘরে তল্লাশি শুরু করেন। ১০২ নম্বর রুমের ঘুলঘুলি দিয়ে দু’জনের ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় দেখতে পান। পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ গিয়ে বাইরের থেকে লক খুলে ঘরে ঢুকে দেহ দু’টি উদ্ধার করে।
পুলিশ জানায়, দু’জনের শরীরে অন্তত ১০টি করে ভোজালির আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ঘটনার তদন্তে সেখানে যান দার্জিলিংয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল। তিনি বলেন, “জোড়া খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে। কিছু সূত্র মিলেছে।” ওই হোটেলটি কলকাতার একটি সংস্থার অধীন। সেই সংস্থার অন্য একটি হোটেলের মালিক দাওয়া শেরপা বলেন, “দার্জিলিঙে এখন পর্যটক নেই বললেই চলে। হোটেলগুলি ফাঁকাই থাকে। এ দিন সকালে ওই হোটেলে খুন হয়েছে বলে শুনেছি।” |