কৃষ্ণনগর স্টেশনে ঢোকার মুখে চলন্ত ট্রেনেই প্রসব হয়েছিল মহিলার। শনিবার দুপুরে ওই খবর পেয়েই কৃষ্ণনগর স্টেশন ম্যানেজার জেলা সদর হাসপাতাল এবং শক্তিনগর হাসপাতালে ফোন করে বার বার অনুরোধ করেছিলেন, একটা অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য।
কিন্তু দু’টি সরকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকেই তাঁকে শুনতে হয়েছিল, ‘চাইলেই কী পাওয়া যায়!’ পাল্টা ‘পরামর্শ’ দিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে জানান, ‘পুলিশকে বলুন ওরা ব্যবস্থা করে দেবে, কিংবা ১০২ নম্বর ডায়াল করুন অ্যাম্বুল্যান্স পেয়ে যাবেন।’ হাসপাতাল সুপার কাজল মণ্ডল অবশ্য রেলের অভিযোগ শুনে বলছেন, ‘‘কর্তব্যরত কর্মী বা চিকিসকদের উচিৎ ছিল কোনও কিছু না ভেবেই অ্যাম্বল্যান্সের ব্যবস্থা করা। কারা ওই সময়ে ডিউটিতে ছিলেন খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’
আপ লালগোলা এক্সপ্রেস অবশ্য ততক্ষণে ঢুকে পড়েছে স্টেশনে। রক্তাক্ত মহিলা ও সদ্যোজাতকে নিয়ে ট্রেন থমকে রয়েছে প্ল্যাটফর্মে। সময় পেরিয়ে যাচ্ছে দেখে শেষ পর্যন্ত রেল কর্তৃপক্ষ স্টেশনের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ভ্যান রিকশায় ওই মহিলা ও তাঁর সদ্যোজাতকে তুলে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। |
সন্ধ্যায় হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়, মা ও শিশু ভাল আছেন। কিন্তু কৃষ্ণনগরের ওই সরকারি হাসপাতালগুলি কী আদৌ ‘ভাল আছে?’ ‘প্রসূতি’র পেটে গ্যাস, প্রসবের সময়ে সদ্যোজাতের মাথা কেটে ফেলা কিংবা মানসিক রোগীকে শৌচাগারে ফেলা রাখাক্রমান্বয়ে গাফিলতির অভিযোগে ‘অসুস্থ’ কৃষ্ণনগর জেলা সদর এবং শক্তিনগর হাসপাতালের চিকিৎসায় গাফিলতির তালিকায় এটাই আপাতত শেষ সংযোজন।
শনিবার মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জের তেঘড়ি বাজারের তানজিরা বিবি তাঁর বছর দেড়েকের মেয়েকে ডাক্তার দেখিয়ে আপ লালগোলা প্যাসেঞ্জার ধরে বাড়ি ফিরছিলেন। আচমকাই তাঁর প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয়। তাঁর স্বামী শেখ মুকুল বলেন, ‘‘মেয়ে শামিকাকে এনআরএস হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়ে আমরা বাড়ি ফিরছিলাম। হঠাৎ ট্রেনের মধ্যেই তানজিরা ছটফট করতে থাকে। ট্রেনের শৌচাগারে সে সন্তান প্রসব করে।’’
তবে ট্রেনের সহ-যাত্রীরা অন্তত হাসপাতালের মতো দায় এড়াননি। ওই মহিলাকে কেউ প্লাস্টিক, কেউ কাপড়, কেউ আবার নিজের গায়ের শাল কিংবা টিফিন কৌটো খুলে খাবারটাই এগিয়ে দেন। কৃষ্ণনগর ভারপ্রাপ্ত স্টেশন ম্যানেজার রজত বসুর অভিযোগ, ‘‘ওই ঘটনা শুনেই শক্তিনগর হাসপাতাল ও সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে বারবার ফোন করে যে ব্যবহার পেলাম তা বলার নয় ওঁরা আমায় উল্টে পুলিশে খবর দিতে বললেন। ট্রেনের যাত্রীরা পাসে না দাঁনালে োই মহিলা বাঁচতেনই না।” |