কলেজের আংশিক সময়ের (পার্ট টাইম) শিক্ষকদের বেতন ও চাকরির স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে ওই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য নতুন নীতি প্রণয়ন করছে রাজ্য সরকার। সরকার নতুন করে আংশিক সময়ের শিক্ষক নিয়োগ করার পক্ষপাতী নয়। বর্তমান আংশিক সময়ের শিক্ষকদের পূর্ণ সময়ের শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার সুযোগ দেবে রাজ্য সরকার। এ জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে একগুচ্ছ নীতি প্রণয়ন করছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। আগামী আর্থিক বছরেই নয়া নীতি কার্যকর করতে চায় রাজ্য সরকার।
প্রস্তাবিত নীতি অনুযায়ী, বয়সের ভিত্তিতে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে আংশিক সময়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। ৩৭ বছর বা তার কম বয়সী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একটি ভাগে রাখা হয়েছে। এঁদের ক্ষেত্রে নেট-সেটের মতো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দেওয়ার জন্য পাঁচ বছর বয়সের ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে উচ্চশিক্ষা দফতর। আর অন্য ভাগটিতে আছেন ৪২ বছর বা তার বেশি বয়সী শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
উচ্চশিক্ষা দফতর চাইছে, ৩৭-এর কম বয়সী আংশিক সময়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে যাঁরা নেট-সেট উত্তীর্ণ নন, তাঁদের ওই পরীক্ষায় বসে তাতে সফল হওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। যাঁরা ইতিমধ্যে ৩৭-এ পৌঁছে গিয়েছেন, তাঁদের আরও পাঁচ বছর পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ মিলবে। ইউজিসি-র নিয়মে সর্বোচ্চ ৩৭ বছর পর্যন্ত নেট-সেট পরীক্ষায় বসা গেলেও এই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য বয়সে ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। নেট-সেট পরীক্ষায় বসার পাশাপাশি পিএইচ ডি-র সুযোগও পাবেন এঁরা। শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, আংশিক সময়ের শিক্ষক পদে নিযুক্তদের যাতে পূর্ণ সময়ের শিক্ষক পদে নিয়োগ করা যায়, সেই জন্যই এই উদ্যোগ।
পাঁচ বছরের মধ্যে যাঁরা নেট-সেট পরীক্ষায় সফল হতে পারবেন না কিংবা পিএইচ ডি শেষ করতে পারবেন না, তাঁদের স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে উচ্চশিক্ষা দফতর। দফতর চায়, পরীক্ষায় সফল হলে ইন্টারভিউয়ে এই শিক্ষক-শিক্ষিকদের পড়ানোর অভিজ্ঞতার জন্য বাড়তি নম্বর দেওয়া হোক। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যাঁরা নেট-সেট কিংবা এসএসসি-তে সফল হতে পারবেন না, তাঁদের সরাসরি কলেজের গ্রুপ-সি বা গ্রুপ-ডি পদে নিয়োগের ব্যবস্থা করা হবে।
৪২ বছর বা তার বেশি বয়সী আংশিক সময়ের শিক্ষকদের ক্ষেত্রে বর্তমান বেতনের প্রায় দ্বিগুণ বেতন দেওয়ার পক্ষপাতী সরকার।
আংশিক সময়ের শিক্ষকদের ৬০ বছর পর্যন্ত চাকরিতে বহাল রাখা, অবসরের পরে তাঁদের এককালীন অর্থ দেওয়ার পাশাপাশি এই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন বাড়ানোর ব্যাপারে ২০১০-এর সেপ্টেম্বরে একটি নির্দেশিকা জারি করে উচ্চশিক্ষা দফতর। সেখানে বলা হয়, চার বছরের কম সময় শিক্ষকতা করছেন, এমন আংশিক সময়ের শিক্ষকদের বেতন হবে ৯,৪৫০ টাকা। চার বছরের বেশি কিন্তু দশ বছরের কম সময়ের শিক্ষকদের বেতন হবে ১০,৮০০ টাকা এবং ১০ বছর বা তার বেশি সময় চাকরি করলে বেতন হবে ১৩,৫০০ টাকা। ২০১০-এর ১ অক্টোবর থেকে নির্দেশিকা কার্যকর করার কথা হলেও এখনও অনেক আংশিক সময়ের শিক্ষকই ওই হারে বেতন পান না বলে অভিযোগ।
মহাকরণ সূত্রের খবর, অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে সরকার দেখেছে, অনেক কলেজই অনুমোদিত সংখ্যার (প্রত্যেক শূন্য পূর্ণ সময়ের শিক্ষক পদের জন্য তিন জন আংশিক সময়ের শিক্ষক) থেকে বেশি আংশিক সময়ের শিক্ষক নিয়োগ করেছে। কিন্তু উচ্চশিক্ষা দফতরকে সে কথা জানানো হয়নি। অনুমোদিত সংখ্যার আংশিক সময়ের শিক্ষকদের বেতন দেওয়ার জন্য সরকার যে অর্থ দেয়, তা থেকেই অতিরিক্ত পদের শিক্ষকদেরও বেতন দেওয়া হচ্ছে। ফলে সরকার নির্ধারিত হারে বেতন পাচ্ছেন না আংশিক সময়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একটা বড় অংশ।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এই দিকেও নজর দিয়েছে উচ্চশিক্ষা দফতর। ভাবা হয়েছে, তিন মাস অন্তর কলেজগুলি যখন বেতন-বাবদ অর্থ চেয়ে উচ্চশিক্ষা দফতরে আবেদন পাঠাবে, তখন তার সঙ্গে আংশিক সময়ের শিক্ষকদের প্রত্যেকের কাছ থেকে লিখিত ঘোষণাপত্র জমা দিতে হবে। তাঁরা সরকার নির্ধারিত হারে বেতন পাচ্ছেন কি না, ঘোষণাপত্রে তা-ই জানাবেন আংশিক সময়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। এ ব্যাপারে সরকার ‘সন্তুষ্ট’ না হলে ওই কলেজের যাবতীয় আর্থিক অনুদান বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে।
প্রস্তাবিত এই নীতির সঙ্গে যেহেতু আর্থিক প্রশ্ন জড়িত, তাই মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে উচ্চশিক্ষা দফতর তা পাঠাবে অর্থ দফতরে। শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য এখনই এই বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তাঁর কথায়, “আংশিক সময়ের শিক্ষকদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। আশা করি মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তা সময়মতো সম্পন্ন হবে।” |