গত বছর কয়লার দাম বাড়ার কারণে বিদ্যুৎ মাসুলের সঙ্গে যে ‘ফুয়েল সারচার্জ’ নেওয়ার কথা ছিল, তা খুব শীঘ্রই কার্যকর হতে চলেছে। বিদ্যুৎ দফতর সূত্রে খবর, জানুয়ারি মাস থেকেই রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা গ্রাহকদের কাছ থেকে ওই সারচার্জ নেওয়া শুরু করতে পারে।
এক বিদ্যুৎ কর্তা জানিয়েছেন, বাম সরকারের আমলেই রাজ্য বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের অনুমতিতে গত বছর ১৪ মে থেকে জ্বালানি খরচ হিসেবে ইউনিট-পিছু ৩৫ পয়সার মতো সারচার্জ নেওয়ার প্রস্তাব ছিল। কারণ ফেব্রুয়ারি মাসে কোল ইন্ডিয়া তাদের কয়লার দাম বাড়িয়েছিল। সম্প্রতি রাজ্য সরকার সেই সারচার্জ নেওয়ার সম্মতি দিয়েছে বলেই ওই কর্তা জানান। ট্রাইব্যুনালের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ ডিসেম্বর বণ্টন সংস্থা ৪৪ পয়সা বিদ্যুৎ মাসুল বাড়িয়েছিল। চলতি মাস থেকে ফুয়েল সারচার্জ যুক্ত হলে বিদ্যুতের ইউনিট-পিছু দাম গিয়ে দাঁড়াবে ৫ টাকার সামান্য কিছু বেশি।
সময় মতো মাসুল বাড়াতে না পেরে এমনিতেই আর্থিক লোকসানে চলছে বণ্টন সংস্থা। মাসুল বাড়াতে না পারলে চলতি আর্থিক বছরে (২০১১-১২) সংস্থার প্রায় ২,২০০ কোটি টাকা লোকসান হবে বলে কর্তারা ধরে নিয়েছিলেন। সে ক্ষেত্রে আগামী দিনে সংস্থা চলবে কী করে, তাই নিয়েই ভাবনা-চিন্তা শুরু হয়ে গিয়েছেল। কারণ, মাসুল বাড়ানো হয়নি বলে কোনও ব্যাঙ্কই আর ঋণ দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছিল।
কিন্তু প্রথমে বাম সরকারের আমলে নেওয়া মাসুল বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত ট্রাইব্যুনাল বহাল রাখায় খানিকটা
হলেও আয় বেড়েছে বণ্টন সংস্থার। এর পরে বাম আমলেই নেওয়া ফুয়েল সারচার্জ বসানোর প্রস্তাব কার্যকর করার সুযোগ পেলে সব মিলিয়ে তাদের রাজস্ব আদায় ১১০০ কোটি টাকা বাড়বে। তবে তার পরও সংস্থার ১১০০ কোটি টাকা লোকসান হবে বলেই বিদ্যুৎ কর্তাদের দাবি। তবে তাঁরা এ-ও জানিয়েছেন যে, রাজস্ব বাড়লে বেহাল আর্থিক দশার কারণে আগামী গ্রীষ্মে যে ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল, তা কিছুটা ঠেকানো সম্ভব হবে।
কারণ, সারচার্জ নেওয়ার সুযোগ পেলে রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমেরও কিছুটা আয় বাড়বে। সে ক্ষেত্রে তারাও কোল ইন্ডিয়ার কাছ থেকে কয়লা কিনতে পারবে। কোল ইন্ডিয়ার কাছে এখনই নিগমের দেনা প্রায় ৯০০ কোটি টাকা। বকেয়া টাকা না মেটাতে পারলে কয়লা সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে রাজ্যের বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে বাধ্য। সারচার্জ বসলে সেই পরিস্থিতি কিছুটা হলেও সামাল দেওয়া যাবে বলে বিদ্যুৎ কর্তাদের আশা। |