কৃষক-মৃত্যুর ঘটনা ‘সরেজমিনে’ দেখতে জেলায় জেলায় আলাদা দল পাঠাবে সরকারের শরিক কংগ্রেস এবং বিরোধী বামফ্রন্ট।
শনিবার কংগ্রেসের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, কৃষক-মৃত্যু নিয়ে সরকারি অফিসাররা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘সঠিক তথ্য’ দিচ্ছেন না। অফিসারদের উপর ‘নির্ভর’ করে না থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে এ ব্যাপারে সর্বদলীয় তদন্ত কমিটি গড়ার অনুরোধও জানিয়েছে সরকারের শরিকদল। বস্তুত, রাজ্য সরকারের জোট শরিক হিসেবেই কংগ্রেস ‘সত্য অনুসন্ধান কমিটি’ গড়ে গ্রামে গ্রামে গিয়ে চাষিদের অবস্থা খতিয়ে দেখবে বলে এ দিন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য জানিয়েছেন।
ঘটনাচক্রে, এ দিনই বামফ্রন্টের বৈঠকের পর ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু জানিয়েছেন, কৃষক-মৃত্যুর ‘প্রকৃত’ কারণ জানতে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রর নেতৃত্বে ভাগাভাগি করে বাম-প্রতিনিধি দলের সদস্যরা অদ্যাবধি মৃত ২৫ জন কৃষকের বাড়ি যাবেন।
এ দিন প্রদেশ দফতরে এক সাংবাদিক বৈঠকে প্রদীপবাবু বলেন, “ফসলের দাম না পেয়ে চাষিরা আত্মঘাতী হচ্ছেন, এ কথা কিছু অফিসার ইচ্ছাকৃতভাবে চেপে যাচ্ছেন। পারিবারিক কারণে অথবা অসুস্থতার জন্য চাষিরা আত্মহত্যা করছেন বলে গল্প ফাঁদছেন তাঁরা। সঠিক তথ্য রাইটার্সে পাঠাচ্ছেন না।” গত বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোরে তৃণমূলের পঞ্চায়েতি-রাজ সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “যাঁরা আত্মহত্যা করেছেন, তাঁদের কারও অসুস্থতা ছিল। কেউ কেউ ঋণগ্রস্ত ছিলেন। কারও পারিবারিক কারণ ছিল। চাষের সঙ্গে যোগ থাকার কোনও নথি ওই ব্যক্তিদের নামে মেলেনি।” প্রদীপবাবুর বক্তব্য, অফিসারদের ‘ভুল’ তথ্যের ভিত্তিতেই মুখ্যমন্ত্রীর ওই মন্তব্য। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির অভিযোগ, “চাষিরা কেন ঠিকমতো ফসলের দাম পাচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখতে সর্বদলীয় তদন্ত কমিটি গড়তে অনুরোধ করেছিলাম মুখ্যমন্ত্রীকে। কিন্তু তা হয়নি। অফিসারদের তথ্য-রিপোর্টের উপর মুখ্যমন্ত্রী নির্ভর করে থাকুন, চাই না।”
পাশাপাশিই, এ দিন আলিমুদ্দিনে কৃষক-মৃত্যু নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমানবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, ফসলের দাম না পেয়ে আত্মহত্যার অভিযোগ ঠিক নয়। আমরা জানি, ৬ হাজার থেকে ২২ হাজার টাকা দেনা করা কৃষকও ফসল বিক্রি করতে না পেরে আত্মহত্যা করছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, পারিবারিক বিবাদ। সত্যি কি পারিবারিক বিরোধ? নাকি ঋণ শোধ করতে না পারা?”
গত কয়েক মাসে যে চাষিরা আত্মঘাতী হয়েছেন, তাঁদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়ে কংগ্রেসের প্রদীপবাবু বলেন, “চাষিদের ঋণ মকুবের দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু তা না হওয়ায় চাষিরা আত্মঘাতী হচ্ছেন। ওঁদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক।” কিছুদিন আগে একই দাবি জানিয়েছিল বিরোধী বামফ্রন্টও। বিরোধীদের ‘সুরেই’ কংগ্রেস ক্ষতিপূরণের দাবি জানাচ্ছে কি না, জানতে চাওয়া হলে প্রদীপবাবু বলেন, “বামফ্রন্টের সঙ্গে দাবি মিলে গেলেও কিছু করার নেই!”
শরিক কংগ্রেস এবং বিরোধী বাম যা-ই বলুক, সরকার অবশ্য তাদের ‘অবস্থানে’ অনড়। প্রদীপবাবুর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমার কাছে যে রিপোর্ট নেই, প্রদীপবাবুর কাছে তা রয়েছে বিশ্বাস করতে আমার অসুবিধা হচ্ছে!” বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে একের পর এক কৃষকের আত্মহত্যার খবরকে ‘কটাক্ষ’ করে সুব্রতবাবুর বরং মন্তব্য, “কাগজ দেখে মনে হচ্ছে, কৃষকেরা যেন আত্মহত্যা করার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন! তেতাল্লিশের মন্বন্তরের সময়ও এত কৃষক আত্মঘাতী হননি!” মন্ত্রীর মতে, “ফসলের দাম না-পাওয়ার জন্যই কৃষকরা আত্মহত্যা করছেন বলে মানতে পারছি না। তা হলে বন্যা বা অতিবর্ষণে কৃষকের জমির ফসল পুরো নষ্ট হয়ে গেলেও তো তাঁরা আত্মহত্যা করতেন! কিন্তু তখন তো তেমন কোনও খবর বেরোয় না! তবে আমি কৃষিমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নই। তাই ওই সব ঘটনার ব্যাপারে কোনও রিপোর্ট আমার কাছে নেই।” |