মমতার সঙ্গে বৈঠক
সরকারের পাশে থাকার আশ্বাস দিলেন সিদ্দিকুল্লা
ন্দীগ্রামের জমি আন্দোলন এক জনের কাছে ছিল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার ‘সোপান’। অন্য জনকে জমি আন্দোলনই ‘প্রাসঙ্গিক’ করেছিল। রাজ্য-রাজনীতির সেই দুই চরিত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী মুখোমুখি হলেন শনিবার।
মমতার নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রতিশ্রুতিপালনে ‘ব্যর্থতা’র বিরুদ্ধে সংখ্যালঘুদের একাংশ যখন মুখ খুলতে শুরু করেছে, তখন মমতা-সিদ্দিকুল্লার এই সাক্ষাৎকে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ ধরা হচ্ছে। মহাকরণে এ দিন প্রথমে রাজ্যের বর্ষীয়ান মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতার সঙ্গে বৈঠক করেন ‘জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ’-এর রাজ্য সম্পাদক তথা পিডিসিআই নেতা সিদ্দিকুল্লা। পরে মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শেই তিনি তৃণমূল ভবনে গিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের সঙ্গে কথা বলেন। মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর দলের সঙ্গে এ দিনের আলোচনাকে ‘সদর্থক’ বলেই আখ্যা দিয়েছেন সিদ্দিকুল্লা।
তাঁর মতে, এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের কোনও ‘বিকল্প’ নেই। মমতা যাতে দীর্ঘদিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থাকতে পারেন, সে জন্য তাঁর সঙ্গে সবরকম সহযোগিতার আশ্বাস তিনি এ দিনের বৈঠকে দিয়েছেন। মমতা নির্দ্বিধায় কাজ করুন। কারণ, সিদ্দিকুল্লারা লক্ষ্য করেছেন, মমতা বাংলার উন্নতির জন্য কাজ করতে চাইছেন। কাজ করার সুযোগ দিয়ে তাঁরা মমতার হাত ‘শক্ত’ করতে চান। সে-জন্য দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ মহবুব মাদানিও তাঁদের মমতার সঙ্গে আলোচনায় বসার পরামর্শ দিয়েছেন।
মহাকরণে সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী নিজস্ব চিত্র
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় প্রত্যাশিতভাবেই সংখ্যালঘুদের একাংশের সমালোচনার প্রসঙ্গটি এসেছিল। মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাকে বলেছেন, তাঁর সরকার সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে কাজ করছে। সেই কাজে তাঁরা সিদ্দিকুল্লার সহযোগিতা চান। কাজে কোথাও ভুল হলে তা ধরিয়ে দিতে এবং সরকারের আর কী কী করণীয়, সেই ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ‘পরামর্শ’ চেয়েছেন বলে সিদ্দিকুল্লা জানিয়েছেন। কিন্তু ‘অর্থহীন’ সমালোচনা এখনই সরকারের প্রাপ্য নয় বলে সিদ্দিকুল্লার মত। তাঁদের সামাজিক সংগঠন জমিয়তে এবং রাজনৈতিক সংগঠন পিডিসিআই সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে মমতার পাশে থাকবে বলে মুখ্যমন্ত্রীকে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। বস্তুত, সিদ্দিকুল্লা মমতাকে এ কথাও বলেন যে, বামফ্রন্টের ‘অপশাসনে’র অবসান তাঁরা চেয়েছিলেন, নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে এখনই তাদের ‘দুর্বল’ করার চেষ্টা হোক, তা তাঁরা চান না।
‘তাৎপর্যপূর্ণ’ ভাবে, এ দিন মহাকরণ এবং তৃণমূল ভবনের দুই বৈঠকেই সংখ্যালঘু প্রশ্নে কংগ্রেসের ভূমিকার সমালোচনা করেন সিদ্দিকুল্লা। কংগ্রেসকে ‘অকৃতজ্ঞ’ এবং ‘কিংকর্তব্যবিমূঢ়’ বলে অভিহিত করেছেন তিনি। সিদ্দিকুল্লা নিজে এক সময় কংগ্রেসে ছিলেন। কংগ্রেসের হয়ে ভোটেও লড়েছিলেন। কিন্তু সেই কংগ্রেসকেই তিনি যে ভাবে সংখ্যালঘুদের সঙ্গে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’র অভিযোগে কাঠগড়ায় তুলেছেন, শাসকজোটে টানাপোড়েনের সময় তা তৃণমূলের দিক থেকে ‘ইঙ্গিতবাহী’।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা প্রতিশ্রুতিমতো সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে কাজ করতে পারছেন না বলে যে অভিযোগ উঠেছে, সেই ব্যাপারে তাঁদের মতামত কী, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পরে সিদ্দিকুল্লা বলেন, “জমিয়তে এ রাজ্যে মুসলিমদের সব থেকে বড় সংগঠন। আমরা এখনই এত নীচে নেমে মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করতে চাই না। বরং ওঁর সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, ওঁর মনোভাব ইতিবাচক।” বৈঠক থেকে ইঙ্গিত মিলেছে, সংখ্যালঘুদের একাংশ যে ভাবে তাঁর সরকারের বিরুদ্ধাচারণ করতে শুরু করেছে, তার মোকাবিলায় মমতা সামনে রাখতে চাইছেন সিদ্দিকুল্লাকে। যিনি সাম্প্রতিক কালে রাজ্য-রাজনীতিতে ঘোর ‘সিপিএম বিরোধী’ বলেই পরিচিত।
নন্দীগ্রামে ‘ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি’তে তৃণমূলের পাশাপাশি সিদ্দিকুল্লার সংগঠনের লোকও ছিলেন। জমি আন্দোলনের সেই পর্বে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সিদ্দিকুল্লাদের ‘ভয়ঙ্কর শক্তি’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। জমি আন্দোলনের জেরে দ্রুত পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে আসা সিদ্দিকুল্লা একাধিকবার জমি আন্দোলনের নেত্রী মমতার উদ্দেশে ‘বার্তা’ পাঠালেও তৃণমূল নেত্রী কিন্তু এ যাবৎ কখনও তাঁর সঙ্গে আলোচনায় বসতে চাননি। সরকারে আসার পরেও সিদ্দিকুল্লারা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার আবেদন জানিয়ে রেখেছিলেন। সেই আর্জির জবাবে সুব্রতবাবু, মুকুলবাবুরা যখন কয়েক দিন আগে সিদ্দিকুল্লার সঙ্গে যোগাযোগ করেন, তখন তিনি মুম্বইয়ে ছিলেন। সিদ্দিকুল্লাকে বলা হয়, মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সঙ্গে দ্রুত আলোচনায় বসতে চান। সরকার তথা প্রধান শাসক দলের তরফে এই ‘তৎপরতা’ থেকেই বৈঠকের ‘তাৎপর্য’ আরও স্পষ্ট।
মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সংখ্যালঘুদের উন্নয়নের বেশ কিছু দাবি পেশ করেছেন সিদ্দিকুল্লা। তাঁর কথায়, “রাজ্যে এখন ৩ কোটি মুসলিম রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছি, মুসলিম জনসংখ্যার ভিত্তিতে তাঁদের জন্য সংরক্ষণ চালু করা হোক। মুসলিমদের শিক্ষার প্রসারে কেন্দ্রের কাছে ১০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজের জন্য দরবার করুন মুখ্যমন্ত্রী, যাতে রাজ্য জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস হয়। জেলায় জেলায় আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ছড়িয়ে দেওয়া হোক। কেন্দ্রের কাছে এই দাবিতে আমরা মুখ্যমন্ত্রীর পাশে থাকব।” সিদ্দিকুল্লার দাবি, রাজ্যের ১২টি জেলায় তাঁদের দলের ‘রাজনৈতিক প্রভাব’ রয়েছে। তাঁদের সামাজিক সংগঠন রাজ্যে ৮৫০টি মাদ্রাসা চালায়।
তবে এর পাশাপাশিই সিদ্দিকুল্লা জানান, এ দিনের বৈঠকে রাজ্যের কিছু কিছু জায়গায় ‘নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা’ সম্পর্কেও তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে সজাগ করেছেন। তাঁর কথায়, “নৈরাজ্যের বাংলা, রক্তাক্ত বাংলা কেউ দেখতে চান না। কিন্তু এমন কিছু মানুষ আছে, যারা প্রশাসন আছে বলে মানে না। তাঁর হুঁশিয়ারি, “এখন আমরা কিছু ভুল করলে আগামী দিনে খেসারত দিতে হবে। ওই সব শক্তিকে মুখ্যমন্ত্রী কঠোর হাতে দমন করুন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.