বসিয়ে দিতে ক্ষোভ টোলগের
শীর্ষে উঠেও অস্বস্তির কাঁটা ইস্টবেঙ্গলে
ইস্টবেঙ্গল-২ (সৌমিক, পেন)
হ্যাল-০
পঁয়ষট্টি মিনিট পর্যন্ত গোল নেই। ডাগ আউটে ট্রেভর জেমস মর্গ্যানকে লক্ষ করে উড়ে এল ইট, জলের বোতল। ব্রিটিশ কোচ একবার কড়া চোখে তাকালেন অসহিষ্ণু গ্যালারির দিকে। তারপর হাত পা ছুড়তে ছুড়তে নিজের চেয়ারে গিয়ে বসলেন। “বার বার ইট ছোড়া হবে আমাকে লক্ষ করে। আর আমি শুধু দেখব...এটা কী হচ্ছে!” ম্যাচের পর উষ্মা ঝরে পড়ছিল লাল-হলুদ কোচের মুখ থেকে।
পৌষ গিয়ে সবে মাঘ পড়েছে। তাতে কী? লিগ টেবিলের লাস্ট বয়কে পাটিসাপটা পিঠে করে খাওয়ার উচ্চাশা নিয়ে শনিবার যুবভারতীতে এসেছিলেন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা। তাঁদের আশা অন্যায় নয়। বেঙ্গালুরুতে যাদের আট গোল দিয়েছিলেন টোলগে-পেনরা তাদের বিরুদ্ধেও হৃৎপিণ্ডের ধুকপুকুনি নিয়ে বসে থাকতে থাকতে তাঁরা সম্ভবত অধৈর্য হয়ে উঠেছিলেন। তা সত্ত্বেও লিখতেই হচ্ছে, যে টিমটা এ দিনই ম্যাচ জিতে ফের লিগ শীর্ষে চলে গেল তাদের দিকে এ ভাবে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ দেখানো ঠিক নয়। কারণ খেতাব জয়ের হট-সিটে বসে থাকা ইস্টবেঙ্গলের সামনে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি ম্যাচ রয়েছে— চার্চিল ব্রাদার্স, প্রয়াগ এবং মোহনবাগান।
ইস্টবেঙ্গল টিম-বাসের সামনে এসে সমর্থকদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখে অবশ্য মনে হল, ‘খারাপ খেলেও তিন পয়েন্ট পেলে আমরা খুশি’ মর্গ্যানের নতুন এই থিম সং- এর উপর ভরসা রাখতে পারছেন না অনেকেই। তাঁরা ক্ষুব্ধ মারগাও জয় করতে যাওয়ার আগে, টিমের হতশ্রী ফর্ম দেখে। হ্যাল কোচ ত্যাগরাজ দাবি করছিলেন, “এই ম্যাচটা আমাদের জেতা বা ড্র করা উচিত ছিল। আর সি প্রকাশের গোলটা হয়ে গেলেই দেখতেন কী হত।” লিগ টেবিলের শেষতম দলটির কোচের সঙ্গে পুরোপুরি একমত হওয়া যাচ্ছে না ঠিকই কিন্তু এটাও ঘটনা, টোলগে-পেন-মেহতাবরা এ দিন যা ফুটবল খেলেছেন তাতে আর যাই হোক চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ‘গন্ধ’ ছিল না।
গোলের পাস লেখা এডমিলসনের। গোল পেনের। যুবভারতীতে শনিবার। ছবি: উৎপল সরকার
রবিন-বলজিৎরা আহতের তালিকায়। হাতে স্ট্রাইকার নেই। ফলে টোলগেকে সামনে রেখে পিছন থেকে পেন ওরজিকে দিয়ে কামান দাগার চেষ্টা করেছিলেন লাল-হলুদ কোচ। কিন্তু বেঙ্গালুরুর অফিস দলটির রক্ষণ তার জবাব দিতে শুরু করল শুরু থেকেই। পায়ের জঙ্গল নয়, বিজয়-রমেশ-রোহিতরা মিলে তৈরি করেছিলেন একটি ফানেল। ইস্টবেঙ্গলের যাবতীয় আক্রমণ তাতেই বন্দি হয়ে যাচ্ছিল। টোলগে বা পেনরা বল পেলেই তাঁদের চার পাশে তৈরি হচ্ছিল মানব বৃত্ত। এক, দুই, তিন, চার। দিশাহারা টিমকে ছন্দে আনতে মর্গ্যান হাত-পা ছুড়লেন। চিৎকার করলেন। কিন্তু কাকস্য পরিবেদনা! উল্টে সুব্রত ভট্টাচার্য যে অঙ্কে বধ করেছিলেন ইস্টবেঙ্গলকে, সে পথেই হাঁটতে শুরু করল ত্যাগরাজের দল। মোহনবাগানে বহুদিন আগে খেলে যাওয়া সেই-ই-ই ‘বুড়ো’ আর সি প্রকাশের নেতৃত্বেই শুরু হল পাল্টা আক্রমণ। ইস্টবেঙ্গলের সৌভাগ্য, প্রকাশের শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হল, নিজেদের গোল-লাইনে দাঁড়িয়ে হামজার হেড করা বল ফেরালেন মেহতাব হোসেন।
বিরতিতে গটগট করে ড্রেসিংরুমে ফিরে গিয়ে ইস্টবেঙ্গল কোচ সব ফুটবলারকে ডেকে বলেছিলেন, “চ্যাম্পিয়ন যদি হতে চাও তা হলে এই ম্যাচটা জিতে ফেরো। আক্রমণের ঝড় তোলো।” সেই ঝড়টা উঠল অবশ্য দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি। তুললেন সঞ্জু প্রধান। ডানদিকের উইং দিয়ে সিকিমি মিডিও-র তোলা বলটা হেড করে হ্যাল গোলে পাঠালেন সৌমিক দে। গ্যালারিতে শান্তিজল ছেটাল বঙ্গসন্তানের গোল। এর পর অতি-বিবর্ণ টোলগেকে বসিয়ে এডমিলসনকে নামালেন মর্গ্যান। অস্ট্রেলীয় স্ট্রাইকার ক্ষোভ জানিয়ে বসে পড়লেন বেঞ্চে। হতচকিত গ্যালারি আবার উচ্ছ্বসিত হলতবে ম্যাচ শেষ হওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তে। ফিটনেস খুব খারাপ। শরীরে মেদ জমেছে। তবুও তো তিনি এক সময়ের সফল ব্রাজিলিয়ানব্যক্তিগত স্কিল, ফুটবল বুদ্ধি অটুট তো থাকবেই। ফলে বলটা যখন এডমিলসন পেলেন তখন সামনে হ্যালের জেমস সিংহ। শরীর দিয়ে বল আড়াল করে নিজের শক্তি প্রয়োগ করলেন এডমিলসন। এরপর তিনি যা করলেন তার জন্য, ‘উল্টে দেখুন পাল্টে গেছি’ লাইনটাই যুতসই। এডুর এত দিন বদনাম ছিল গোলের সামনে স্বার্থপর। এ দিন হাত কয়েকের মধ্যে একা হ্যাল গোলকিপার প্রমোদকে পেয়েও গোলে বল তো মারলেনই না, উল্টে বল মাইনাস করে দিলেন আরও ভাল জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা পেনকে। পেনের এক টোকাতেই ২-০।
ইস্টবেঙ্গল জিতল। তিন পয়েন্টও এল। কিন্তু তাতেও অস্বস্তির কাঁটা থেকে যেন মুক্ত হতে পারল না মর্গ্যান ব্রিগেড। হ্যালেই যদি এই হাল হয়, তা হলে চার্চিলে কী হবে? এই চিন্তার ধুলো উড়িয়ে ক্লাব তাঁবুর দিকে ছুটল লাল-হলুদের ঝকঝকে টিম-বাস।

ইস্টবেঙ্গল: গুরপ্রীত, হরমনজোৎ, সুনীলকুমার, ওপারা, সৌমিক, ভাসুম, পেন, মেহতাব, সঞ্জু, পাইতে (সুশান্ত), টোলগে (এডমিলসন)।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.