আজ ওডাফা বনাম ইয়াকুবু
স্কোলস আর অঁরি খুঁজে বেড়াচ্ছে মোহনবাগান
কাশের হারিয়ে যাওয়া তারা-রা আলো ফিরে পায় না আর।
ফুটবলের আকাশ অন্য রকম।
পল স্কোলসকে ফিরিয়ে এনেছে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড। নেমেই নায়ক।
থিয়েরি অঁরিকে ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হল আর্সেনাল। নেমেই নায়ক।
হোসে র্যামিরেজ ব্যারেটো সেই আলো ফিরে পাবেন মোহনবাগানে?
মরসুম শুরুর আগে মোহনবাগান তাঁবুর ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকাগুলো পর্যন্ত তিনটি প্রশ্ন নিয়ে মাথা ঘামিয়েছে।
সুব্রত ভট্টাচার্য-প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় মিলেমিশে কাজ করতে পারবেন?
মেজাজি ওডাফাকে সামলানো সম্ভব সুব্রতর?
ওডাফা-ব্যারেটো জুটি চোট সারিয়ে ভয়ঙ্কর হতে পারবে?
ফুটবল কোনও দিন পাটিগণিত বা পাঁজি মেনে হয় না।
প্রশান্ত এখন নিজেকে এতটাই গুটিয়ে নিয়েছেন, সুব্রতর সঙ্গে লাগার প্রশ্ন নেই। তিনি ছায়াসঙ্গী সুব্রতর।
ওডাফা ও সুব্রত এতটাই নিজের মতো থাকেন, কারও সঙ্গে কারও লাগেনি। ওডাফা গোল করে এসে সুব্রতর কোলে উঠছেন অনেক দিন।
বাকি থাকল তিন নম্বর প্রশ্ন। ব্যারেটো যখন ফিট, ওডাফা আনফিট ছিলেন। ওডাফা যখন ফর্মে, ব্যারেটো তখন চোটে। রবিবার প্রয়াগ ইউনাইটেড ম্যাচে ব্যারেটো প্রথম দলে থাকবেন কি না প্রশ্ন। মঙ্গলবার সেই বিরল দিন, বড় ম্যাচের আগে ব্যারেটো প্র্যাক্টিসে অদৃশ্য। বিশ্রামে।
চোট পাওয়া ব্যারেটোর ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন আবার উঁকি মারছে প্রয়াগ ম্যাচের আগে।
এমনিতে মোহনবাগান মাঠে গেলে কয়েক জনকে দেখে প্রশ্ন জাগবে, এই ফুটবলাররা এখন করেন কী? থেকেও নেই অনেকে। শিল্টন পাল দিয়ে শুরু করুন। তার পরে এন প্রদীপ, মোহনরাজ, মণীশ মৈথানি, মুরলী, বুঁগো সিংহ, গৌরাঙ্গ দত্ত, জাগতার, সতীশকুমার। হঠাৎই এঁরা উধাওল্যান্ডের ফুটবলার। ইয়াকুবু-জোসিমারদের বিরুদ্ধে আবার জাতীয় দলের চার জনই অদৃশ্য। নবি, জুয়েল, সুনীল, রাকেশ। প্রথম তিনের চোট, রাকেশের কার্ড। হাসপাতালের উপরে কিছু থাকলে সেটাই মোহনবাগান।
বাবলুবাবু কিন্তু অকুতোভয়।
ওডাফা ও আরও দশ জন। অস্ত্রে শান সুব্রতর। শনিবার মোহনবাগান মাঠে প্র্যাক্টিসে। ছবি: উৎপল সরকার।
ক্লাব তাঁবুতে কোচের ছোট্ট এক ফালি ঘরে প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রদীপ চৌধুরী, সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায় বসে। সামনে সুব্রত। পরিমল দে না অসীম মৌলিক, কে বেশি ভয়ঙ্কর? জার্নেল সিংহ না অরুণ ঘোষ, কে বেশি নির্ভরযোগ্য? এ সব আলোচনা করতে করতে সুব্রত ভট্টাচার্য আনমনে গুনগুন মান্না দে-র গান গেয়ে ওঠেন,
তুমি নয় নাই কাছে আসলে
আমায় নাই বা ভালবাসলে
তাই বলে আমি কেন ভালবাসব না?

সামান্য আগে তাঁকে মাঠে দেখেছি, স্নেহাশিস চক্রবর্তীকে কর্নার প্র্যাক্টিস করাতে এসে মোহনবাগান ক্রিকেট কোচ পলাশ নন্দীর সঙ্গে রসিকতা করে গেলেন। পলাশ তখন ক্রিকেটারদের নেট থেকে ফুটবল প্র্যাক্টিস দেখছেন।
শুধু অকুতোভয় না, সুব্রত ভট্টাচার্য খোশমেজাজ।
বেরনোর মুখে সাংবাদিকদের দঙ্গল ধরলে তাঁকে তিনটে কথা বলতে শোনা গেল। “ডেম্পোও তো এয়ার ইন্ডিয়ার কাছে দু’গোল খেয়েছে।” “মোহনবাগান জেতার জন্যই খেলে।” এবং “প্রয়াগ বেশ ভাল দল।”
শুধু ভাল দল? সুব্রতর প্রাক্তন ক্লাব লিগে ডেম্পো, মোহনবাগান, পুণে এফসি-কে হারিয়েছে। ইস্টবেঙ্গল, চার্চিল, সালগাওকর তাদের হারাতে পারেনি। সবচেয়ে কম হেরেছে। বড় দল দেখলেই ইয়াকুবু-জোসিমারদের পায়ে অন্য আগুন। অন্য দীপ্তি। ইয়াকুবুর জন্য জোনাল মার্কিংয়ের পক্ষপাতী সুব্রতর একটা স্বস্তি প্রয়াগের প্রধান গেমমেকার লালকমল নেই। সেখানে জয়ন্ত সেন, জেমস সিংহ। সুব্রতর প্র্যাক্টিসে দুই বিদেশি হাদসন-ড্যানিয়েলের সঙ্গে মণীশ ভার্গব ও শুভাশিস রায়চৌধুরীকে খেলানো হল। মাঝমাঠই মোহনবাগানের যন্ত্রণার দিকচিহ্ন। ইয়াকুবুর পক্ষে স্বস্তির।
যন্ত্রণা মোছার জন্য সুব্রতর হাতে রইলেন কে তা হলে?
সেই দু’জন। সাউথ সিটির বহুতলের দুই বাসিন্দা। যে দু’জন এখনও মাঠে যে জুটি হলেন না।
তেত্রিশ তলার ঘরে দাঁড়ালেই ওডাফা ওনিয়েকা ওকোলি কলকাতার আকাশ ছুঁতে পারেন। এখন তিনি সেরা ফর্ম ছুঁয়েছেন। কোচেরা ছাড় দিলেও নিজেই প্র্যাক্টিস করছেন। মোহন টিডি সুব্রত অভিভূত, “ওডাফার একটা শিশুসুলভ ব্যাপার রয়েছে। দেখে খুব ভাল লাগছে।” কোচ প্রশান্তরও এক কথা, “ওর মনটা একেবারে বাচ্চাদের মতো।” প্রয়াগ কোচ সঞ্জয় সেনের চিন্তা জুড়েও পরিবর্তিত ফর্মের ওডাফা।
ব্যারেটো অনেক নীচে থাকেন ওডাফার। আকাশ পুরো দেখা যায় না সেখান থেকে। তবু সুব্রত এখনও তাঁকে দিয়েই আকাশ ছুঁতে চান। “ব্যারেটো খেলতে চাইলে ওকেই প্রথম থেকে খেলাব। দলের জন্য দুর্দান্ত দরদ ওর।” ব্যারেটোর পক্ষে পরের বছর খেলা সম্ভব? সুব্রত: “নিশ্চয়ই। ভারতের ফুটবলের যা মান, ব্যারেটোর সমস্যা হবে না।”
ফার্গুসন এখন স্কোলস-বন্দনায়। ওয়েঙ্গারের মুখে অঁরির স্তুতি। “মন্থর হলেও, পায়ে বল পড়লে অঁরি বা স্কোলস এখনও ভয়ঙ্কর। সাধারণ ফুটবলার ওই বয়সে ‘বাই বাই’ বলবে। ওরা নয়।” ওয়েঙ্গার বলেই দিয়েছেন। মোহন টিডি-র কথা শুনে আর্সেনাল কোচকে মনে পড়ল।
ব্যারেটোর মধ্যেও যেন স্কোলস এবং অঁরিকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন সুব্রত। হারিয়ে যাওয়া তারা-রা তো আবার ফুটে উঠছে ফুটবলের আকাশে!

রবিবারে আই লিগ

মোহনবাগান: প্রয়াগ ইউনাইটেড (যুবভারতী ২-০০),
চার্চিল-সালগাওকর (মারগাও)।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.