সলমন রুশদি নেই, তবু আছেন! শনিবার দুপুরে মুম্বই পুলিশের ডেপুটি কমিশনার নিসার তাম্বোলি জানান, জয়পুরের দিকে ভাড়াটে খুনি যাওয়ার খবর তাঁদের কাছে নেই। শুক্রবারই রুশদি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিলেন, মুম্বই ‘আন্ডারওয়ার্ল্ডের’ ভাড়াটে খুনিরা তাঁকে নিকেশ করার জন্য জয়পুর যাচ্ছে বলে খবর আছে। এই পরিস্থিতিতে তিনি সাহিত্য উৎসবে যাচ্ছেন না।
মুম্বই পুলিশের এই খবর জেনে উৎসবের অন্যতম উদ্যোক্তা সঞ্জয় রায়ের প্রতিক্রিয়া: ‘‘তা হলে বরং রাজস্থানের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব আর গোয়েন্দাপ্রধানকে জিজ্ঞেস করুন।” মহারাষ্ট্র এবং রাজস্থান পুলিশের মধ্যে এ ভাবেই একটি বিভাজিকা টেনে দিলেন তিনি। রাজস্থান পুলিশ অবশ্য নীরব। তাদের দিক থেকে প্রতিক্রিয়া নেই। শনিবার সকালে টুইটারে ‘ফলোয়ার’দের উদ্দেশে রুশদির বার্তা, ‘‘ওখানে এত সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ। ঘৃণা পেয়েছি, কিন্তু তার থেকেও বেশি সমর্থন পেলাম। আজ এখানেই ইতি। সাইনিং অফ, টুডে।’’
কে বলে, তিনি আসেননি? শনিবার সকালে ভিড়ে ঠাসা এক অনুষ্ঠানে ‘বেস্টসেলার’ লেখক চেতন ভগত সটান বললেন, “বই নিষিদ্ধ করাটা সমর্থন করি না। কিন্তু নিষিদ্ধ লেখকদের ‘হিরো’ বানিয়েও লাভ নেই।” তাঁর অনুপস্থিত উপস্থিতিই ঘিরে রাখল দ্বিতীয় দিনের সাহিত্য বাসরকে। ‘ফাইভ পয়েন্ট সামওয়ান’-এর লেখক এমন বললেন জেনে ‘সিরিয়াস’ সাহিত্য পাঠকেরা ক্ষুণ্ণ পারেন, কিন্তু চেতনের জনপ্রিয়তা ঠেকায় কে? স্কুল, কলেজের ছেলেমেয়েরাই তাঁর অন্যতম পাঠক, এ দিনও তারাই প্রধানতম ভিড়। ঠাসা প্যাভিলিয়ন, চেয়ারে জায়গা না পেয়ে ঘাসের ওপরেও বসে পড়লেন অনেকে। “অণ্ণা হাজারে আমি হতে পারব না, খিদে পায় যে।” এ রকম কত রসিকতাই যে করলেন তিনি! আগামী
সপ্তাহে বইমেলায় কলকাতার প্রথম সাহিত্য উৎসবে যোগ দেবেন তিনি।
চেতন নন, কলকাতার কথা জিজ্ঞাসা করছিলেন পাকিস্তানের লেখক মহম্মদ হানিফ। “সামনের সপ্তাহে তো কলকাতায় প্রথম সাহিত্য উৎসব, কেমন প্রস্তুতি চলছে?” জানতে চাইলেন ‘এ কেস অফ এক্সপ্লোডিং ম্যাঙ্গোজ’-এর লেখক। পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হকের বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে হানিফের ওই বই একদা বুকার পুরস্কারের বাছাই-তালিকাতেও উঠেছিল।
প্রস্তুতি? এখানে ডিগ্গি প্রাসাদের লনে পাঁচটি ঢাউস তাঁবুতে কোথাও চেতন ভগত, কোথাও বা গাঁধীর নতুন জীবনী লেখক জোসেফ লেলিভেল্ড। অন্য দিকে এম জে আকবর, আয়েষা জালাল। আর একটু এগিয়ে গেলে নাইজিরিয়ার বুকারজয়ী লেখক বেন ওকরি। ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ‘শিডিউল’ নিয়ে যেমন কোন ছবি দেখবেন পরিকল্পনা করে রাখতে হয়, জয়পুরও সে রকম। কলকাতায় তেমন নয়। একটি প্যাভিলিয়নেই পাঁচটি ‘সেশন’।
বইমেলার ভিড় নয়, জয়পুরের ‘বটমলাইন’টাই অন্য। প্রাসাদের বাইরে মেটাল ডিটেক্টর এবং পুলিশি চেকিং থাকলেও এক বার ঢুকে পড়লে নিশ্চিন্ত! অদূরে বুকার পুরস্কারে সম্মানিত, মাইকেল ওনদাতজের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছেন কবির বেদী। ভিড়ের মধ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন দীপ্তি নাভাল, গুলজার আর গিরিশ কারনাড। “এখানে লেখকরাই নায়ক, অন্য কেউ নন,” বলছিলেন উইলিয়াম ডালরিম্পল।
কলকাতার উৎসবে অবশ্য মহম্মদ হানিফ ছাড়াও পাকিস্তান থেকে আসছেন আর এক তারকা। ইমরান খান! “ইমরানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কেমন?’’ জিজ্ঞেস করেছিলাম হানিফকে। “ভালই। তরুণ-তরুণীরা ওকে চায়, অনেক দিন লেগে আছে। এই লেগে থাকাটা সম্মান করতে হয়। তা ছাড়া, লোকে ভাবছে মোল্লাতন্ত্র, সেনা বাহিনীর পাকিস্তানে ইমরানের ক্যারিশমা হয়তো কাজে আসবে। দেশটাকে বাঁচিয়ে দেবে।” বলছেন করাচির সাংবাদিক। ‘‘কিন্তু আপনিই লিখেছিলেন, যখনই ইমরানের প্রশংসা করব ভাবি, ও মুখ খোলে আর সব গুবলেট হয়ে যায়!’’ আড্ডা মারতে মারতে হেসে ফেললেন লেখক, ‘‘সে তো ঠিকই! ওর স্লোগান জানেন? পাকিস্তানকে সুইডেন, নরওয়ের মতো স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ বানাবে। পরিকাঠামো নেই, ক্ষমতার লড়াই অব্যাহত। পাকিস্তানকে স্ক্যান্ডিনেভিয়া বানিয়ে দেব বললেই হয়ে যায় নাকি?”
তাঁকে বলা গেল, পশ্চিমবঙ্গের পরবর্তনকামী মুখ্যমন্ত্রীও কলকাতাকে লন্ডন বানানোর অঙ্গীকার করেছেন। |