কিষেণজির হত্যার বদলা নিতে মাওবাদীরা কলাইকুণ্ডার বায়ুসেনা ঘাঁটিতে হামলার ষড়যন্ত্র করছে বলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সন্দেহ। বায়ুসেনা ঘাঁটি সংলগ্ন নিমপুরা পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে বায়ুসেনা ঘাঁটিতে ঢুকে পড়ার ছক কষেছে তারা।
গোয়েন্দা রিপোর্টে এ খবর পাওয়ার পরেই আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে গোটা বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানানো হয়। রাজ্য পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় রেখে বিমানঘাঁটির নিরাপত্তা চার গুণ বাড়ানো হয়েছে। মোতায়েন হয়েছে বাড়তি আধা সামরিক বাহিনী। তল্লাশির কাজে গোয়েন্দা কুকুরও নামানো হয়েছে।
রাজ্য পুলিশের এডিজি (আইবি) বাণীব্রত বসু জানিয়েছেন, ঝাড়গ্রামের এসপি-র নেতৃত্বে আক্রাশোলের জঙ্গলে অভিযান চালিয়ে মাওবাদী হামলার পরিকল্পনার কথা জানা গিয়েছে। তিনি বলেন, “একটি ম্যাপ-সহ মাওবাদীদের কিছু নথি উদ্ধার হয়েছে। এর পরে ঝুঁকি না-নিয়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।” স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য, পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালানোর পর বিমানঘাঁটির ভিতরে ঢুকে পড়ার ছক কষেছে মাওবাদীরা। অন্তত ৭০-৮০ জন মাওবাদী গেরিলা তিন দিক থেকে আক্রমণ করবে, এমনই পরিকল্পনা করা হয়েছিল। শিলদায় ইএফআর ক্যাম্পে যে ভাবে হামলা হয়েছিল, এ ক্ষেত্রেও ঠিক সেই ভাবে হামলার ছক কষেছিল মাওবাদীরা। বাইরে থেকে যৌথবাহিনী যাতে সাহায্যের জন্য আসতে না পারে, সে জন্য বেশ কিছু জায়গায় ল্যান্ডমাইন পুঁতে রাখার পরিকল্পনা ছিল তাদের।
আজই ঝাড়খণ্ডের সালো জঙ্গলে মাওবাদীদের ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে ১৩ জন পুলিশের মৃত্যু হয়েছে। গোয়েন্দারা মনে করছেন, এ সবই হচ্ছে প্রজাতন্ত্র দিবসকে সামনে রেখে। ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার গৌরব শর্মা জানিয়েছেন, গত ক’দিনে জঙ্গলে তল্লাশির সময় মাওবাদীদের কিছু পত্রপত্রিকা ও নথিপত্র উদ্ধার হয়েছে। তা থেকেই মাওবাদী ষড়যন্ত্রের কথা জানা গিয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, গত সপ্তাহে ইন্দ্রাবতী জঙ্গল থেকে মাওবাদীদের প্রতি সহানুভূতিশীল এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়।
জেরায় তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরও ছয় মাওবাদীকে আটক করে পুলিশ। তারাই কলাইকুণ্ডা বিমানঘাঁটিতে হামলার পরিকল্পনার কথা জানায়। সেই অনুযায়ীই মাওবাদী ডেরাগুলিতে তল্লাশি শুরু হয়। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, শুক্রবার ঝাড়গ্রামের নুনিয়াশোল এলাকায় মাওবাদীদের ফাঁকা ডেরা থেকে একটি ম্যাপ উদ্ধার করে যৌথ বাহিনী। দেখা যায়, সেই ম্যাপে কলাইকুণ্ডার নিমপুরা পুলিশ ফাঁড়িটিকে বিশেষ ভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। নিমপুরা ফাঁড়িটির অবস্থান কিছুটা জঙ্গলঘেঁষা এলাকায়। সে কারণে আচমকা হামলা চালিয়ে জঙ্গলে গা-ঢাকা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। তাই ফাঁড়িটিকে ‘টার্গেট’ করা হচ্ছিল বলে মনে করছে পুলিশ। তা ছাড়া, পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা ‘সফল’ হলে বায়ুসেনা ঘাঁটিতে ঢুকে পড়ার পরিকল্পনাও মাওবাদীদের ছিল বলে মনে করা হচ্ছে।
মাওবাদীরা এর আগে বিভিন্ন রাজ্যে ফৌজি হেলিকপ্টারের উপরে হামলার চেষ্টা করেছে। কিন্তু বায়ুসেনার উপরে ঘাঁটিতে হামলার পরিকল্পনা এই প্রথম। বিমানঘাঁটির নিরাপত্তায় যাতে কোনও গাফিলতি না হয়, তার জন্য সব রকম সতর্কতা নেওয়ার জন্য রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষস্তরে আবেদন জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রের বক্তব্য, কিষেণজির হত্যার পরে মাওবাদীদের মনোবল অনেকটাই ভেঙে দেওয়া গিয়েছে। কিন্তু কোনও বিমানঘাঁটিতে হামলা চালাতে পারলে ফের তারা সংগঠন চাঙ্গা করার সুযোগ পেয়ে যাবে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠি বলেন, “শুধু কলাইকুণ্ডা নয়, জঙ্গলমহল ও লাগোয়া এলাকাতেও প্রজাতন্ত্র দিবসের আগে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।” পরিস্থিতি পর্যালোচনায় জেলা প্রশাসনের সঙ্গে পুলিশ-কর্তাদের বৈঠক হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে জানিয়েছে রাজ্য সরকার। |