যান্ত্রিক বিভ্রাটের জেরে গোটা দিন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটকে থাকল এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের ঢাকা থেকে সিঙ্গাপুরগামী বিমান। উড়ান থমকে যাওয়ার পর দীর্ঘ সময় ধরে ‘চূড়ান্ত হয়রানি’র অভিযোগে সরব হন যাত্রীদের একাংশ। বিমানসংস্থা তাঁদের ন্যূনতম স্বাচ্ছন্দ্যেরও ব্যবস্থা করেনি বলে দাবি করে শনিবার দফায়-দফায় বিমানবন্দরে বিক্ষোভ দেখান যাত্রীরা।
ঢাকা থেকে কলকাতা আসা পর্যন্ত কোনও সমস্যা দেখা দেয়নি। শুক্রবার রাত ৩টে ২৫ মিনিটে কলকাতা থেকে ছাড়ার কথা ছিল এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের ওই বিমানটির (আইএক্স ৯৩২)। সেই মতো ‘বোর্ডিং’-এর পরে ওড়ার অপেক্ষায় ছিলেন যাত্রীরা। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, যাত্রীরা বিমানে ওঠার প্রায় আধ ঘণ্টা পরে ককপিটে যান্ত্রিক ত্রুটির কথা ঘোষণা করা হয়। আর ভোর পৌনে পাঁচটা নাগাদ জানিয়ে দেওয়া হয়, বিমানের ত্রুটি সারাতে সময় লাগবে। যাত্রীদের ‘ট্রানজিট পাস’ ধরিয়ে বিমান থেকে নামিয়ে লাউঞ্জে বসানো হয়। যাত্রী ছিলেন ১৩৫ জন। তাঁদের মধ্যে ৫৯ জন কলকাতা থেকে উঠেছিলেন। দুপুরও গড়িয়ে যাওয়ার পরে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়, রবিবার ভোর চারটের পরে বিমানটি কলকাতা ছাড়বে।
ঠিক কী কারণে এতটা সময় থমকে গেল এই উড়ান?
এয়ার ইন্ডিয়ার বক্তব্য, ওড়ার ঠিক আগে যান্ত্রিক ত্রুটি লক্ষ্য করেছিলেন বিমানচালক। তা মেরামত করা যায়নি। পরে মুম্বই থেকে ইঞ্জিনিয়ারদের ডেকে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ এনে মেরামত করতে করতে বেলা একটা বেজে যায়। কিন্তু ততক্ষণে পাইলট-সহ বিমানকর্মীদের ডিউটির নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গিয়েছে। অথচ হাতে বিকল্প কেউ নেই। এর ফলে, উড়ানটির ছাড়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। এয়ার ইন্ডিয়া সূত্রের খবর, নিয়ম অনুযায়ী, পাইলট-সহ বিমানকর্মীদের আট ঘণ্টা ডিউটির পরে ১৬ ঘণ্টা বিশ্রাম নেওয়ার কথা। তাই বিমানটির মেরামতির পরেও এ দিন দুপুরে উড়ান চালু করা সম্ভব হয়নি।
দুপুরের পরেও যে বিমান ছাড়বে না, এই ঘোষণা শোনার পরেই শুরু হয় যাত্রীদের বিক্ষোভ। বিমানসংস্থার অবশ্য বক্তব্য, কলকাতা ও কাছেপিঠের লোকেদের বাড়িতে যাতায়াতের ট্যাক্সি ভাড়া দেওয়া হয়েছিল। এ দেশের নাগরিক অথচ দূরে বাড়ি যাঁদের, তাঁদের হোটেলে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। ভারতে ঢোকার ভিসা না-থাকায় বাংলাদেশের যাত্রীদের বিমানবন্দরের লাউঞ্জেই রাখা হয়। অনেক যাত্রীরই কিন্তু অভিযোগ, তাঁরা দিনভর প্রাতরাশ, মধ্যাহ্নভোজ কিছুই পাননি।
বাঁকুড়ার প্রবীণ দম্পতি রাজেন্দ্র ও ঊষা সিংহ সিঙ্গাপুরে ছেলের কাছে যাচ্ছেন। শুক্রবার রাত থেকে তাঁরা বিমানবন্দরেই পড়ে থেকেছেন। এ দিন বিকেলে রাজেন্দ্রবাবু বললেন, “চরম অব্যবস্থা। বিশ্রী ‘কমিউনিকেশন-গ্যাপ’। কেন উড়ান ছাড়ছে না, তার এক-এক বার এক-এক রকম কারণ বলা হচ্ছিল। আমরা অনেকেই খাবার-টাবার পাইনি।” বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জয়ন্ত দত্তের কথায়, “আমার স্ত্রী অসুস্থ। হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করার কথা ছিল এয়ার ইন্ডিয়ার। সেটুকুও কেউ দেয়নি।” ‘অব্যবস্থা’র জেরে শিশু ও বয়স্কদের নিয়ে অনেকেই সমস্যায় পড়েন বলে অভিযোগ। বিমানসংস্থাটির অবশ্য দাবি, সবাইকে যথাসাধ্য দেখভাল করা হয়েছে। |