নেতাজির জন্মজয়ন্তী
বিমানদের ‘ধন্যবাদ’ বদলে গেল ‘সংঘাতে’
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মজয়ন্তী নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেওয়া বামেদের ‘ধন্যবাদ’ বদলে গেল ‘সংঘাতে’। কাল, সোমবার নেতাজির জন্মদিন। ময়দানে নেতাজির মূর্তিতে মাল্যদানের সরকারি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পাননি নেতাজি জন্মোৎসব কমিটির সদস্য বামফ্রন্টের প্রতিনিধিরা। এর পরেই বামফ্রন্টের সিদ্ধান্ত কাল দুপুরে মুখ্যমন্ত্রীর পরেই নেতাজি-মূর্তিতে মালা দেওয়ার জন্য সাধারণের লাইনেই দাঁড়াবেন বাম নেতারা। তখন পুলিশ তাঁদের বাধা দিলে ‘প্রতিবাদ’ জানিয়ে ফিরে আসবেন। রাজ্য সরকারের তরফে নেতাজি জন্মোৎসব কমিটিকে মূর্তিতে মাল্যদানের জন্য সময় দেওয়া হয়েছে দুপুর ১টা ৩০ থেকে ৩টে পর্যন্ত। বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুর স্পষ্ট কথা, “প্রতি বারের মতো এ বারও আমরা ১২টা ১৫-তেই মালা দেওয়ার চেষ্টা করব। কারণ, ওই সময়েই নেতাজির জন্ম হয়েছিল বলে মানা হয়।”
রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় ভাবে ময়দানে নেতাজি মূর্তিতে মালা দিয়ে তাঁর জন্মজয়ন্তী পালন করে বেলা ১২টা ১৫ মিনিটে। বাম আমলে রাজ্য সরকার ও নেতাজি জন্মোৎসব কমিটির যৌথ উদ্যোগে ওই অনুষ্ঠান হত। জ্যোতি বসু ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁদের মাল্যদানের পরেই কমিটির প্রতিনিধিরা মালা দিতেন। কিন্তু মমতা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সরকারি অনুষ্ঠান রাজ্য একাই করবে। ‘বিবাদ’ তা নিয়েই।
মহাকরণে নেতাজিকে শ্রদ্ধার্ঘ্য ‘ঝাঁসি বাহিনী’র সেনানী অরুণা চট্টোপাধ্যায়ের। রয়েছেন বাহিনীর অন্য
সেনানী লাবণ্য চট্টোপাধ্যায়(বাঁ দিকে), প্রাক্তন সাংসদ কৃষ্ণা বসু এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ক’দিন আগেই নেতাজির জন্মদিন পালন নিয়ে মমতার ‘উদ্যোগ’কে স্বাগত জানিয়েছিলেন বামফ্রন্টের নেতারা। কিন্তু নেতাজির জন্মদিবসের দু’দিন আগে তাঁরা মমতার সঙ্গে ‘সংঘাতে’ নেমে পড়লেন। এর মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী নেতাজির জন্মদিবসের দু’দিন আগেই শনিবার মহাকরণে নেতাজির জন্মদিন ‘পালন’ করায় ‘বিতর্ক’ আরও বেড়েছে। এ দিন বামফ্রন্টের বৈঠকের পর প্রশ্নের জবাবে বিমানবাবু বলেন, “রাইটার্সের ক্যালেন্ডার আর জনগণের ক্যালেন্ডার আলাদা। জনগণের ক্যালেন্ডারে নেতাজির জন্মদিন ২৩ জানুয়ারি। আমরা জনগণের মধ্যে আছি। তাই নেতাজির জন্মদিন ২৩ জানুয়ারিই পালন করব। কিন্তু রাইটার্সের ক্যালেন্ডারে জন্মদিন হয়তো দু’দিন আগে!” বিমানবাবুর আরও কটাক্ষ, “রাইটার্সে যাঁরা আছেন, তাঁরা কারও কারও জন্মক্ষণ ঠিক করেন। যেমন বিবেকানন্দের জন্মদিনও এক দিন আগে পালন করা হয়েছিল।”
মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, “আগে জন্মদিন পালন করা নিয়ে এত খুঁতখুঁতানি কেন? মনীষীদের জন্মদিন তো রোজই পালন করা যায়! তা ছাড়া, আগামিকাল (রবিবার) ছুটি। ২৩ জানুয়ারি সরকারি সমস্ত অনুষ্ঠান তো
হবেই।” স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিন এক দিন আগে পালন করা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তি, “বিবেকানন্দের জন্মদিনে জঙ্গলমহলে ছিলাম। তাই ওই অনুষ্ঠান মহাকরণে আগের দিন পালন করেছি।” দল যে মুখ্যমন্ত্রীর এই কাজকে সমর্থন করছে, তা পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কথায় স্পষ্ট। নাম না করে বামেদের কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “লেনিনের জন্মদিন তো সাত দিন ধরে পালন করা হয়!”
নেতাজির জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে ‘ঝাঁসি বাহিনী’র দুই সেনানী লাবণ্য চট্টোপাধ্যায় এবং অরুণা চট্টোপাধ্যায়।
২০১১ সালে বামফ্রন্ট সরকার নেতাজির জন্মদিনকে ‘দেশপ্রেম দিবস’ হিসাবে পালনের দাবি জানিয়েছিল। যদিও তাদের আবেদনে কেন্দ্রীয় সরকার সাড়া দেয়নি। ২৩ জানুয়ারিকে ‘দেশপ্রেম দিবস’ হিসাবে ঘোষণা করার জন্য এ বারও নেতাজি জন্মোৎসব কমিটি রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করে। সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে মমতা প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিও লেখেন। মমতার ওই উদ্যোগকে ‘ধন্যবাদ’ জানান বিমানবাবু। ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক তথা নেতাজি জন্মোৎসব কমিটির প্রধান অশোক ঘোষ ২৩ জানুয়ারি নেতাজির মূর্তিতে মাল্যদান করার জন্য অনুরোধ করেন মমতাকে। মমতা সেই আবেদনেও সাড়া দেওয়ায় তাঁকে ‘স্বাগত’ জানান অশোকবাবু। বিমানবাবু-অশোকবাবুরদের ধারণা ছিল, প্রতি বছরের মতো এ বারও ময়দানে নেতাজি মূর্তিতে মুখ্যমন্ত্রীর মাল্যদানের পরেই মাল্যদানের জন্য ডাক পড়বে নেতাজি জন্মোৎসব কমিটির সদস্যদের। ফলে মমতার পরে অশোকবাবু, বিমানবাবুরা মালা দেবেন। কিন্তু এ দিন সরকারি ভাবে নেতাজি জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানসূচির বিজ্ঞপ্তি জারির পরেই বিমানবাবুরা বুঝতে পারেন, সরকারি অনুষ্ঠানে তাঁরা ‘ব্রাত্য’। তার পরেই তাঁরা প্রতিবাদের রাস্তা নেন। বিমানবাবু বলেন, “নেতাজির মূর্তি জনগণের। মহাকরণের জন্য নয়। আমরা জনগণের সঙ্গে থেকেই মালা দেব। নইলে রাজ্যের ৪৪ জন মন্ত্রীর পর আমরা ৪৫ নম্বর হিসাবে মালা দেব। তাই লাইনে দাঁড়াব।”
এ দিন দুপুরে মহাকরণে নেতাজির ছবিতে মুখ্যমন্ত্রী মালা দেওয়ার সময় ছিলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র, নারী ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র, মুখ্যসচিব সমর ঘোষ প্রমুখ। এ ছাড়া, ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ’-এর ‘ঝাঁসি বাহিনী’র দুই সেনানী লাবণ্য চট্টোপাধ্যায় এবং অরুণা চট্টোপাধ্যায় ছিলেন। ছিলেন তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ তথা নেতাজি পরিবারের সদস্য কৃষ্ণা বসুও।

ছবি: সুমন বল্লভ
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.