মালদহ হাসপাতালে আরও একটি শিশু বিভাগ খোলার সিদ্ধান্ত নিল স্বাস্থ্য দফতর। অবিলম্বে শয্যা বাড়ানো হবে হাসপাতালের ‘সিক নিউবর্ন কেয়ার ইউনিট’ (এসএনসিইউ)-তেও।
ওই হাসপাতালে পর পর শিশুমৃত্যুর ঘটনা এবং রোগীর প্রবল চাপের প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে স্বাস্থ্য-কর্তারা জানান। মালদহ হাসপাতাল পরিদর্শন করে কী ভাবে এসএনসিইউ-টি আরও বাড়ানো যায়, তা নিয়ে আলোচনা করতে আজ, শনিবার স্বাস্থ্য ভবনে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ডাকা হয়েছে। তাতে জেলা স্বাস্থ্য-কর্তাদের পাশাপাশি, মালদহের জেলাশাসকেরও হাজির থাকার কথা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত মালদহ হাসপাতালে আরও ৩টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। |
হাসপাতালের শিশু বিভাগ। নিজস্ব চিত্র |
এ নিয়ে গত তিন দিনে সেখানে ১৮টি শিশুর মৃত্যু হল। মালদহ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ দেবাশিস ভট্টাচার্যের দাবি, “ওই তিনটি শিশুকে খুব খারাপ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তাই তাদের বাঁচানো সম্ভব হয়নি।”
মালদহের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বপনকুমার ঝরিয়াত বলেন, “হাসপাতালে ৯০টি শয্যা রয়েছে শিশুদের জন্য। ভর্তি ২০০ জনের বেশি। সে জন্য আর একটি শিশু বিভাগ খোলা হচ্ছে। তাতে ৭০টি শয্যা থাকবে। এসএনসিইউ-এর শয্যা ১৬ থেকে বাড়িয়ে ২২টি করা হচ্ছে। বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ১৬ জন নার্সকে সদর হাসপাতালে আনা হচ্ছে।” স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, সোমবার কলকাতা থেকে চার শিশুরোগ বিশেষজ্ঞও হাসপাতালে পৌঁছবেন। রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিবের কাছে এ দিন দফতরেরই টাস্ক ফোর্সের রিপোর্ট জমা পড়ে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, শিশুমৃত্যুর ঘটনায় প্রাথমিক ভাবে এসএনসিইউ-এর কোনও চিকিৎসকের গাফিলতি ছিল না বলেই জানানো হয়েছে ওই রিপোর্টে। তবে হাসপাতালের শিশু বিভাগে চিকিৎসকদের নিয়মিত দেখা পাওয়া যায় না বলে রোগীর আত্মীয়দের যে অভিযোগ ছিল, তদন্তে তার ‘প্রমাণ’ পেয়েছে টাস্ক ফোর্স। তারই ভিত্তিতে ওই হাসপাতালের শিশু বিভাগের দুই চিকিৎসককে বদলির সুপারিশও করা হয়েছে টাস্ক ফোর্সের রিপোর্টে।
মালদহের এসএনসিইউ-এ নবজাতকদের জন্য ‘ভেন্টিলেটর’ থাকলে বেশ কয়েকটি শিশুকে বাঁচানো যেত বলে অনেকেই মনে করছেন। কেন সেখানে ‘ভেন্টিলেটর’ নেই? স্বাস্থ্য দফতরের টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ধাপে ধাপে সব হবে। তা ছাড়া, শুধু ভেন্টিলেটর কিনলেই হয় না, সেগুলো চালানোর লোক কোথায়?” ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’-এর তরফে একটি প্রতিনিধি দলও এ দিন মালদহ হাসপাতাল পরিদর্শন করে। তারাও একটি রিপোর্ট স্বাস্থ্য দফতরে জমা দিয়েছে। মালদহের পাশের জেলা উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে এ দিন পরিদর্শনে গিয়েছিল বিধানসভার স্বাস্থ্য বিষয়ক স্থায়ী কমিটি। কমিটির চেয়ারম্যান তথা শিলিগুড়ির বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, “মালদহের পরিস্থিতি সরেজমিনে পরিদর্শনের পরে রিপোর্ট দেওয়া হবে।” |