দাম মেলেনি ধানের, ম্লান মকর
নেক বছর পরে এ বার মাঠ ভর্তি ধান দেখেছিল পুরুলিয়া। কিন্তু ন্যায্য দাম না মেলায় এ বার বিষন্ন মকর পরব কাটল অনেকেরই। এ জন্য সরকারি সহায়ক মূল্যে ভাল ভাবে ধান কেনার কাজ শুরু না হওয়াকেই দুষছেন তাঁরা।
জেলা কৃষি দফতর জানিয়েছে, এ বার জেলায় প্রায় ১০ লক্ষ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছে। তাই চাষিরা এ বার ধান বিক্রি করে ঘরে টাকা আনবেন বলে আশায় বুক বেঁধেছিলেন। ধান কেনার কাজ দেখতে এসে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক আশ্বাস দিয়েছিলেন, ধান কেনায় আরও জোর দেওয়া হচ্ছে। চাষিদের বাস্তব অভিজ্ঞতা, মন্ত্রীর আশ্বাসই সার। ধান কেনায় গতি আসেনি। এমনিতে জেলায় চালকলের সংখ্যা মাত্র ১২টি। তার মধ্যে কয়েকটি আবার নাম মাত্র পরিমাণের ধান কিনেছে। সমবায়গুলির মাধ্যমেও ধান কেনার কাজ বিশেষ এগোয়নি। জেলা খাদ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত ১৬ হাজার ২৫৪ মেট্রিক টন ধান কেনা হয়েছে। তার মধ্যে চালকলগুলি থেকে কেনা হয়েছে ১৫,২৮৬ মেট্রিক টন ধান। বাকি ধান কেনা হয়েছে সমবায়গুলির মাধ্যমে।
এই পরিস্থিতিতে ফড়েদের কাছেই চাষিদের অল্প দামে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। চাষিরা জানিয়েছেন, পৌষ সংক্রান্তির মকর পরবে ছেলে-মেয়েদের নতুন জামাকাপড় কিনে দেওয়ার আবদার ছিল। তাই অনেকেই ধান বিক্রি করার জন্য আর অপেক্ষা করতে না পেরে কম দামেই ফড়েদের কাছে ধান বিক্রি করেছেন। যেমন আড়শা ব্লকের কেন্দুয়াডি গ্রামের বাসিন্দা প্রভাত সিংহ লায়া বলেন, “টাকার অভাবে বাধ্য হয়ে কুইন্ট্যাল প্রতি ৭৭০ টাকা দরে ধান বিক্রি করে মকর পরবের সময় বাচ্চাদের জামাকাপড় কিনে দিয়েছি। সরকারি দামের আশায় আর কতদিন বসে থাকব?” হুড়া ব্লকের পিয়ালশোল গ্রামের শশাঙ্ক মাহাতো ও মাগুড়িয়া গ্রামের তিলকা কর্মকারদের অভিযোগ, “সরকারি ভাবে ধান কেনার উদ্যোগ নেই। তাই নিরুপায় হয়ে কুইন্ট্যাল প্রতি মাত্র ৭২০ টাকা দরে ধান বিক্রি করেছি।
চালকলগুলি কেন ধান কিনতে পারছে না? আড়শার বলরামপুরের চাষি সুফল মাহালির দাবি, “অনেকের কাছেই শুনেছি চালকলে ধান কিনছে না। দিন কয়েক আগে আড়তদারের কাছে ৭৭০ টাকা কুইন্ট্যাল দরে ধান বিক্রি করেছি। এ বার শসা চাষ করব। সে জন্যই ওই দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি।” জেলা চালকল মালিক সংগঠনের সম্পাদক মনোজ ফোগলা বলেন, “১২টি চালকলের মধ্যে টাকার অভাবে হুড়া, আড়শা ও কাশীপুরের ৩টি চালকল চাষিদের কাছ থেকে ধান কিনতে পারছে না। টাকা ছাড়া ধান কিনব কীভাবে?” তিনি জানান, এ ছাড়া অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিগমকে সঙ্গে নিয়ে ১৯টি সমবায়ের মাধ্যমে ধান কেনা শুরু করেছিলাম। কিন্তু নানা সমস্যায় বেশি দিন সে ভাবে ধান কেনা যায়নি। চাষীদের অভিযোগ, কিছুদিন আগে বিক্ষিপ্তভাবে কয়েকটি সমবায় ধান কেনার কাজ শুরু করেছিল। কিন্তু তারা ধান কেনার কাজ হঠাৎ বন্ধ করে দেয়। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারিভাবে পুরুলিয়ায় ধান কেনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বেনফেডকে। বেনফেডের বক্তব্য, টাকা না পাওয়ায় তাঁরা ধান কেনার কাজ শুরু করতে পারছেন না। বেনফেডের জেলা প্রবন্ধক বিশ্বনাথ দে বলেন, “ধান কেনার জন্য আমরা জেলার ৬৪টি সমবায়কে ঠিক করেছিলাম। কিন্তু সরকারের কাছ থেকে টাকা না পাওয়ায় অধিকাংশ সমবায় এখনও ধান কেনার কাজ শুরু করতে পারেনি। অল্প কিছু সমবায় নিজস্ব তহবিল থেকে প্রায় দেড় হাজার কুইন্ট্যাল ধান কিনেছে।”
তবে চাষিদের কম দাম দিয়ে মুনাফা করছেন না বলে দাবি করেছেন ফড়েরা। হুড়া থানার মাগুড়িয়া গ্রামের আড়তদার গণেশ মুদি ও বড়গ্রামের আড়তদার বাবলু মুদিদের বক্তব্য, “এখান থেকে ধান কিনে বর্ধমানে গিয়ে সেই ধান বিক্রি করার পরে সামান্য মুনাফা থাকছে। আমরা চাই না চাষিদের লোকসান হোক।” তবে বিষন্ন মকর পরব কাটিয়ে চাষিরা হতাশ। তাঁদের খেদ, “অনেক বছর পরে ঘরে এত ধান উঠল। অথচ বিক্রি করে মকর পরবের আনন্দও ভোগ করতে পারলাম না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.