বর্তমানে কলেজ ছাত্র সংঘর্ষ, অধ্যাপকদের হেনস্থা করা একটা রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন তো আগে ছিল না। প্রত্যেকটি কলেজে ছিল একটি পঠন-পাঠনের একটা সুস্থ পরিবেশ, অধ্যাপকদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা আর ভক্তি। প্রতিটি কলেজে ছাত্র ইউনিয়নও ছিল। ছাত্রদের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসত ইউনিয়ন, ছাত্রদের সুখ-দুঃখের পাশে দাঁড়াত ইউনিয়ন। আয়োজন করত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিতর্ক সভা, আলোচনাচক্র, নকল বিধানসভা। ছাত্রছাত্রী, অধ্যাপকেরা ওই সব অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতেন। ছাত্রদের মধ্যে গড়ে উঠত একটা ভ্রাতৃত্বভাব, নিবিড় সম্পর্ক তৈরি হত ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে। ষাট দশকের আগে পর্যন্ত কৃষ্ণনাথ কলেজ ইউনিয়নের দখল ছিল ছাত্র ফেডারেশনের। পিএসইউ-এর ছিল প্রতিপত্তি। ছাত্রপরিষদ ছিল না। ১৯৬০ সালে আমরা কয়েক জন মিলে প্রথম ছাত্রপরিষদ খুলে ছিলাম। এই কয়েক জনের মধ্যে পরিমল মিশ্র ছাড়া আর কেউ রাজনীতি করতেন না। প্রথম বছরেই বিপুল ভোটে ছাত্রপরিষদ কৃষ্ণনাথ কলেজের ইউনিয়ন দখল করল। দীর্ঘ দিন বাদে ছাত্র ফেডারেশনের ক্ষমতা হারাল কিন্তু সেদিন কলেজে কোনও রকম অশান্তি বা ছাত্র সংঘর্ষ হয়নি। নওদা প্রাক্তন বিধায়ক আরএসপি-র জয়ন্ত বিশ্বাস সেই সময়ে ছিলেন বিশিষ্ট ছাত্রনেতা। তিনি আমাদের ইউনিয়ন চালানোর পাঠ দিতেন এবং আমরা তা গ্রহণ করতাম। সেদিন কিন্তু আমরা রাজনীতির রং দেখিনি। প্রত্যেক দলের ছাত্রদের মধ্যে ছিল একটা সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক, যেন সবাই একই পরিবারের সদস্য। ক্ষমতা দখলের লড়াই ছিল না। লড়াই ছিল বক্তৃতা মঞ্চে। কলেজ করিডরে নয়। সেই সময়ে কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. রামচন্দ্র পাল। তিনি ছিলেন প্রকৃত ছাত্রদরদী মানুষ। ছাত্ররা তাদের যে কোনও সমস্যা নিয়ে যে কোনও সময় তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পারতেন। তিনি সহজেই সমস্যার মীমাংসা করে দিতেন। তৎকালীন বিশিষ্ট সিপিএম নেতা অধ্যাপক রেণুপদ দাস (পরে তিনি কৃষ্ণনগরের সাংসদ হন) ছিলেন অত্যন্ত ছাত্রদরদী। প্রত্যেকটি ছাত্রকে তিনি পুত্রজ্ঞানে স্নেহ করতেন। ছাত্র আর শিক্ষকদের মধ্যে একটা মধুর সম্পর্ক ছিল। কলেজে কোনও রাজনৈতিক নেতা বা নেত্রীর আগমন ছিল না। ছাত্ররা তাদের সমস্যা নিজেরাই মিটিয়ে নিত। আমরা কলেজের আগের দিনগুলি ফিরিয়ে আনতে পারি না? তৈরি করতে পারি না কলেজ একটা সুস্থ পঠনপাঠনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে? অধ্যাপকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে? ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে একটা বন্ধুত্বের ভাব গড়ে তুলতে? কলেজে কলেজে একটা শান্তির বাতাবরণ গড়ে উঠুক, এই প্রার্থনা করি।
নারায়ণ সরকার, প্রাক্তনী, কৃষ্ণনাথ কলেজ
|
বহরমপুর শহরের কল্পনা সিনেমা হল লাগোয়া যে ব্যস্ত রাস্তাটি ইন্দ্রপ্রস্থের দিকে চলে গিয়েছে তার পাশেই রয়েছে ছোটমুরি নামের বড়সড় একটি নিকাশি নালা। সুগভীর ওই নালার পাশে কোনও রেলিং নেই। ওই রাস্তাটির শেষ প্রান্তের কিছুটা এলাকায় অবশ্য সম্প্রতি রেলিং দেওয়া হয়েছে। অথচ অজ্ঞাত কারণে ওই রাস্তাটি যেখান থেকে শুরু হয়েছে সে দিকে কোনও রেলিং দেওয়া হয়নি। ওই রাস্তা দিয়ে ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে ও গৃহশিক্ষকের বাড়িতে যায়। ওই রাস্তা দিয়েই মোটরবাইক ও রিক্সা চলাচল করে। তার ফলে সাইকেল আরোহী কোনও ছাত্রছাত্রীর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ওই গভীর নিকাশী নালায় পড়ে যাওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। তা ঘটলে বড় ধরণের দুর্ঘটনা হবে। ফলে ওই আশঙ্কা দূর করতে ওই নিকাশী নালার পাশে দ্রুত রেলিং দেওয়ার জন্য বহরমপুর পুরপ্রধানের কাছে বিনীত আবেদন জানাই।
সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়, কাদাই, বহরমপুর।
|
নদিয়া জেলার করিমপুর বাংলাদেশের সীমানা লাগোয়া তেহট্ট মহকুমার ছোট্ট একটি গ্রাম। মুর্শিদাবাদ লোকসভার ও করিমপুর বিধানভার অর্ন্তগত ওই গ্রামটি ও সমগ্র ওই এলাকাঞ্চলটি কৃষিপ্রধান। ওই এলাকার মানুষ কয়েক দশক ধরে ওই এলাকা দিয়ে রেলপথ নিয়ে যাওয়ার দাবি জানাচ্ছেন। গাবি পূরণে আশ্বাসও মাধে মধ্যে বিশেষত নির্বাচনের মুখে শোনা যায়। কিন্তু এই পর্যন্তই। পূর্বরেলের শিয়ালদহ বিভাগের যে রেললাইনটি কৃষ্ণনগর দিয়ে চলে গিয়েছে অথবা পলাশি পর্যন্ত যে লাইনটি গিয়েছে সেটি জনবসতিপূর্ণ করিমপুর পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া দেশের সীমান্ত লাগোয়া ওই এলাকার কয়েক লক্ষ মানুষ উপকৃত হবেন। ওই এলাকা দিয়ে রেল লাইন সম্প্রসারিত করা হলে কৃষিপণ্যের বাজারও খুলে যাবে। এ কারণে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের কাছে অনুরোধ, আমজনতার কয়েক দশকের ওই দাবি পূরণ করে এলাকার উন্নয়ন ঘটান।
অনুশ্রী মিত্র, করিমপুর
|
সুতি থানার বাজিতপুর গ্রামে একটি বিরাট পুকুরের সামনে স্থাপিত যে মন্দিরটিকে ঘিরে মাঘ মাসের প্রথম রবিবার বিরাট মেলা বলে, তার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে মধ্যযুগের ইতিহাসের অনুসঙ্গ। প্রায় চারশো বছর আগে বালকানন্দ নামে সন্ন্যাসী মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। যাদব রায় নামে এক দেববিগ্রহও প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ঘটনাক্রমে সর্বেশ্বর, বলরাম, মদনমোহন ও শ্যামচাঁদের বিগ্রহ এই মন্দিরে প্রতিষ্ঠা পায়। কোনও অজ্ঞাত কারণে শ্যামচাঁদ বিগ্রহটি বাজিতপুর থেকে হিলোড়া গ্রামে স্থানান্তরিত হয়। জনশ্রুতি, তিন ভাইয়ের সঙ্গে শ্যামচাঁদের বনিবনা না হওয়ায় তাঁর এই পৃথক অবস্থান। বাজিতপুরে মূল মন্দিরের চারদিকে অনেকগুলি কক্ষ। একটি ঘরের তীরে একদা যুদ্ধের কিছু চিত্র খোদাই করা হয়েছিল। অনেকে মনে করেন, গিরিয়ার যুদ্ধের স্মরণে মন্দিরগৃহের তীরে ওই যুদ্ধচিত্র অঙ্কিত হয়েছিল। সেই হিসেব ধরলে বর্তমান মন্দিরটি ১৭৪০ সালের পর নির্মিত হয়েছিল বলে ভাবা যেতে পারে। মন্দিরের পাশে গঙ্গা-ভাগীরথীর এই সঙ্গমস্থলটি যে একদা পুণ্যভূমি ছিল, তা গুরুদাস সরকার ‘সুতীর পুরাবৃত্ত’-এর মধ্যেও উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন যে, সম্ভবত ১৫১৬ সালে চৈতন্যদেব রামকেলি যাওয়ার পথে সুতিতে গঙ্গাস্নান করেন। চৈতন্যভাগবতের অন্ত্যখণ্ড চতুর্থ অধ্যায়ে রয়েছে‘গঙ্গাতীরে প্রভু লাইলেন পথ, স্নানদানে গঙ্গার পুরিল মনোরথ।’
সাধন দাস, ভৈরবটোলা-লবনচোয়া |