ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে মা। উঠোনের মূল প্রবেশপথে ছেলে। দু’জনেই শুনেছেন, পাড়ায় চিতাবাঘ বেরিয়েছে। তা নিয়েই মায়ে-পোয়ে চলছিল জল্পনা। আচমকাই মা দেখলেন, ছেলের পিছনে কালো-হলুদ একটা শরীর। চীৎকার করে সাবধান করার আগেই চিতাবাঘ লাফিয়ে পড়ল ছেলের ঘাড়ে।
বাঘ বেরোবার খবর পেয়ে এক ডিম ব্যবসায়ী জোর কদমে ডিম নিয়ে ‘বিপজ্জনক’ জায়গা পেরোচ্ছিলেন। কিন্তু সামনে বা পিছন থেকে নয়। ‘বিপদ’ ঝাঁপিয়ে পড়ল মাথার উপর থেকে।
ফের গুয়াহাটিতে ত্রাস ছড়াল চিতাবাঘ। শিলপুখুরিতে চিতাবাঘের আক্রমণে ১ জন নিহত, পাঁচজন জখম হওয়ার ১৩ দিন পরে চিতাবাঘ বের হল গুয়াহাটির পাণ্ডু এলাকায়। চিত্রাচল পাহাড়ের পরে এ বার বাঘ নেমে এল নীলাচল পাহাড় থেকে। জখম হলেন দু’জন। কিন্তু শিলপুখুরির চিতাবাঘকে ঘুম পাড়ানি গুলিতে কাবু করা গেলেও পাণ্ডুর চিতাবাঘ ফের জঙ্গলে লুকিয়ে পড়েছে। দিনভর চেষ্টার পরেও তার সন্ধান মেলেনি।
ঘটনার শুরু আজ সকাল ১০টা নাগাদ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রথম চিতাবাঘটিকে দেখা যায় বিদ্যা নিকেতন স্কুলের সামনের মাঠে। শীত আর কুয়াশার দাপটে মাঠে বসে আগুন পোহাচ্ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা চিতাবাঘ দেখেই হৈচৈ শুরু করেন। ঢিল মেরে চিতাবাঘ তাড়াবার চেষ্টা করেন তাঁরা। ক্ষিপ্ত, ত্রস্ত চিতাবাঘ তখন পাণ্ডু লোকো কলোনিতে ঢুকে পড়ে। জখম হন রতন দাস ও কানু দে। রতনবাবুর কথায়, “বাজার সেরে ফিরে বাইরের দরজায় দাঁড়িয়েছিলাম। মা আমায় বাঘ বেরোবার গল্প বলছিল। আচমকাই মা বাঘ বাঘ বলে চীৎকার করে উঠল। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই পিঠে ভারি কিছু এসে পড়ল। ডান থাইয়ের পিছনে গেঁথে গেল বাঘের থাবা। ডানদিকে পিঠের কাছ চিতাবাঘের মুখ। পলকে ভাবলাম আমারও অবস্থা দিনকয়েক আগে সংবাদপত্রে বের হওয়া ছবির মানুষটির মতো হতে চলেছে। তারপরেই সব জোর সঞ্চয় করে চিতাবাঘের মুখে মারলাম। মার খেয়ে ঝাঁপ দিল সে। আমার বাইকটাকে টপকে চলে যায় শৌচালয়ের দিকে।” জখম রতনবাবুকে প্রথমে বাড়িপাড়া পরে আমিনগাঁও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
অন্য দিকে, রেলগুদামের সামনে ডিম বিক্রি করা কানু দে শীতের দাপটে আজ একটু বেলা করেই বেরিয়েছিলেন। ডিম নিয়ে দোকানে যাওয়ার পথেই মাথার উপরের গাছ থেকে চিতাবাঘ তাঁর উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। থাবার আঘাতে তাঁর কান প্রায় ছিঁড়ে যায়। নখ বসে যায় চোখের নীচে। আক্রমণ থেকে বাঁচতে কানুবাবু চিতাবাঘের মুখে নিজের হাত গুঁজে দেন। হাত চিবিয়ে, লাথি মেরে তাঁকে ফেলে চিতাবাঘ পালায়। গুরুতর জখম অবস্থায় গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শল্যচিকিৎসা বিভাগে ভর্তি আছেন তিনি। আপাতত কানে ১১টি সেলাই পড়েছে। ২১৬ বর্গ কিলোমিটার শহরের মধ্যে ২৬.৪২ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে রয়েছে সংরক্ষিত অরণ্য। কিন্তু পাহাড় কেটে বসতি বানানো ক্রমেই বাড়ছে। এ দিকে কালাপাহাড়, খারগুলি, চিত্রাচল, নীলাচল পাহাড়ে চিতাবাঘের বসতি ক্রমেই কমে আসছে। পাহাড়ে তাদের খাবারের অভাব তৈরি হচ্ছে। ফলে বারবার মানুষের বসতিতে নেমে আসছে চিতাবাঘ। শিলপুখুরির চিতাবাঘটিকে ঘুম পাড়ানি গুলিতে কাবু করে চিড়িয়াখানায় আনা হয়েছিল। পরে তাকে মানস জাতীয় উদ্যানে ছেড়ে আসা হয়। সে দিনের মতোই আজও চিতাবাঘকে ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়তে আসেন পশু চিকিৎসক এম এল স্মিথ। তবে তিনি ও বনবিভাগের দল আসার পরে আর চিতাবাঘটিকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফলে আতঙ্কে রয়েছেন বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, আগামী কালও চিতাবাঘের খোঁজে তল্লাশি চালাতে হবে। যদিও বন দফতর তাতে রাজি নয়। |