মহানগরীর অগ্নি-পরীক্ষা চলিতেছে। কলিকাতাময় অগণিত পেট্রোল পাম্প এবং প্রায় কেহই বিধিনিষেধ মানিবার তোয়াক্কা রাখেন না। পেট্রোল পাম্প হইতে গাড়ির জ্বালানি লইবার কথা। সমস্যা হইল, কলিকাতার পেট্রোল পাম্পগুলি সাধারণ ভাবে গাড়ির সার্বিক দায়দায়িত্বের ভারই গ্রহণ করিয়া থাকে। গাড়ির পরিচ্ছন্নতা রক্ষা হইতে শুরু করিয়া নিশাকালে গাড়িকে আশ্রয়দান পর্যন্ত বিভিন্ন দায়িত্ব। তাহাতে কী ধরনের সংকট হইতে পারে, ক্যামাক স্ট্রিট-এর একটি পেট্রোল পাম্প তাহার সামান্য দৃষ্টান্ত রাখিয়া গিয়াছে। বড় অগ্নিকাণ্ড হয় নাই, সত্য, কিন্তু যে কারণে দহনের সূচনা, তাহা বিবেচনা দাবি করে। পেট্রোল পাম্প-এ দণ্ডায়মান একটি গাড়ি হইতে আগুনের সূত্রপাত। গাড়িটি পেট্রোল গ্রহণ করিবার জন্য দাঁড়ায় নাই। অন্য কারণে দণ্ডায়মান ছিল। অতঃপর, গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি কাজের জন্য পড়িয়া থাকা ‘মোবিল’ হইতে দ্রুতবেগে আগুন ছড়াইয়া পড়ে। গাড়িটি না থাকিলে এই আগুন লাগিত না। প্রশ্ন হইল, এই ঘটনা হইতে মহানগর শিক্ষা লইবে কি?
শিক্ষা লইবার উপাদান বিস্তর। সেগুলি বিশেষ অপরিচিতও নহে। পেট্রোল পাম্প-এ পেট্রোল গ্রহণ ব্যতীত গাড়ির অন্য আরও নানাবিধ কাজ কেন হইবে? কেন পেট্রোল পাম্প কার্যত ‘গ্যারাজ’-এ পর্যবসিত? কেন পেট্রোল পাম্প-এর পরিদর্শনের কাজ যথাযথ ভাবে হইবে না? কেন সমস্ত বিধিকে ফুৎকারে উড়াইয়া ঘনবসতি এলাকার ভিতরে পেট্রোল পাম্প থাকিবে? অগ্নিবিধি মানিবার জন্য যাহা করণীয়, কেন তার কিছুই মানা হইবে না? উত্তর নাই। বরং, উত্তর দাবি করিলে পাল্টা আরও নানা প্রশ্ন, দোষারোপ ইত্যাদির মাধ্যমে সম্পূর্ণ ছবিটিকে গুলাইয়া দিবার একটি বাসনা প্রবল হইয়া উঠে। ‘কেন অমুক ইহা করে নাই’, এই ধরনের প্রশ্ন সঙ্গত হইতেই পারে কিন্তু সেই ওজর তুলিয়া ‘কেন তমুক ইহা করিবে না’, সেই ধরনের অবহেলাকে চাপা দেওয়া চলে না। অথচ, নগরীর অজস্র পেট্রোল পাম্প-এ সেই কুনাট্যটিই চলিতেছে। ক্রমাগত চলিতেছে। যে অঞ্চল ‘বিপজ্জনক’ বলিয়া চিহ্নিত এবং ফাঁকা রাখিবার কথা, সেই স্থান আদপেই ফাঁকা থাকে না। প্রশ্ন তুলিলে এক প্রশ্নের উত্তরে অন্য প্রশ্ন নিক্ষিপ্ত হয়। সব মিলাইয়া সম্পূর্ণ একটি নৈরাজ্যের পরিস্থিতি ঘনাইয়া উঠে।
প্রকৃত প্রস্তাবে, নেতি-র তালিকা বিশাল। ইহা করা উচিত। হয় নাই। উহা থাকা উচিত। তাহা নাই। সমস্ত উত্তরই কেন নঞর্থক, সেই প্রশ্নেরও কোনও উত্তর নাই। আসলে, সবই অজুহাত। বিধি যে মান্য করা হইতেছে না, তাহা দেখিবারও কার্যত কোনও বন্দোবস্ত নাই। যুক্তিটি পরিচিত। এক দিকে লোকাভাব, অন্য দিকে, কাজের পরিমাণ বিপুল। এই ধরনের যুক্তি মানিলে কোনও কর্তব্যই করা হয় না এবং স্থিতাবস্থাকেই মানিয়া লইতে হয়। একই সঙ্গে, জনসমাজও দায়িত্ব এড়াইতে পারে না। যাঁহারা পেট্রোল পাম্প-এ গাড়ি রাখিয়া অবাধে ধূমপান করেন, তাঁহারা কিন্তু অন্য নানাবিধ অর্থে দায়িত্বশীল। প্রাপ্তবয়স্কও বটে। প্রাপ্তমনস্ক কি না, সেই সন্দেহ অবশ্য থাকিতেই পারে। আগুন লইয়া এই খেলাটি অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার। প্রশাসনকে কঠোর হইতে হইবে। জনতাও দায়িত্ববান হউক। |